বইঃ পরিণীতা
লেখকঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
রেটিং – ৫/৫
গুরুচরণের অভাবের সংসার। তার উপর গুরুচরণের স্ত্রী এবার ৫ম কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছে। ষাট টাকা বেতনে ব্যাংকের কেরানীর চাকরি করে সে। সংসারে নিজেরা ৭ জন ছাড়াও রয়েছে তার ১৩ বছর বয়সি ভাগ্নী ললিতা। ললিতা সকলের আদরের। কালো গায়ের বর্ণের মায়া মুখ এবং মিষ্টি আচরন দিয়ে সকলের মন কেড়ে নেয় সে।
গুরুচরণের প্রতিবেশী নবীন রায়ের বাড়িতে তাদের সারাক্ষন যাতায়াত হয়। মুখে মুখে নবীন রায় ভালো আচরন করলেও মনে মনে গুরুচরণের বাড়িটি দখলের ইচ্ছা তার। মেয়ের বিয়ের জন্য গুরুচরণ বাড়িটি বন্ধক রেখে ঋণ নিয়েছিলো নবীন রায়ের কাছ থেকে। নবীন রায় মনে করেন সুদসহ এ টাকা গুরুচরণ শোধ করতে পারবেনা। সুতরাং বাড়িটি সে নিয়ে নিবে।
ললিতাকে নবীনের স্ত্রী ভুবনেশ্বরী মেয়ের মতো আদর করে। ললিতাও তাকে মা বলে সম্বোধন করে। তাদের বাড়িতেই সারাদিন ললিতা থাকে। খাওয়া দাওয়াও করে সেখানে। তার জামা কাপড়ও কিনে দেয় ভুবনেশ্বরী।
আরও পড়ুনঃ বিলাসী গল্প – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
নবীন রায়ের ছোট ছেলে শেখরনাথ। বয়স ২৫-২৬ এবং পেশায় এটর্নি। ললিতা তাদের চোখের সামনেই বড় হয়েছে। শেখরকে সে দাদা বলেই ডাকে। শেখরের কখন কি লাগে না লাগে সব কিছুই খেয়াল রাখে ললিতা। শেখরও তাকে এতই আদর করে যে তার আলমারির চাবি নিয়ে ললিতা যখন তখন প্রয়োজনমত টাকা নিয়ে খরচ করে। অনেকটা যেন ঘরের বউয়ের মতো।
ঘটনাক্রমে ললিতার পরিচয় হয় তার বান্ধবী চারুবালার মামা গিরীনের সাথে। গিরীন বি.এ পাশ এবং অতি ভদ্র ছেলে। সে ধীরে ধীরে ললিতাকে পছন্দ করতে থাকে। গুরুচরণের সকল ঋণ সে পরিশোধ করে দেয়। গিরীনকে তেমন না চিনলেও শেখর তাকে খুব পছন্দ করলো না। বিশেষ করে ললিতার সাথে গিরীনের পরিচয়ের ব্যাপারটা তার ভালো লাগেনি।
শেখরও বুঝতে পারে সে ললিতাকে পছন্দ করে কিন্তু ললিতা বুঝে না। এক রাতে মজার ছলে অনেকটা নিজেদের অজান্তে মালা বদল করে শেখর ও ললিতা। ব্যাপারটা যে খুব গভীর দিকে মোড় নিবে তা কেউই ভাবেনি যখন পর্যন্ত না হঠাৎ একদিন ললিতার মামা হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ব্রাহ্মজ্ঞানী হয় এবং গিরীনের সাথে ললিতার বিয়ের কথা উঠে।
এবার কি করবে তারা? ললিতার মামার ব্রাহ্ম হওয়ার কারনে সে ললিতার সাথে তার “বিয়ের” কথা কাওকে জানানোর সাহস করেনা। ললিতা কি করবে? সে কি মুখ ফুটে সব বলে দিবে? শেষ পর্যন্ত গিরীনের সাথে ললিতার বিয়ে হবে কি?
আরও পড়ুনঃ চরিত্রহীন – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
শরৎচন্দ্রের লেখা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। পরিণীতা বইটিতেও তার অন্য বইয়ের মতো সমাজের উঁচু-নিচু শ্রেনী এবং জাত ভিন্নতা নিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে।
চরিত্রগুলোও নিজ নিজ দিক থেকে সঠিক ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। গল্পের সাথে সাথে প্রধান চরিত্র ললিতাকেও বেড়ে ওঠতে দেখে পাঠকরা। অবুঝ ছোট কিশোরী থেকে বুদ্ধিমত্তা মেয়ে হতে দেখা যায় তাকে।
গল্পের আরেক প্রধান চরিত্র ছিলো শেখর। এ চরিত্রটি প্রধান হলেও আমার মোটেও পছন্দ হয়নি। তার চরিত্রটি ভীতু এবং স্বার্থপর। সে ললিতাকে ভালোবাসার পরেও বার বার তাদের মালা বদলের কথা প্রকাশ পাওয়ার ভয়ে ছিলো। জাত যাওয়ার ভয়ে ললিতার অন্যত্র বিয়ে হবে জেনেও চুপ থেকেছে।
আরও পড়ুনঃ শ্রীকান্ত – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
এ গল্পের অন্যতম চরিত্র গিরীন একেবারেই শেখরের বিপরীত। সে সবসময় নিজ স্বার্থের দিক দেখেনি। ললিতাকে পছন্দ করেছে বলে তার মামার ঋন শোধ করেছে ঠিকই কিন্তু মুখ ফুটে তা প্রকাশ করেনি। গল্পের পরবর্তি অংশে তার নিঃস্বার্থ দিকটি আরো ভালোভাবে দেখা যায়।
শরৎচন্দ্রের কোন বইই তার অন্য বইয়ের সাথে তুলনা করা যায় না। কারন তার প্রত্যেকটি বই নিজ নিজ দিক থেকে সেরা। তবে পরিণীতা বইটি বিশেষ কিছু টুইস্টের কারনে একটু বেশি ভালো লেগেছে।
লিখেছেনঃ Rima Sarmin Radcliffe
বইঃ পরিণীতা [ Download PDF ]
লেখকঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচনা সমগ্র