Skip to content
Home » সহরবাসের ইতিহাস মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় PDF রিভিউ | Manik Bandopadhyay

সহরবাসের ইতিহাস মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় PDF রিভিউ | Manik Bandopadhyay

    সহরবাসের ইতিহাস উপন্যাস মানিক বন্দোপাধ্যায় PDF রিভিউ
    Redirect Ads

    বইঃ সহরবাসের ইতিকথা
    লেখকঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

    মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইতিকথা ট্রিলজির দ্বিতীয় পর্ব হলো ‘সহরবাসের ইতিকথা’ উপন্যাস। যারা লেখকের ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ পড়েছেন তারা নিশ্চয়ই শশীর শহরে বসবাস করার একটা সুপ্ত ইচ্ছার কথা জানতেন। শশীর শহরে বসবাসের গোপন ইচ্ছেটাকেই লেখক ‘সহরবাসের ইতিকথা’ উপন্যাসে পূর্ণ রূপ দিয়েছেন। তবে সহরবাসের ইতিকথা উপন্যাসে একটি স্বতন্ত্র গল্পে সাজিয়েছেন লেখক। শশীর শহরে বাসের ইচ্ছাকে কেন্দ্র করেই লেখক সাজিয়েছেন অন্য চরিত্র দিয়ে অন্য গল্প।

    Download

    ১০৬ পৃষ্ঠার এই ছোট্ট উপন্যাসে লেখক বেশ কিছু উজ্জ্বল চরিত্র এঁকেছেন। ছোট পরিসরে বড় কলেবরের উপন্যাস বলা যায়। সহরবাসের ইতিকথায় কেন্দ্রীয় চরিত্র মোহন। মোহন শহরে একদা পড়াশোনা করতে এসেছিল। কিন্তু এখন সে শহরে পুরোপুরিভাবে বসবাস করতে চায় সপরিবারে। মোহন গ্রাম ছেড়ে শহরে গিয়ে শহরের সংস্কৃতি সভ্যতাকে গ্রহণ করতে চায়, শহুরে শিক্ষিত মানুষের সাথে সখ্য গড়ে তুলতে চায়। ভাই বোনদেরকে একটা সুন্দর জীবন গড়ে দিতে চায়। তারই এই আকাঙ্ক্ষাকে সাথে নিয়ে এগিয়েছে উপন্যাসের মূলধারা। মোহনের বাবা এই শহরেই একটা দূর্ঘটনায় মারা যান। পিতৃহীন মোহনের পরিবারের তার মা, তার স্ত্রী লাবণ্য, ছোট ভাই নাগেনসহ আরো কয়েকজন আশ্রিত মানুষজন রয়েছেন।

    মোহন তার পরিবার পরিজনসহ গ্রামে ছেড়ে শহরে বসবাস করার জন্য প্রস্তুতি নিলে মানুষ তাদের সাথে যুক্ত হয় শ্রীপতি এবং পিতাম্বর। এরা দুজনেই মোহনের কোন আত্মীয় আশ্রিত কেউ হয় না। শ্রীপতি মোহনের গ্রামের একজন দিনমজুর যে কারখানায় কাজ করে উপার্জন করে কোনরকমে তার স্ত্রী কদম আর একগাদা ছেলেমেয়েকে নিয়ে সংসার চালায়। সে চায় শহরে গিয়ে বেশি উপার্জন করার একটা উপায় করতে। তাই মোহনের এই দয়াটুকু চায়। অন্যদিকে পিতাম্বররের পূর্বপুরুষের সাথে মোহনের পূর্বপুরুষের একটা বন্ধুত্বের যোগসূত্র ছিল এককালে। সেটাকে পুঁজি করেই পিতাম্বর মোহনের কাছে দাবি নিয়ে এসে দাঁড়ায়। কিন্তু সে কখনোই তার দুর্বলতাটুকু প্রকাশ করতে চায় না।

    আরও পড়ুনঃ পুতুল নাচের ইতিকথা – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

    অন্যদিকে শহরে রয়েছে মোহনের বন্ধু চিন্ময়, চিন্ময়ের ছোটবোন ঝরণা এবং বন্ধুপত্নী সন্ধ্যা। সন্ধ্যা মোহনের কাছে শুধুই বন্ধুপত্নী নয় তারা নিজেরাও ভালো বন্ধু। চিন্ময়ই মোহনকে শহরে বাসের জন্য সহায়তা করে। কিন্তু সে নিজে পছন্দ করে গ্রাম। চিন্ময়ের সহয়তায় শহরে যে বাড়িতে মোহন বাস শুরু করে সে বাড়ির মালিক জগদানন্দ। এই জগদানন্দ চরিত্রটিও এই উপন্যাসে বেশ উজ্জ্বল একটা চরিত্র। জগদানন্দ শহরকে মন থেকে ভালোবাসেন। তিনি শহরটাকে শুধু সুযোগ সুবিধা দিয়ে চিন্তা না করে পারলাম থেকে ভালোবাসেন। সেই ভালোবাসার সপক্ষে তার রয়েছে হাজারো যুক্তি। জগদানন্দের চিন্তাভাবনা শহর নিয়ে পাঠককে নতুন করে ভাবতে শেখায়।

    Download

    এই উপন্যাসে লেখক বেশ কিছু পয়েন্টকে জোরালোভাবে উপস্থাপন করেছেন। মানিক বরাবরই তার লেখায় নারী-পুরুষের প্রেমের সূচনার মুগ্ধতা, মোহনিয়তারও গভীরে গিয়ে সুক্ষ্ম কিছু জটিল মনস্তাত্ত্বিক দিক তুলে আনেন। এই উপন্যাসেও তেমনই সন্ধ্যা, চিন্ময় আর মোহনের মনের বেশ কিছু জটিল দিক দেখা যায়। চিন্ময় সন্ধ্যাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে। কিন্তু কোথায় যেনো সুর কেটে গেছে। চিন্ময়ের একটা আত্মদ্বন্দ্ব সন্ধ্যাকে বিয়ে করার পূর্বেই ছিলো। সে সন্ধ্যাকেই ভালোবাসে। কিন্তু আবার কল্পনা করে সন্ধ্যা যদি মোহনের স্ত্রী লাবণ্যের মতো অপরিচিতা হতো, গ্রামের সহজ সরল কোন মেয়ে হতো! সম্বন্ধ করে বিয়ে হত। আত্মদ্বন্দ্ব নিয়েই সে সংসার শুরু করেছিলো। কিন্তু বিয়ের পরে পরিস্থিতি আরো পাল্টে যায়‌। চিন্ময় আর সন্ধ্যায় চাওয়া এক জায়গায় মিলতে পারে না। অন্যদিকে সন্ধ্যার অভিযোগ চিন্ময় তাকে ভালোবাসে, কিন্তু এই ভালোবাসা তার কাছে দম বন্ধ লাগে। এছাড়াও তার কিছু অভিযোগ আছে, তার কথা চিন্ময় প্রেমের সম্পর্কে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো বিয়ের পরে সেসব প্রতিশ্রুতি বেমালুম ভুলে গেছে অথবা এগুলোকে চিন্ময় তুচ্ছ করে এখন। সন্ধ্যা নিজের অধিকার নিয়ে একটা লড়াই করতে চায়। লেখক এই চরিত্রটিকে কিছু জায়গায় স্বাধীনচেতা হিসেবে দেখালেও তার ভেতরে আর্থিক স্বাধীনতার কোন তাগিদ দেননি। অর্থনৈতিক মুক্তি ছাড়া কি আদৌ কোন স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখা যায়!!

    চিন্ময় সন্ধ্যা দুজনেরই বন্ধু মোহন। তাদের এই দুর্দিনে সন্ধ্যা মোহনকে পাশে চেয়েছিলো। কিন্তু মোহন ছিলো না। মোহনের শহরে বাস শুরু হলে সন্ধ্যা তার নিঃসঙ্গতায় মোহনকে বন্ধু হিসেবে চায়। কিন্তু মোহন ভেতরের সুপ্ত একটা সত্যকে টের পেতে শুরু করে। আর বুঝতে পারে শহরে এসে তার এই সুপ্ত অনুভূতি আর সুপ্ত অবস্থায় থাকছে না। কিন্তু থাকে যে এখানে হার মানতেই হবে। মোহনের কাছে সন্ধ্যাকে সন্ধ্যার মতো করেই ভালো লাগে। কিন্তু তার শিক্ষিতা গাঁয়ের স্ত্রী লাবণ্যকে যেনো‌ আরেকটু বুদ্ধীমতি। এখানে সন্ধ্যা আর মোহনের সম্পর্কে একটা জটিলতা তৈরি হয়। দুজন দুজনকে দুইভাবে ভালোবাসে। কিন্তু এই জটিলতাকে তারা সহজভাবেই নিয়েছে।

    আরও পড়ুনঃ পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাস রিভিউ PDF মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

    মানিকের বেশিরভাগ লেখায়ই মার্কসবাদের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। সহরবাসের ইতিকথা উপন্যাসসেও এই দিকটি ফুটে উঠেছে। শ্রীপতি মে মোহনের দয়া চেয়ে মোহনের সাথে শহরে এসে মোহনেরই বাড়িতে দুবেলা অন্ন খেয়ে তার বাড়িতে বসবাস করছিলো, মোহনের প্রচেষ্টায় এক জায়গায় কাজ জুটেছে। সেই শ্রীপতিরই একসময় আত্মসম্মানবোধ উদয় হয়। সে হিসেব করতে শিখেছে কিসের বিনিময়ে কি নিচ্ছে অথবা কোথায় ঠকে যাচ্ছে।

    Download

    পুতুল নাচের ইতিকথায় তেমন চরিত্রগুলোর মনস্তাত্ত্বিক বিবর্তন হয়। তেমনই এই উপন্যাসেও বেশ কিছু চরিত্রের মনস্তাত্ত্বিক বিবর্তন লষ্য করা যায়।

    তেমন শ্রীপতি তার রেখে আসা স্ত্রী কদমকে প্রচন্ড ভালোবাসে বারবার তার কাছে ফিরে যেতে চায়। কদমের প্রতি মায়া কাটাতে একসময় মোহনের ড্রাইবার জ্যোতির সাথে করে গিয়ে গণিকালয়ে উঠে। কিন্তু এতেও তাঁর মন টেকে না। একসময় সে গণিকা দূর্গার তার প্রতি টান লক্ষ্য করে। এতে করে সে নতুন করে আরেকটা জিনিস আবিষ্কার করে। তার জন্য কোন নারী অকূল হয় সেটা ভাবতেই সে নিজেকে পুরুষ হিসেবে চিনতে পারে। কদম তো থাকে কোনদিন ভালোবাসার কথা বলেনি। কেবল স্ত্রী হিসেবে কর্তব্য করে গেছে। এই উপলদ্ধিও শ্রীপতির ভেতরে এক পরিবর্তন আনে। সে কদমের সঙ্গ পেতে।আর আগের মতো আকূল হয় না। নিজেকে বেশ ধীর স্থির করে নেয়।

    পিতাম্বরও শহরে এসে বেশ বদলে যান। নিজের কাজ নিজে জুটিয়ে নিয়েছেন। গ্রাম্য কথার চাল ছেড়ে দিয়ে প্রয়োজনীয় কথাটুকু বলতে বা চুপ করতে আয়ত্ব করেছেন। তাই তো মোহন বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলায় তিনি চুপচাপ সময়ের‌ আগেই না জানিয়ে চলে গেছেন। পিতাম্বরের দৃঢ় প্রত্যয়, একার সংগ্রাম, আত্মসম্মানবোধ পাঠকদের মনে সহজেই জায়গা করে নেয়।
    শহরে এসে কিছুদিন পরেই মোহন ভুগে অন্তর্দ্বন্দ্বে। সে যা চেয়েছিলো, মে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে শহরে এসে উঠেছিল তার কিছুই যেনো হচ্ছে না। বরং শহরে এসে সবাই যেনো বদলে যাচ্ছে। মাও কেমন তার ছোট ভাইকে নিয়ে গোপন পরামর্শ করেন। তাকে দূরে ঠেলে দিয়েছেন। সে না চাইলেও ভাইবোনেরা দূরে সরে যাচ্ছে। এই দোলাচলে সে বুঝতে পারে না শহরে আসাটা কি ঠিক হলো নাকি ভুল হলো তার। সর্বোপরি মোহন চরিত্রটা ভালো লেগেছে। তার বিবেকবোধ, সংযত চিন্তা, আত্মসমালোচনা সবমিলিয়ে এক চমৎকার ব্যক্তিত্ব।

    মানিকের লেখা পড়লে পাঠকের মনে কিছু চিন্তার খেলা খেলে যায়। বই শেষ হলেও পড়ার রেশটুকু
    থেকে রায় অনেকক্ষণ। পুতুল নাচের ইতিকথা তেমন মুগ্ধ করেছিলো, এই সহরবাসের ইতিকথা উপন্যাসও তেমনই উপভোগ্য ছিলো আমার কাছে। কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আপনার বইপড়ার জন্য শুভ কামনা রইল।

    Download

    লিখেছেনঃ Taslima Islam

    বইঃ সহরবাসের ইতিহাস [ Download PDF ]
    লেখকঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

    ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

    বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত

    Facebook Comments
    Tags:
    x
    error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করুন