বই – বড়দিদি
লেখক – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
রেটিং – ৩.৫/৫
সুরেন্দ্রনাথ মায়ের অতি আদরের ছেলে। ছেলের লেখাপড়া হতে শুরু করে খাওয়া দাওয়া এমনকি থুথু ফেলাও তার নজরে থাকতো। মায়ের অতিরিক্ত আদরের কারনেই পরনির্ভরশীল হয়ে বড় হয় সুরেন্দ্র। নিজের প্রতি তার আত্মবিশ্বাস নেই বললেই চলে। ক্ষুধা, ঘুম কোন কিছু সুরেন্দ্র নিজে বুঝে না।
আরও পড়ুনঃ শ্রীকান্ত – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
এম এ পাশ করার পর এক বন্ধুর বুদ্ধিতে বাবার কাছে বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে সুরেন্দ্র। কিন্তু এই অকর্মা ছেলে বিদেশ গিয়ে যে কিছু করতে পারবেনা এই ভেবে তিরস্কার করে তার বাবা। এরপরে সে রাগ করে ঘর ছেড়ে কলকাতার ট্রেনে উঠে পরে আর তাকে যেন না খোঁজ করা হয় তা চিঠিতে লিখে দিয়ে আসে।
বাস্তবতা কি জিনিস এরপর হাড়ে হাড়ে টের পেতে শুরু করে সে। আশ্রয়, ক্ষুধা, ঘুম কি জিনিস বুঝতে পারলো… অবশেষে এক লোকের পরামর্শে কাজের সন্ধানে এক জমিদারবাড়ি এসে পৌঁছে। জমিদার বজ্ররাজবাবু সুরেন্দ্রকে ছোট মেয়ে প্রমীলার গৃহশিক্ষক হিসেবে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন।
আবারো ঘরের আদর আপ্যায়ন পাওয়া শুরু করলো সুরেন্দ্র। বাড়ির চাকররা “বড়দিদি” -র আদেশে তার পোশাক, খাওয়া, গোসল, ঘুম সব কিছুর খেয়াল রাখতো। কিন্তু কে এই বড়দিদি? সুরেন্দ্র তার দেখা পায়না। শুধু নাম শুনে যায়…
আরও পড়ুনঃ বিলাসী গল্প – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
এ উপন্যাসটি শরৎচন্দ্রের অন্য উপন্যাসগুলো থেকে অনেক ভিন্ন। আবার অনেকটা অগোছালোও, ঠিক সুরেন্দ্রের মতো। তবে তার লেখা পড়তে সবসমই ভালো লাগে।
সুরেন্দ্রের চরিত্রটি খুবই অদ্ভুতরকমের ছিলো। তাই বিরক্তিকর লেগেছে। তবে মাধবী বা “বড়দিদি” -র চরিত্রটি ভালো লেগেছে। শরৎচন্দ্রের আর সব নারী চরিত্রের মতোই মায়াবী সে।
তবে তার অন্যান্য বইয়ের মূল চরিত্রগুলোর মাঝে যে কেমিস্ট্রি পাওয়া যায় এ বইটিতে তা মোটেও অনুভব হয়নি।
আরও পড়ুনঃ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত
বই – মেজদিদি
লেখক – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
ব্যক্তিগত রেটিং – ৩.৫/৫
সদ্য মা হারানো কেষ্টর বয়স চৌদ্দ। নিজ গ্রামে তাকে দেখাশোনা করার আর কেউ নেই। কিন্তু সকলের পরামর্শে সৎবোন কাদম্বিনীর বাড়িতে চলে যায়। কাদম্বিনী কেষ্টর সম্পর্কে আগে জানত না। তাই পরিচয় পেয়ে কেষ্টর মৃত মাকে গালিগালাজ করতে থাকে। প্রথম কেষ্টকে তাড়িয়ে দিতে চাইলেও পরে গ্রামের লোকজনের কথায় তাকে আশ্রয় দেয়।
আশ্রয় পেয়েও শান্তি পায়না কেষ্ট। সারাদিন তাকে খাটিয়ে কদম্বিরী যে খাবার খেতে দেয় তা দিয়ে তার ক্ষুধা মেটে না। তার উপর কারনে অকারনে মারধর তো আছেই। কিন্তু চুপ করে সব মাথা পেতে নেয় সে।
তখনই কেষ্টকে মায়ের স্নেহ দিয়ে বুকে তুলে নেয় কাদম্বিনীর মেঝো-জ্বা হেমাঙ্গিনী। কিন্তু এতে দুই পরিবারের মধ্যে আরো অশান্তি বাড়তে থাকে।
এভাবেই এগিয়ে যায় গল্প…….
আরও পড়ুনঃ বিন্দুর ছেলে – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
শরৎচন্দ্রের লেখা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে এ পর্যন্ত তার লেখা যে কয়টি বই পড়েছি তার মধ্যে এটি ভিন্ন। অনেকটা “রামের সুমতি”র মতো। মাত্র ৩০-৩৫ পৃষ্ঠার মধ্যে সম্পর্কের উঠন পতন ও আবেগসমূহ চমৎকার ভাবে তুলে ধরেন লেখক। তবে শেষটা হঠাৎ চলে আসে আর এ ব্যাপারটি মাঝে মাঝে বিরক্ত লাগে।
লিখেছেনঃ Rima Sarmin Radcliffe
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচনা সমগ্র