বইয়ের নাম- সাত সাগরের মাঝি
জনরা- কবিতা
কবি- ফররুখ আহমদ
মুল্য- ১০০
মোট কবিতা- ১৯ টি
ফরররুখ আহমদ চল্লিশের দশকে আবির্ভূত একজন শক্তিশালী কবি। তাকে বলা হয় ‘মুসলিম রেনেসাঁর কবি’। তাঁর কবিতায় বাংলার অধঃপতিত মুসলিম সমাজের পুনর্জাগরণের অণুপ্রেরণা প্রকাশ পেয়েছে বারংবার। তাঁর কবিতা ইসলামী ভাবধারার বাহক হলেও কবিতার প্রকরণকৌশল, শব্দচয়ন এবং বাকপ্রতিমা নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। এবং আধুনিকতায় পরিব্যাপ্ত। এই কবির কবিতা রোমান্টিকতা থেকে আধুনিকতায় উত্তরণের ধারাবাহিকতা পরিস্ফুট।
১৯৪৭ সালে প্রকাশিত “সাত সাগরের মাঝি” কবি ফররুখ আহমদের অন্যতম কাব্যগ্রন্থ। বইয়ের ১৯টি কবিতার মধ্যে নামকবিতা “সাত সাগরের মাঝি” সহ উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পাঞ্জেরী, সিন্দবাদ, আকাশ-নাবিক, ডাহুক, এই সব রাত্রি প্রভৃতি। বইটি উৎসর্গ করা হয়েছিলো কবি আল্লামা ইকবাল সমীপে।
ইসলামী ঐতিহ্যের পুনরুজ্জীবনে বিশ্বাসী এই কবির কবিতায় প্রধানত প্রকাশ ঘটেছে ইসলামী আদর্শ ও জীবনবোধের। ইসলামের হারানো ঐতিহ্য নিয়ে তিনি লিখেছেন এই কাব্যের নাম কবিতা “সাত সাগরের মাঝি”।
আরও পড়ুনঃ মা উপন্যাস ম্যাক্সিম গোর্কি PDF রিভিউ | পুষ্পময়ী বসু
একসময় ইসলামের জয়-জয়কার ছিলো চারদিক। কিন্তু সেই ইসলামের ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। আর এ থেকে উত্তোরনের জন্য যোগ্য নেতৃত্ব দেবার জন্য সুযোগ্য নেতা প্রয়োজন। কবি তার কবিতায় রূপক আশ্রয়ে সেই নেতাকে মাঝি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। একজন দক্ষ মাঝি যেমন বিক্ষুব্ধ সাগরে নিজের নৌকা সামলিয়ে তীরে পৌছায় তেমনি একজন সুযোগ্য নেতা ইসলামের এই দুঃসময়ে যেন ইসলামের খুটি নিয়ে দাড়ায়। সে যেন এই মুসলিম জাতিকে বিপদ সংকুল অবস্থা থেকে উদ্ধার করে।
পিছিয়ে পড়া মুসলমানকে তিনি এগিয়ে যাবার মন্ত্রনা দেন।
“দুয়ারে তোমার সাত সাগরের জোয়ার এনেছে ফেনা।
– সাত সাগরের মাঝি
তবু জাগলে না? তবু তুমি জাগলে না?
সাত সাগরের মাঝি চেয়ে দেখো দুয়ারে ডাকে জাহাজ।”
কবি মুসলিম জাতিকে তার অতীত ঐতিহ্যের কাহিনী শুনিয়ে তাকে জেগে উঠতে বলেন। জড়তা, অলসতা ও দূর্বলতা যা মুসলিমকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে তা থেকেও জেগে উঠতে আহ্বান জানাচ্ছেন।
“দেখবে তোমার কিশতী আবার ভেসেছে সাগর জলে,
– সাত সাগরের মাঝি
নীল দরিয়ার যেন সে পূর্ণ চাঁদ”
এই কাব্যের মোট ঊনিশটি কবিতায় কবি যেমন মুসলিম ইতিহাসের অতীত ঐশ্বর্যের কথা বলেছেন, তেমনি এই ভঙ্গুর অবস্থায় জ্বলে উঠতেও বলেছেন, আবার বর্তমান ইসলামের যে অবস্থা তাও নিজ অবলোকন দ্বারা বর্ণনা এবং সমবেদনা প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুনঃ হ্যামলেট শামসুর রাহমান PDF রিভিউ | উইলিয়াম শেক্সপিয়ার
অতীতের মুসলমানদের মধ্যে যে কর্মচঞ্চল, প্রাণোচ্ছল জীবন ছিলো তার ঐশ্বর্যময় রূপ ফুটিয়ে তুলেছেন, “সিন্দাবাদ”, “বারদরিয়া”, “দরিয়ার শেষ রাত্রি”, “বন্দরে সন্ধ্যা” কবিতায়।
“ছিড়ে ফেলো আজ আয়েশী রাতে মখমল অবসাদ
– সিন্দাবাদ
নতুন পানিতে হাল খুলে দাও হে মাঝি সিন্দাবাদ”।
অতীত গৌরবের অধীকারী মুসলমানদের এখনকার অবস্থা জীর্ণ প্রায় । আর এই অবস্থার পিছনে কে বা কারা দায়ী এবং এই জীর্ণ অবস্থা থেকে উদ্ধারের আকুতি প্রকাশ পেয়েছে – “আকাশ-নাবিক”, “স্বর্ণঈগল”, “তুফান”, “এই সব দিনরাত্রি” , “পাঞ্জেরী”, “পুরোনো মাজার” কবিতায়।
“জাগো বন্দরে কৈফিয়তের তীব্র ভ্রুকুটি হেরি
– পাঞ্জেরী
জাগো অগনন ক্ষুধিত মুখের নীরব ভ্রুকুটি হেরি
দেখ চেয়ে দেখ সূর্য ওঠার কত দেরী, কত দেরী!”
মুসলমানদের এই অধঃপতনের মুলে রয়েছে ইসলাম আদর্শ থেকে বিচ্যুতি। একজন মুসলমান হিসেবে নিজের দায়িত্ব কর্তব্য বিস্মৃতি। এই অবস্থা কাটিয়ে উঠবার উপায় হলো, পুণরায় ইসলাম আদর্শে উজ্জীবিত হওয়া। কবির এই সংকল্প প্রকাশ পেয়েছে, “হে নিশানবাহী, নিশান, নিশান বরদার, “সাত সাগরের মাঝি” কবিতায়।
“তবে পাল খোলো, তবে নোঙর তোলো
– সাত সাগরের মাঝি
এবার অনেক পথ শেষ সন্ধানী।
হেরার তোরণ মিলবে সমুখে জানি”
আরও পড়ুনঃ সোজন বাদিয়ার ঘাট PDF রিভিউ | জসিম উদ্দিন
মানুষের দুঃখ দুর্দশা প্রত্যক্ষ করে কবি এসবের জন্য দায়ী করেছেন জড়বাদী সভ্যতাকে। এই সভ্যতাকে ধিক্কার জানিয়েছেন “লাশ” ও “আওলাদ” কবিতায়।
“মানুষের হাড় দিয়ে তারা আজ গড়ে খেলাঘর
– লাশ
সাক্ষী তার পরে আছে মুখ গুঁজে ধরনীর পর”
“আমি দেখি পথের দুধারে ক্ষুধিত শিশুর শব
– আওলাদ
আমি দেখি পাশে পাশে উপচিয়া পড়ে যায় ধনিকের গর্বিত আসর”
ঐতিহ্য আর প্রেমের রোমান্টিক স্বপ্নকল্পনার প্রকাশ ঘটিয়েছেন “শাহরিয়ার” ও “ঝরোকা” কবিতায়।
“আমার ব্যথিত আত্মা আর্তনাদ করে উঠলো
– ঝরোকা
দাউদের পুত্র সোলায়মানের মতো
কেননা দ্বিধা -দ্বন্ধের আকাশ আছে পৃথিবীতে
চিরন্তন শুধু সত্যের অন্বেষা।”
আরও পড়ুনঃ বনলতা সেন কাব্যগ্রন্থ PDF রিভিউ জীবনানন্দ দাশ
ডাহুক কবিতায় রোমান্টিক কবিচিত্তের মুক্তি, আবেগ, বেদনা, অতৃপ্তি প্রকাশ পেয়েছে।
“রাত্রিভর ডাহুকের ডাক
– ডাহুক
এখানেট ঘুমের পাড়া, স্তব্ধ দিঘী অতল সুপ্তির
দীর্ঘ রাত্রি একা জেগে আছি।”
সাত সাগরের মাঝি কাব্যে ইসলামের পুনর্জাগরণের বাণী উচ্চারিত হয়েছে।কবির বিশ্বাস, ইসলাম একটি শাশ্বত কল্যাণকর মানবিক আদর্শ -যা সব যুগে সকল দেশে মানুষের জীবন সমস্যা সমাধানে সহায়ক। এই কাব্যে বস্তুত কবি আমাদের নতুন এবং শিল্প সৌন্দর্যমন্ডিত কাব্যবস্তু উপহার দিয়েছে। ইসলামের ভবিষৎ উজ্জ্বল কামনায় স্বপ্ন দেখেছেন প্রতিনিয়ত।
লিখেছেনঃ ফেরদৌসি রুমী
বইঃ সাত সাগরের মাঝি [ Download PDF ]
লেখকঃ ফররুখ আহমদ
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
ফররুখ আহমদ রচনাবলী PDF Download করুন