বইঃ বনলতা সেন
লেখকঃ জীবনানন্দ দাশ
এক বিমূঢ় যুগের বিভ্রান্ত কবি জীবনানন্দ!!
নির্লিপ্ততা আর অগোচরে থাকা যার চির স্বভাব সেই নির্লিপ্ততাই তাকে দিয়েছে অনন্য এক ব্যক্তি সত্তা। বলছি ইতিহাসের সেই কবির কথা জীবদ্দশায় যার প্রায় সমবয়সী এবং সমসাময়িক কবি নজরুলের একচুল পরিমাণও খ্যাতি এবং গ্রহণযোগ্যতা’তো ছিলই না বরং কুড়িয়েছে সমালোচকদের অঘোর পিছুটান। কবি হওয়ার আশায় যিনি কবিতা লিখেননি তাকে কি কোনো সমালোচক দিকহীন, বিদিশার কবিতে রুপান্তরিত করতে পারে!!!!
তাইতো তিনি হয়ে উঠেছেন একবিংশ শতাব্দীর তরুনদের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও পঠিত কবি।
মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়া কবির দুই একটি কবিতার মধ্যে ‘সেই দিন এই মাঠ’ কবিতার শেষের ৪/৫ লাইন হৃদয়কে আন্দোলিত করেছিল।
প্রিয় কবি কে? – এমন প্রশ্নে দ্বিধাহীন ভাবে হৃদয় থেকে তখন থেকে একটা নামেরই দিশা পেতাম। দিশা বেদিশার ভিরে যিনি চিনিয়েছেন কল্পনা কতো গভীর হতে পারে, পার্থিবতা ছাড়িয়ে অনেক দূর, সিংহল সমুদ্র হতে মালয় সাগরে।
আরও পড়ুনঃ জীবনানন্দ দাশের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ঝরা পালক PDF রিভিউ
ভাবনার ভাবনায় হারিয়ে যেতে কবির কোনো একটি কাব্যগ্রন্থের কোনো একটি কবিতার কোনো একটি পঙক্তির একটি মাত্র শব্দকে ঢের যথেষ্ট বলে ভাবলে ভুল যে হবে না তা কবি ভক্তদের ভালো করে জানা। গ্রীস্মের দুপুরবেলা পাবলিক বাসে ৩২° তাপমাত্রায় স্নিগ্ধ কোয়াশার চাদর জড়িয়ে সমুদ্রের পাড়ে হাটার সময় সমুদ্রফেনা হতে বিচ্ছুরিত দুই-একটা লবনাক্ত পানির ফোটা আপনার গায়ে পরতেই আপনি শিহরিত হলেন, কিন্তু তখনও আপনি ৩২’ তাপমাত্রাতেই বাসে বসে আছেন, চোখ বুলাচ্ছেন ‘নির্জন তম’ কবির লেখা এক একটা মহাকাব্য সমান শব্দের পর শব্দে।
আইন্সটাইন বলেছিল, “Imagination is everything”
আর কবি বলেন, “Life is full of imagination”
তাইতো মৃত্যুর বহু বছর পর (১৯৯৮) কবির রহস্যঘন জীবন নিয়ে বিদেশি লেখকরা New York থেকে বই বের করে (গুগুল করে জানতে পারি)। জীবদ্দশায় যিনি তার ঘোর সমালোচক ছিলেন মৃত্যুর পর তিনি তার জীবন নিয়ে গবেষণা করেন (নামটা ভুলে গেছি, গুগুল করে জানতে পারি)।
আরও পড়ুনঃ জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা সমগ্র PDF রিভিউ
বনলতা সেন
” বনলতা সেন ” কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা ‘বনলতা সেন’ শতাব্দী আলোচিত কবিতাদের মধ্যে প্রথম সারিতে নির্দ্বিধায় জায়গা করে নিবে। বলা বাহুল্য প্রথম পড়াতে আপনি কবিতাটিতে কিছুই খুঁজে পাবেন না। যেমন পাইনি আমি অধম।না পাওয়ারও কারন রয়েছে। যেমন: বিখ্যাত চিত্রকর্ম মোনালিসাতে আপনি হুড করেই সৌন্দর্য দেখতে পাবেননা, তবুও তা জগদ্বিখ্যাত এর একমাত্র কারণ অতি সৌন্দর্য সহজে চোখে ধরা দেয় না তা অনুভব করতে হয়।
কবিতাটিতে আপনাকে কল্পনার উপর প্রবল জোর দিতে হবে, হারিয়ে যেতে হবে “বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে” কিংবা ” আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে”।
” কুড়ি বছর পরে ” কবিতাটি ছিল পঠিত কাব্যগ্রন্থের ২য় কবিতা। গভীর কল্পনায় হারানো প্রিয়জনের সাথে হঠাৎ কড়িটা বছর পর নিজেকে আবিষ্কার করার তীব্র প্রয়াস ছিল কবিতাটিতে, পেরেছে হয়তো।
দুইটা লাইন উল্লেখ করা যেতে পারে, –
“জীবন গিয়েছে চলে আমাদের কুড়ি বছরের পার-
তখন হঠাৎ যদি মেঠো পথে পাই আমি তোমারে
আবার”
আরও পড়ুনঃ জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে তাঁর স্ত্রী লাবণ্য দাশ এর লেখা বই “মানুষ জীবনানন্দ”
“বনলতা সেন” কাব্যগ্রন্থটি নিঃসন্দেহে প্রেম নির্ভর কিন্তু কবি কেমন জানি প্রকৃতির সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ফেলেছেন প্রত্যেকটা কবিতা, বিষয়টি অনুভবে যেকোনো পাঠকের হৃদয় ছুয়ে যাবে।
“দুজন” কবিতায় একটি লাইন আগেও কোথায় শুনেছিলাম মনে হচ্ছিল, কিন্তু তা যে কবিরই সৃষ্টি তা প্রথম জানলাম। লাইনটি এমন,-
“”প্রেম ধীরে মুছে যায়, নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়””
প্রিয় কবিকে নিয়ে লিখলে লিখা যাবে অশেষ। নিজের মতো করে রিভিউ টা দেওয়ার চেষ্টা করলাম। বানানে আমি বরাবরই কাচা, এই দিকটা মার্জিত চোখে দেখবেন।
লিখেছেনঃ Bijoy Debnath
বইঃ বনলতা সেন [ Download PDF ]
লেখকঃ জীবনানন্দ দাশ
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
জীবনানন্দ দাশ রচনাবলী PDF ডাউনলোড করুন