বই : ইউরোপ প্রবাসীর পত্র
লেখক : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
প্রকাশ কাল : ১৮৮১
শুরু কথা:
শক্তিমান সাহিত্যিকদের ভ্রমণ কাহিনী শুধু কাহিনী নয় এ যেন এক একজন যথার্থ শিল্পীর শব্দ তুলিতে আকা অসাধারণ তৈলচিত্র। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র নামক ভ্রমণ গ্রন্থটিও ঠিক তেমনই৷ মজার ব্যাপার হলো রবীন্দ্রনাথ যখন প্রথম ইউরোপ ভ্রমণ করেন এবং এ লেখাটি লেখেন তখনো তিনি যথার্থ কবি কিংবা সাহিত্যিক হয়ে উঠেননি৷ তার দুয়েকটি কবিতার বই প্রকাশিত হলেও গদ্যের কোন বই তখনো প্রকাশিত হয়নি৷ ১৮৬১ সালে জন্ম নেয়া রবি মাত্র সতের বছর বয়সে ১৮৭৮ সালে উচ্চতর পড়াশোনার উদ্দেশ্যে বিলাত (লন্ডন) যাত্রা করেন৷ সেই সতের বছর বয়সেই তিনি কোন স্বজনকে পত্রাকারে তার ভ্রমণ বৃত্তান্ত লেখেন৷ সেই পত্রই বই আকারে প্রকাশিত হলো এবং সাহিত্যে স্থান করে নিলো৷ উপরোক্ত পত্রগুলো পড়লে সতের বছরের কিশোরের বলে মনেই হয় না; তাঁর তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ শক্তি ও বিশ্লেষণের পরিপক্কতা দেখে রীতিমত পরিণত মানুষের রচনা বলে মনে হয়। বর্তমানে এই গ্রন্থ অনার্সে পাঠ্যভূক্ত রয়েছে৷
কাকে উদ্দেশ্য করে চিঠি লেখেন?
য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র গুচ্ছ রবীন্দ্রনাথ কাকে লিখেছিলেন তার সঠিক তথ্য রবীন্দ্র গবেষকদের পক্ষে বের করা সম্ভব হয়নি। কারো কারো মতে এগুলো তাঁর বৌঠাকুরাণী কাদম্বরী দেবীর উদ্দেশ্যে লিখিত। অনেক গবেষক এ কথার সাথে দ্বিমত করেছেন৷ কারো কারো মতে তিনি জ্যেষ্ঠভ্রাতা দ্বিজেন্দ্রলালকে লিখেছিলেন৷
লেখা প্রকাশ ও প্রতিক্রিয়া:
লেখাটির সূচনা হয়েছিল জাহাজে থাকতেই আর শেষ হয়েছিল ব্রাইটনে পৌঁছাবার পর। ইউরোপ গমনের প্রায় এক বছর পর এটি কবির জ্যেষ্ঠভ্রাতা দ্বিজেন্দ্রলাল ঠাকুরের সম্পাদিত ‘ভারতী’ পত্রিকায় ‘য়ুরোপ-প্রবাসী কোনো বঙ্গীয় যুবকের পত্র’ শিরোনামে নিয়মিত ছাপা হয়েছিল। কিন্তু কয়েকটি পত্র ছাপার পরে এটি বেশ বিতর্ক সৃষ্টি করে। বিশেষ করে কবির পিতা দেবেন্দ্রনাথ এটি সুনজরে দেখেননি। শেষ পর্যন্ত পত্রিকায় তার পত্র ছাপা বন্ধ করে দেয়া হয়। যে কারণে এ গ্রন্থে তাঁর ইউরোপ প্রবাসের শেষটা অজানা থেকে যায়। কবি মোট তেরটা পত্র পাঠিয়েছিলেন৷ এর মধ্যে দশটি ছাপা হয়েছিলো৷
আরও পড়ুনঃ কমলাকান্তের দপ্তর PDF বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
এ ভ্রমণ কাহিনীর বিশেষত্ব:
এই গ্রন্থটি পাঠককে নিয়ে যাবে দেড়শত বছর আগেকার বিলেতে। আমরা শুধু যাত্রাপথের বর্ণনা নয়, সে সব দেশের রীতিনীতি, সামাজিক প্রথা ও অন্যান্য নানা বিষয় সম্বন্ধে জানতে পারি। একজন সম্পূর্ণ পর্যটকের ন্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অবলোকন করেন তৎকালীন ইংল্যান্ডের জীবন ব্যাবস্থা, সেখানকার পরিবেশ ও প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও লোকাচার। লেখার পরতে পরতে পাওয়া যাবে গভীর ও তীক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন। লেখার পুরোটা জুড়ে দেখা যায় তৎকালীন সময়ের দুই ভিন্ন সমাজের তুলনামূলক চিত্র। শতরকমের ব্যাঙ্গাত্মক বিবরণ আর রসালো উক্তি দিয়ে সাজানো এ ভ্রমণসাহিত্য য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র। যেমন, ইঙ্গবঙ্গদের কথা কিংবা ‘এবার মলে সাহেব হবো’ গানটি৷ এ বইটি কবির প্রথম গদ্য গ্রন্থ এবং প্রথম চলিতরীতির লেখনী৷ পুরো লেখায় তিনি বিভিন্ন ব্যক্তিদের নাম সাংকেতিক অক্ষরে প্রকাশ করেছেন৷ রবীন্দ্র গবেষকদের অনেকেই কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছেন।
পরবর্তীতে বই প্রকাশ:
লেখকের পাঠানো তেরটি পত্রের মধ্যে পত্রিকায় ছাপা হওয়া দশটি পত্র নিয়ে ১৮৮১ সালে কবির প্রথম গদ্যে বই হিসেবে ‘য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র’ নামে বইটি প্রকাশিত হয়৷
রবীন্দ্র জীবনের শেষপর্বে ১৯৩৬ সালে এসে এটির দ্বিতীয় সংস্করণ ছাপা হয়। তখন কবির প্রথম ইউরোপ ভ্রমণের প্রায় ষাট বছর অতিক্রান্ত হয়েছে৷ দ্বিতীয় সংস্করণে বইটি ব্যাপকভাবে মার্জিত পরিমার্জিত হয়েছে। এবং রবীন্দ্রনাথ ভূমিকা স্বরূপ বন্ধুবর শ্রী চারুচন্দ্র দত্তকে উদ্দেশ্য করে একটি পত্র যুক্ত করেন৷ সেই পত্রে রবীন্দ্রনাথ নিজেই স্বীকার করেছেন ইউরোপ প্রবাসীর পত্র রচনাকালে তিনি ছিলেন তরুণ; তাই মত প্রকাশের ক্ষেত্রে কিছু লঘুত্বের প্রকাশ ঘটেছিলো। তিনি আরো বলেন, “চিঠি যেগুলো লিখেছিলুম তাতে খাঁটি সত্য বলার চেয়ে খাঁটি স্পর্ধা প্রকাশ পেয়েছে প্রবল বেগে।”
আরও পড়ুনঃ বাংলা প্রবন্ধ সমগ্র PDF রিভিউ | বঙ্কিমচন্দ্র, নজরুল, রবীন্দ্রনাথ
লেখকের ইউরোপ যাত্রার কারণ:
মাতৃহীন কিশোর রবির ভারতে স্কুলে পড়াশোনায় মন বসছিল না৷ বাড়ি থেকে ঠিক করা হয় যে ব্যারিস্টার হবার জন্য তাঁকে ইউরোপে পাঠানো হবে। পরিবারের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, পড়াশোনা শেষে তিনি ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভেন্ট এ যোগ দেবেন৷
লেখকের বিলাতে অবস্থান ও পড়াশোনা:
রবীন্দ্রনাথের ভারতে পড়াশোনা হলো না৷ বিলাতেও পড়াশোনা সঠিকভাবে শেষ হলো না৷ আবার দেশে ফিরে এসেও প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা হলো না৷ পরিবারের ইচ্ছায় ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসেও যোগদান আর হলো না৷ পরিবারের জমিদারি কর্মেও তার মন বসলো না৷ তিনি জড়িয়ে পড়লেন রাজনীতিতে৷ তিনি হয়ে গেলেন কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক৷
বিলাত জীবনের সমাপ্তি:
লেখক তার পিতার নির্দেশে ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি লন্ডন পাঠ চুকিয়ে দিয়ে ফ্রান্সে সত্যেন্দ্রনাথের কাছে চলে আসেন এবং সেখান থেকে কিছুদিনের মধ্যে কলকাতায় ফিরে আসেন। প্রায় দুই বছর ইংল্যান্ডে কাটিয়ে কোনো ডিগ্রি না নিয়ে এবং ব্যারিস্টারি পড়া শুরু না করেই তিনি দেশে ফিরে আসেন।
কবি আবার বিলাতে:
প্রথমবার বিলাত যাত্রার ১২ বছর পর ১৮৯০ সালে রবীন্দ্রনাথ তার ভাই সত্যেন্দ্রনাথ ও বন্ধু লোকেন্দ্র পালিতসহ দ্বিতীয় বার ইউরোপ যাত্রা করে৷ এই ভ্রমণের সময় রবীন্দ্রনাথ দিনলিপি লিখেছিলেন এবং তা নিজের সম্পাদিত সাধনা পত্রিকার প্রথমবর্ষে বিভিন্ন সংখ্যায় ছাপা হয়। পরবর্তীতে এই দ্বিতীয় ইউরোপ ভ্রমণ নিয়ে ‘য়ুরোপ যাত্রীর ডায়রি’ নামে ১৮৯১ সালে বই প্রকাশিত হয়৷ রবীন্দ্রনাথ যখন প্রথমবার ইউরোপ যান তখন তিনি ছিলেন নিতান্ত তরুণ। যদিও এই প্রতিভাবান তরুণ ইউরোপকে দেখার একটি বিশিষ্টি দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করেছিলেন; তবু পরবর্তীকালের তার নিজের কাছে অনেক কিছু বালখিল্যে আক্রান্ত হয়েছিল বলে মনে হয়েছে। এই যাত্রার মাধ্যমে তিনি তা নতুন করে পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ পান৷
আরও পড়ুনঃ বিসর্জন নাটক PDF রিভিউ সারসংক্ষেপ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ইউরোপ প্রবাসীর পত্র বইটি পড়ে কী জানতে পারি?
১) কবি সতের বছর বয়সে ইউরোপ তথা বিলাতের উদ্দেশ্যে প্রথম বিদেশ যাত্রা শুরু করেন ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দের ২০ সেপ্টেম্বর৷
২) এ বিদেশ যাত্রার উদ্দেশ্য ছিলো উচ্চতর পড়াশোনা করে দেশে ফিরে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভেন্ট এ যোগ দেয়া৷
৩) তিনি ভারতের বোম্বাই থেকে ‘পুনা’ স্টীমারে ইংল্যান্ডের উদ্দেশে যাত্রা করেন। জাহাজে সমুদ্র পীড়া (sea sickness) এর ফলে ছ’দিন মাথা তুলতে পারেন নি; শয্যাগত ছিলেন।
৪) লাজুক কিশোর কবি জাহাজে মহিলাদের সাথে মেশেন নি, পাছে কোন ভুল হয়ে যায় এই ভয়ে।
৫) জাহাজে, ট্রেনে বিভিন্ন দেশের যাত্রীদের আচরণ, যাত্রাপথে নিজেদের ভুল ভ্রান্তির বর্ণনা করেন কবি৷
৬) ইংল্যান্ড গিয়ে প্রথমে মেজদা সত্যেন্দ্রনাথ এর পরিবারের সঙ্গে থাকেন কবি৷
৭) রবীন্দ্রনাথকে ব্রাইটনের একটি পাবলিক স্কুলে ভর্তি করে দেয়া হয়। ব্রাইটনে রবীন্দ্রনাথের খুব বেশিদিন পড়া চলল না।
৮) এখানে তাঁর পড়াশোনা খুব এগুচ্ছে না দেখে মেজদা তাকে লন্ডনে নিয়ে এসে রিজেন্ট উদ্যানের কাছে একটি বাসায় থাকার ব্যবস্থা করেন।
৯) এখানে একজন শিক্ষক রবীন্দ্রনাথকে ল্যাটিন শেখাতেন। এ সময় বার্কার নামে আরো একজন শিক্ষকের সাথে রবীন্দ্রনাথের যোগাযোগ ঘটেছিল।
১০) এরপর তিনি ডাক্তার স্কট নামক একজনের পরিবারে পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকেন। ইউরোপ প্রবাস জীবনে এই পরিবারটি রবীন্দ্র মনে গভীর দাগ কেটেছিলো৷ ডাক্তারের পরিবারের গৃহকর্ত্রী এবং এদের তিনটি মেয়ে ছিলো৷ তাদের পুরো পরিবারের সাথে রবীন্দ্রনাথের বেশ হৃদ্যতা তৈরি হয়েছিলো৷
আরও পড়ুনঃ নকশী কাঁথার মাঠ রিভিউ PDF জসিম উদ্দিন
১১) স্কট পরিবারে কয়েক মাস কাটাবার পর ১৮৭৯ সালে রবীন্দ্রনাথ লন্ডন ইউনিভার্সিটি কলেজের আর্টস অ্যান্ড ল বিভাগে ভর্তি হয়ে আইনবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন।
১২) রবীন্দ্রনাথ এ সকল পত্রে ইংরেজ জাতির মূর্খতা নিচুতা নিয়ে যেমন কথা বলেছেন, তেমনি এ জাতির সততা ও কর্মনিষ্ঠতারও প্রশংসা করেছেন।
১৩) লেখকের মতে, ইউরোপীয়দের ভাবনায় জীবন একটাই, তার জন্যই যত কিছু আয়োজন, সব কিছু তাকে ঘিরে। কঠিন পরিশ্রম করে ফসল ফলানো ও জীবিকা নির্বাহ করতে হয় তাদের৷ এ জন্য ইউরোপীয়রা জীবন ও প্রকৃতির সঠিক মূল্য জানে। ভারতীয়রি সেরূপ ভাবে না৷
১৪) ইংল্যান্ডে মানুষ ভীষণ ব্যস্ত। ভারতীয়রা তদ্রুপ নয়৷
১৫) কবি সেখানে প্রচুর মদের, জুতোর, মাংসের, খেলনার দোকান দেখেছেন৷ কিন্তু বইয়ের দোকান তেমন দেখেননি। এই ঘটনা তাঁকে অবাক করেছিল।
১৬) ইউরোপে মানুষের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যকে সম্মান দেওয়া হয়। কারো ঘরে কেউ হুটহাট করে ঢুকে পড়ে না। আর কারো ঘরে প্রবেশ করতে গেলে মানুষ তার দরজায় নক করে, তার অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করে। যা আমাদের দেশে প্রচলিত নয়৷
১৭) লেখক ইউরোপে অবস্থানরত বাঙালীদের তিন প্রকার দৃষ্টিভঙ্গির কথা তুলে ধরেন৷ এগুলো হচ্ছে, ইউরোপীয়ানদের ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি, সেখানে অবস্থানরত অন্যান্য বাঙালীদের ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং ভারতে অবস্থানরত বাঙালীদের ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি৷ লেখক অত্যান্ত ব্যঙ্গ করে ইউরোপে অবস্থানরত বাঙালীদের একটা অংশকে ইঙ্গবঙ্গীয় বলে অভিহিত করেছেন৷
১৮) ইউরোপের মানুষের মাঝেও বেশ কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে৷ সেগুলোকে তারা কুসংস্কার মনে করে না৷ অথচ ভারতের কুসংস্কার নিয়ে হাসিঠাট্টা করা হয়। এ ক্ষেত্রে লেখক দু দেশের বেশ কিছু কুসংস্কারের উদাহরণ তুলে ধরেছেন৷
১৯) লেখক অবলোকন করেন যে, ভারতের নারীদের মতো বিয়ের বাজারে ইউরোপের নারীদেরও অনেকটা মিল রয়েছে৷ এ ক্ষত্রে নারীরা যেন বাজারের ভোগ্যপণ্য৷
২০) আরও একটি বিষয়ে তিনি নিজ দেশের সমাজের সঙ্গে ও দেশের মিল পান, ভারতের মতো সেখানেও পুরুষরা নারীদের উপর হর্তাকর্তা৷
২১) কিশোর রবি তার সঙ্গীদের সঙ্গে লন্ডনে হাউস অফ কমন্সে গেছিলেন। সেখানে সংসদ সদস্যদের বিশৃংখলা দেখে লেখক বেশ আশ্চর্য হয়েছিলেন৷
আরও পড়ুনঃ সাম্যবাদী কবিতার মূল ভাব PDF কাজী নজরুল ইসলাম
একটি গুজব:
অনেকেরই ধারণা ডাক্তার স্কট এর পরিবারের কন্যাদের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের গভীর সম্পর্ক ছিলো৷ আর এ কথা পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কান পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। পিতা ভয় পাচ্ছিলেন যে, পুত্র বিলাতী ম্যাম বিয়ে করে আর দেশে না ফিরে কিনা৷ এ জন্য পিতা দেবেন্দ্রনাথ পুত্রকে হঠাৎ করে দেশে জরুরী তলব করেন এবং উচ্চতর পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে দেশে ফেরত আসতে বাধ্য করেন৷ তাছাড়া, ভারতী পত্রিকাতে রবীন্দ্রনাথের ‘য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র’ ছাপা হওয়া এবং পত্রের বিষয় বয়সের তুলনায় অতিপাকামী গোছের হওয়াতে পিতা ক্ষেপে যান৷
রবীন্দ্রনাথ দ্বিতীয়বার ইউরোপে গিয়ে স্কট পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তারা অন্যত্র চলে যাওয়ায় আর সম্ভব হয়নি। সে তথ্য পাওয়া যায় বার বছর পর তার দ্বিতীয় বিলাত ভ্রমণ নিয়ে লাখিত ‘য়ুরোপ যাত্রীর ডায়রী’ তে৷
রবীন্দ্রনাথের ভ্রমণ সাহিত্য ও পত্র সাহিত্য:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মোট বারো বার বিশ্বভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সালের মধ্যে তিনি পাঁচটি মহাদেশের ত্রিশটিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন। তিনি পরিণত হয়েছিলেন এক বিশ্ব যাযাবরে৷ প্রথম জীবনে দুই বার (১৮৭৮ ও ১৮৯০ সালে) তিনি ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন। ১৯১২ সালে ব্যক্তিগত চিকিৎসার জন্য তৃতীয়বার ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন৷
রবীন্দ্রনাথ যেসকল বইতে তার বিদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতাগুলি লিপিবদ্ধ করে রাখেন সেগুলি হল: য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র (১৮৮১), য়ুরোপ যাত্রীর ডায়ারি (১৮৯১, ১৮৯৩), জাপান যাত্রী (১৯১৯), পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি ও জাভা-যাত্রীর পত্র (১৯২৯), রাশিয়ার চিঠি (১৯৩১), পারস্যে (১৯৩৬), পথের সঞ্চয় (১৯৩৯)। বাংলাদেশে ‘প্রথমা’ এবং ‘কথাপ্রকাশ’ থেকে ‘রবীন্দ্র ভ্রমণ সাহিত্য সমগ্র’ বের হয়েছে। এক মলাটের ভেতরে সব কয়টি রবীন্দ্র ভ্রমণ সাহিত্য!
রবীন্দ্রনাথের সামগ্রিক পত্রসাহিত্যও বেশ সমৃদ্ধ৷ উনিশটি খণ্ডে এটি প্রকাশিত হয়েছে। এ উনিশ খণ্ডের বাইরে ছিন্নপত্র ও ছিন্নপত্রাবলী (ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণীকে লেখা), ভানুসিংহের পত্রাবলী (রানু অধিকারীকে লেখা) ও পথে ও পথের প্রান্তে (নির্মলকুমারী মহলানবিশকে লেখা) বই চারটি রবীন্দ্রনাথের উল্লেখযোগ্য পত্রসংকলন।
আরও পড়ুনঃ অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থ PDF রিভিউ কাজী নজরুল ইসলাম
কবি গুরুর অন্যান্য সাহিত্যকর্ম:
রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস, ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন তার জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়। তার ৯৫টি ছোটগল্প ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় চিঠিপত্র নিয়ে উনিশ খণ্ডে পত্রসাহিত্য গ্রন্থে প্রকাশিত হয়। এছাড়া তিনি শষ জীবনে এসে প্রায় দুই হাজার ছবি এঁকেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২ খণ্ডে রবীন্দ্র রচনাবলী নামে প্রকাশিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের অনেক লেখা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের (ইংরেজি অনুবাদ) জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
শেষ কথা:
এ মূল্যবান ভ্রমণ সাহিত্যটি আপনার পড়া না থাকলে আজই পড়ে ফেলতে পারেন ইউরোপ প্রবাসীর পত্র ৷ রকমারিতে বইটি পাওয়া যায়৷ নিচে ফ্রি পিডিএফ কপি দেয়া আছে৷ তাছাড়া, ইউটিউব থেকে এটির অডিও বুকও শুনতে পারেন৷
লিখেছেনঃ Mh Fazlul Hoque
বইঃ ইউরোপ প্রবাসীর পত্র [ Download PDF ]
লেখকঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা সমগ্র PDF Download করুন