বইয়ের নাম- কল্পনা
কবি- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
জনরা- কবিতা
পৃষ্ঠা-৮০
মূল্য-১২৫
কল্পনা কাব্যের প্রকাশ কাল ১৯০০। এই কাব্যে প্রাচীন ভারতের সৌন্দর্য, পুরাণ ও জীবনের কথা উঠে এসেছে। আছে প্রাচীন ভারত ইতিহাসের বিশাল পটভূমি, জনজীবন এবং গভীর আত্মজীবনের কথা।
মানুষ বিশ্বলোকে জন্ম গ্রহন করে নিজ দায়িত্বে আরো একটি জগৎ নিজের মাঝে তৈরি করেছে তা হলো শিল্পলোক। আর এই শিল্পলোকের অন্তর্গত হলো সাহিত্যলোক। সাহিত্যলোকের শিল্পীরা তাদের শিল্পের উপকরণ কখনো বিশ্বলোক কখনো শিল্পলোক হতে আহরন করে। এতে যেমন প্রকৃতি থেকে কোন উপদান নিলে কোন সমস্যা হয় না, তেমনি শিল্পলোকের শিল্প সাহিত্য যেমন- বাল্মীকি, কালিদাসের প্রভৃতির সৃষ্টি থেকেও উপাদান গ্রহন করা যায়। কল্পনা কাব্যের উপকরন কবি শিল্পলোক থেকেই গ্রহন করেছেন।
সোনার তরী, চিত্রা প্রভৃতি কাব্যে কবি বর্তমানের কথা, ব্যক্তিগত জীবনের কথা বলেছেন। জীবন আর প্রকৃতি থেকে উপাদান সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু এখানে তিনি অতীতের দিকে দৃষ্টি দিয়ে উপাদান সংগ্রহ করেছেন। কল্পনার অধিকাংশ কবিতায় এই শিল্পজগতের পরিচয় আছে। ভাষা ও ভঙ্গীর শিল্পরূপ কল্পনার আরো একটি বৈশিষ্ট্য।
আরও পড়ুনঃ ক্ষণিকা কাব্যগ্রন্থের মূলভাব PDF
“দুঃসময়” কবিতাটি কল্পনার প্রথম কবিতা আর “অসময়” শেষের দিকে। দুটো যদিও প্রায় একই রকম তবুও পার্থক্য বিদ্যমান। বিষয়টি এমন দুঃসময় দিয়ে কবি প্রবেশ করেছেন সামনে বিশাল রাস্তা গন্তব্য ঠিক নেই, আর অসময় এমন স্থানে তাতে লেখক পৌছে গেছেন প্রায়।
“দূরে কলরব ধ্বনিছে মন্দ মন্দ রে,
ফুরাল কি পথ, এসেছি পুরীর কাছে কি?”
প্রাচীন জীবনের বিচিত্ররূপের রহস্যপুরীতে প্রবেশের জন্য তিনি যাত্রা করেছেন।
কল্পনা কাব্যে বিভিন্নভাবে কতগুলো গান আছে। এছাড়া দুটি ধারার কবিতা লক্ষ করা যায়। যেমন-
১. মানব ও প্রকৃতির সৌন্দর্য, মাধুর্য, ও প্রেমের অনুভূতি পাওয়া যায়:- বর্ষামঙ্গল, চৌরপঞ্চাশিকা, স্বপ্ন, মদনভষ্মের পূর্বে, মদনভষ্মের পর, মার্জনা, স্পর্ধা, পিয়াসী, পসারিনী, শরৎ, বসন্ত, প্রণয়-প্রশ্ন, প্রকাশ প্রভৃতি কবিতায়।
২. জীবনে ভোগ আর ত্যাগের অন্তর্দ্বন্ধ প্রকাশ পেয়েছে:-দুঃসময়, অসময়, অশেষ, বিদায়, বৈশাখ, বর্ষশেষ, রাত্রি প্রভৃতি কবিতায়।
আরও পড়ুনঃ সোনার তরী কাব্যগ্রন্থ বিশ্লেষণ PDF
প্রথমধারার কবিতা গুলো সোনারতরী বা চিত্রা কাব্যের সমগোত্রীয় হলেও কবি এতে যোগ করেছেন, প্রাচীন ভারতের ঐতিহ্য ও ইতিহাস। এ যেন পুরাতন শিল্পের আদলে নতুন শিল্পরূপ। প্রকৃতির বিচিত্র রূপের যে সৌন্দর্য তার একনিষ্ঠ ভক্ত হলেন রবীন্দ্রনাথ। সৌন্দর্যের যে আধার ঘেরা রহস্য কবি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্তই এর তল খুঁজে গেছেন।
মানবপ্রেমকেও কবি উপরে উঠিয়ে অতীতের মধ্যে সমর্পন করে সকল কালের সাথে তার একটা সম্বন্ধ করে দিয়েছেন।
“বর্ষামঙ্গল” কবিতাটিতে ধ্বনি, শব্দ, ছন্দের অপূর্ব নৃত্যে উন্নিত করেছেন। এতে ভারতের পূর্বেকার সকল কবিদের অভিনন্দিত করে নববর্ষার রূপ ফুটিয়ে তুলেছেন।
“শতেক যুগের কবিদলে মিলি আকাশে
ধ্বনিয়া তুলিছে মত্তমদির বাতাসে
শতেক যুগের গীতিকা।”
আরও পড়ুনঃ কপালকুন্ডলা PDF বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
“স্বপ্ন” কবিতায় কালিদাসের কালের একটি অপূর্ব পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন।
“মদন-ভষ্মের পূর্বে” কবিতায়, প্রেমের দেবতা মদন। কবি তাকে আহ্বান করেছেন। কিন্তু মহাদেব তো মদনকে ভস্ম করে দিয়েছেন।
“মদন-ভস্মের পর” কবিতায় বলেন মদন একটা প্রভাবের গন্ডিতে আবদ্ধ ছিলো, কিন্তু ভস্মের পর তা বিশ্বে ছড়িয়ে গেছে। তাই আকাশে বাতাসে আজ প্রণয় সংকেত।
“অশেষ” কবিতায় কবি বলেন, তার জীবনে সন্ধ্যা নেমে আসছে। তার ক্লান্ত শরীর বিশ্রাম কামনা করছে। কিন্তু এসময় জীবনদেবতা তাকে নতুন কাজে আহ্বান করছেন। যা পুরোটাই অসময়ে হয়ে গেলো।
আরও পড়ুনঃ কাজল তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় PDF রিভিউ
“বিদায়” কবিতায় কবি শান্ত, গভীর বিষাদে পূর্ব জীবন থেকে অবসর নিচ্ছেন। এ বিদায় ঠিক মৃত্যু নয়। কাজ হতে অবসর মাত্র।
“বর্ষশেষ” কবিতায় কবি ঝড়ের পূর্বভাসের রূপ ফুটিয়েছেন। কালবৈশাখী ঝড়কে তিনি নিজের জীবনে আহ্বান করেছেন।
কল্পনার কাহিনীতে প্রাচীন বস্তু আছে, কথায় আছে প্রাচীনের চিত্রধর্ম। বিষয়বস্তু, রূপনির্মান, বাক্যে সংস্কৃতস্বাদ। সংস্কৃত সাহিত্যকে আধুনিক কবি হয়ে তিনি পুনরুজ্জীবিত করেছেন। বস্তুত কবি তার বিশিষ্ট প্রতিভার অগ্রগতিতেই সংস্কৃত সাহিত্যানুরাগী হয়েছেন।
লিখেছেনঃ ফেরদৌসি রুমী
বই: কল্পনা [ Download PDF ]
লেখক: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটক আলোচনা, প্রেক্ষাপট, রিভিউ PDF