গল্পঃ একরাত্রি
লেখকঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ধরন: ছোটগল্প
মূলভাবঃ
গল্পকথক, যে একদম বাল্যকাল থেকেই সুরবালার সঙ্গে ঘরঘর খেলে বড় হয়েছে এবং প্রায়শই তাদের দুজনে বেশ মানায় ধরনের কথা শুনে অভ্যস্ত.. ছোটবেলা থেকেই তাই তার মনে বদ্ধমূল ধারণা ছিলো যে সুরবালার জন্ম আসলে তারই জন্যে। সুরবালার রূপগুণের চর্চা তাই হয়তো সবার মুখে মুখে থাকলেও তাতে গল্পকথক কোন আলাদা মাধুর্য পেতো না!
কলকাতায় শিক্ষিত হবার বাসনা তাকে একপ্রকার অন্ধ করে দেয়। সেই জন্যেই পনেরো বছর বয়সে, যখন তার কথা চলছে আট বছরের সুরবালার সঙ্গে বিবাহের জন্য, সেই সময় সে ঘর থেকে পালিয়ে পাড়ি দেয় কলকাতায় তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে।
একপর্যায়ে তাকে ঘরে ফিরতে হয় তার পিতার মৃত্যুর পরে মা এবং দুই বোনের জন্য। নওয়াখালি বিভাগের একটি ছোট শহরে এন্ট্রেন্স স্কুলের সেকেন্ড মাস্টারি পদ পাবার মাধ্যমে সে তার উচ্চ মনোবাসনা হয়তো পূরণও করে…! কিন্তু প্রকৃতি যে অন্যরকম কিছু চাচ্ছিলো কে জানতো!
সে বাড়ী ছাড়ার কয়েকমাস পরই সুরবালার বিয়ে হয়ে যায় উকিল রামলোচনবাবুর সঙ্গে। ভাগ্যও ছিলো বটে, স্কুলটি ছিলো রামলোচনের বাড়ীর কাছাকাছিই। একদিন রামলোচন তাকে ছুটির দিনে আলাপ করতে ডাকলে সেখানে আবার তাকে সুরবালার মুখোমুখি হতে হয়, সেইই সুরবালা যাকে প্রত্যাখান করে সে একবার অনেক দূরে পাড়ি দিয়েছিলেন। আজ তার বাল্যকালের ঘর ঘর খেলার সাথীর সাজানো পরিপাটি বাস্তব ঘরে তার সাথে দেখা এক নতুন গাম্ভীর্যে!
আরও পড়ুনঃ সত্যজিৎ রায় গল্প ১০১ PDF রিভিউ
সে ভাবলো..ভেবেই গেলো..! সুরবালা কোথায়? আসলে সে তারই তো হতো, নিজের দোষেই আজ সুরবালা তার নয়। এসব তাকে পীড়া দিচ্ছিলো।
কোন এক ঝড়জলের রাত। রামলোচন তার কোন এক কাজে একবার বাইরে যাওয়ার সুরবালার জন্য চিন্তা হতে থাকলো। সে এগিয়ে গেলো প্রতিকূল পরিবেশে সুরবালার নিরাপত্তার খাতিরে। সেই এক রাত ছিলো..যেই রাতে তার মনে হয়েছিলো যে এই সুরবালার জন্ম সত্যি তার জন্য, সে ছাড়া যেন কেউ নেই সুরবালার, কেউ নেই। কিন্তু ছিলো, তাই সকাল হতেই সুরবালা তার আগের মতই নিভৃতে নির্বিঘ্নে আগের জায়গায় ফিরে গেলো… সে পরে রইলো একা। খুব একা…একটা আক্ষেপ রয়ে গেলো তার মনে..হায়, সুরবালা তার কিই-না হইতে পারতো! কিন্তু কই? সুরবালা আজ তার কিছু নয়!
মন্তব্যঃ
কখনো কখনো আমরা প্রাপ্তিটা যখন অনেকটা আপনাআপনি পেয়ে যাই, সেটার গুরুত্ব আমাদের কাছে কম থাকে। আরো কিছু পাবার নেশায় হয়তো যেটা আমাদের কাছে আছে তার অবমূল্যায়ন হয়ে যায়। একটা সময় আসে যখন প্রাপ্তি অর্জনের হিসেবে আমরা দেখি অপ্রাপ্তিটাই বেশি অথচ, যেটা বা যে মানুষটা আমাদের ছিলো সেই হয়তো আর থাকেনা। তখন ‘সে আমার কেই না হতে পারতো, কিন্তু হলো না..! এই আক্ষেপ করাটা ছাড়া সেই দামী মানুষটাকে পাবার আর কোন উপায় অবশিষ্ট থাকে না! একরাত্রি …
আরও পড়ুনঃ বিলাসী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় PDF রিভিউ
লেখকঃ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বলা হয় বাংলা সাহিত্যের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক। উপন্যাস, কবিতা, ছোটগল্প, নাটক, সংগীত, দর্শন – সকল বিভাগেই ছিল তার সুদক্ষ উপস্থিতি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ২৫শে বৈশাখ ১২৬৮ সালে (৭ই মে ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দ) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। মাত্র পনেরো বছর বয়সে তার বনফুল কাব্য প্রকাশিত হয়। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যের জন্য এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
তার জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয় ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ, ৯৫টি ছোটগল্প ও ১৯১৫টি গান। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন এবং স্বদেশী আন্দোলনেও ছিল তাঁর কন্ঠ সোচ্চার। ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া নাইট উপাধী প্রত্যাখান করেন। ২২শে শ্রাবণ ১৩৪৮ সালে (৭ইআগষ্ট ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দ) কলকাতায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ।
আরও পড়ুনঃ মহেশ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় PDF রিভিউ
ছোটগল্পসমূহঃ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ছোটগল্পকার। হিতবাদী, সাধনা, ভারতী, সবুজ পত্র প্রভৃতি মাসিক পত্রিকাগুলোতে নিয়মিত লেখতেন তিনি। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গল্প হল কঙ্কাল, নিশীথে, মণিহারা, ক্ষুধিত পাষাণ, স্ত্রীর পত্র, একরাত্রি, সমাপ্তি, নষ্টনীড়, কাবুলিওয়ালা, হৈমন্তী, দেনাপাওনা ইত্যাদি।
উপন্যাসসমূহঃ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মোট তেরোটি উপন্যাস রচনা করেছিলেন। এগুলি হল: বৌ-ঠাকুরাণীর হাট (১৮৮৩), রাজর্ষি(১৮৮৭), চোখের বালি (১৯০৩), নৌকাডুবি (১৯০৬), প্রজাপতির নির্বন্ধ (১৯০৮), গোরা (১৯১০), ঘরে বাইরে(১৯১৬), চতুরঙ্গ (১৯১৬), যোগাযোগ (১৯২৯), শেষের কবিতা (১৯২৯), দুই বোন (১৯৩৩), মালঞ্চ (১৯৩৪) ও চার অধ্যায় (১৯৩৪)।
লিখেছেনঃ Sanjana Payel
বই: একরাত্রি [ Download PDF ]
লেখক: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প সমগ্র PDF Download করুন