বই পরিচিতিঃ ‘হৈমন্তী’ -রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর।
“কবে যে সাদা মনটির উপর একটু রঙ ধরিল, চোখে একটু ঘোর লাগিল, তাহা ঠিক করিয়া বলিতে পারিব না। “
উপরের কথা গুলো গল্পের প্রধান চরিত্র হৈম সম্পর্কে তার স্বামী অপুর। ‘হৈমন্তী’ রবি বাবুর অসাধারণ সৃষ্টি ছোট গল্প গুলোর একটি।রবীন্দ্র গল্পগুচ্ছের অন্তর্গত হৈমন্তী পড়েনি এমন মানুষ খুব কমই আছে। প্রকৃতপক্ষে কি আছে এই গল্পে?যারা পড়েননি তাদের জন্য ছোট্ট একটা রিভিউ দেওয়াই যায়..
সপ্তদশী রমণী হৈমন্তীর সাথে গল্প কথক অপুর বিয়ের সম্বন্ধের কথাবার্তা দিয়ে শুরু। বাঙ্গালী হিন্দু সমাজে যখন এগারো এর পরই মেয়েদের বিবাহের বয়স পার হয়ে গেছে বলে ধরা হয় তখন সতের বছরের হৈমকে সমাজ বুড়ি খেতাবই দিয়ে ফেলেছে! তবুও কন্যার বাবা ভালো পাত্রের সন্ধানে সবুর করিতে চাহিলেন। কিন্তু বরের বাবা সবুর করিতে চাহিলেন না। সম্পদের লোভে ও বড় অঙ্কের পণ নিয়ে এক সময়ে রাজার ভূত্য বড়লোক বাপের একমাত্র কন্যা হাত ছাড়া করিতে চাহিলেন না। অতিশীঘ্রই বিয়ের আয়োজন হলো।
আরও পড়ুনঃ হাজার বছর ধরে – জহির রায়হান
বিয়ের পর কিছুদিন অতি সুখেই দিন কাটতে লাগলো। মেয়ের বাপের সম্পদের লোভে পুত্রবধূর অধিক বয়স মেনে নিলেও সমাজ তা মেনে নেয় নাই। সত্যবাদী হৈমন্তী সবার সামনে শাশুড়ির কথার বিরুদ্ধে নিজের আসল বয়স বলে দিলে সমস্যার শুরু হয়। তবুও একসময় কন্যার বাপের সমস্ত ধনদৌলত পাওয়ার কথা মাথায় রেখে সমস্যা বাড়লো না। যখন সংবাদ আসলো, কন্যার বাপের বিশাল ধনভাণ্ডারের কাহিনী ভুয়া তখন থেকেই হৈম শুলে চড়লো।
সবাই মিলে তার জীবন নরক বানিয়ে ছাড়লো। যখন হৈমন্তীর বাবা গৌরীশঙ্কর তাকে নিতে আসে, অপুর পরিবার বিবাহের আগের সকল প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে তাকে যেতে দেয় না এবং উল্টো হুংকার ছুড়ে। শেষ পর্যন্ত হৈমন্তীকে নিয়ে তার বাবা চিরদিনের জন্য বাড়ি ছেড়ে চলে গেলেও স্বামী হয়ে অপু কিছুই করতে পারেনি! হৃদয়পটে হৈমন্তীর নাম খোদাই করেও তাকে ধরে রাখতে পারেনি।
অপুর স্বামী হিসেবে দুর্বল ব্যক্তিত্বের পরিচয় গল্পে প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে। পরিবারের মতামতের বিরুদ্ধে গিয়ে স্ত্রীকে আটকাতে পারেনি। সবশেষে বলা যায়, হৈমন্তী রবীন্দ্রনাথের এক অনবদ্ধ রচনা। উনার নিজস্ব ট্রেডমার্ক লেখার স্টাইল, নাটকীয় মোড়, আকর্ষণীয় উপস্থাপনা পাঠককে নতুন কিছুই দিবে। তবে আর দেরী কেন? পড়তে শুরু করুন আজই…
লিখেছেনঃ A R Faisal
গল্পঃ হৈমন্তী [ Download PDF ]
লেখকঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট গল্প সমগ্র