“তুমি অধম — তাই বলিয়া আমি উত্তম না হইব কেন?”
“পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ?”
দুটো লাইনই অবিস্মরণীয় উক্তি যা বাংলা ভাষায় সুভাষিত উক্তি রূপে বহুল ব্যবহৃত ও চর্চিত হয়। প্রথম লাইনটা শোনেনি, এমন বাঙালি বোধহয় খুঁজে পাওয়া মুশকিল।আর দ্বিতীয় লাইনটাকে বাংলা সাহিত্যে সর্বপ্রথম ও শ্রেষ্ঠ রোমান্টিক ডায়লগের স্বীকৃতি দেয়া হয়। দুটো লাইনই বঙ্কিমচন্দ্রের এক উপন্যাসের অংশ — কপালকুণ্ডলা।
ছোটবেলা থেকেই বাংলা পঠ্যবইয়ে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর গদ্যগুলো পড়ার সময় কবি পরিচিতিতে দুর্গেশনন্দিনী,কপালকুন্ডলা,বিষবৃক্ষ,কৃষ্ণকান্তের উইল পরীক্ষায় জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও অবজেক্টটিভ এর জন্যে এসব উপন্যাসের নাম পড়ে পড়ে এবং প্রথম লাইনটি শুনে শুনে বড় হয়েছি।অবশেষে অাজ সাহিত্য সম্রাট এর রচিত বাংলা সাহিত্যের প্রথম স্বার্থক রোমান্টিক উপন্যাস কপালকুন্ডলা পড়ে শেষ করলাম এবং সাথে সাথেই রিভিউ লিখতে শুরু করলাম,অাশা করি সময় হলে ধৈর্য ধরে পুরো লেখাটি পড়লে যারা কপালকুন্ডলা বইটি পড়েন নি তাদের হয়তো এ বইটি পড়ার ইচ্ছে জাগবে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে নবকুমার এক জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে আটকা পড়েন। সেখানে এক কাপালিক তাকে বলি দিতে উদ্যত হয়। তখন কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলা তার প্রাণ বাঁচিয়ে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। স্থানীয় মন্দিরের অধিকারীর সহায়তায় নবকুমার কপালকুণ্ডলাকে বিয়ে করে নিজের বাড়ি সপ্তগ্রামে ফিরে আসেন। পথে মতিবিবি বা লুৎফ-উন্নিসা নামে এক বিদেশী রমণীর সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ হয়।
আরও পড়ুনঃ কমলাকান্তের দপ্তর PDF বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
কপালকুণ্ডলা বাল্যকাল থেকে জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে কাপালিকের কাছে বড় হওয়ায় স্বাভাবিক সামাজিক রীতিনীতির সঙ্গে অপরিচিত ছিলেন। নবকুমারের বাড়িতে তিনি ধীরে ধীরে সমাজের মানুষজন ও তাদের আচার আচরণ সম্পর্কে ধারণা পেলেন। কপালকুণ্ডলা নাম বদলে তার নাম রাখা হল মৃন্ময়ী।
মতিবিবি বা লুৎফ-উন্নিসা আসলে নবকুমারের প্রথমা স্ত্রী পদ্মাবতী ছিলেন। পরে সপরিবারে মুসলমান হয়ে আগ্রা চলে যান। পথে নবকুমারকে দেখে তিনি পুনরায় তাকে স্বামীরূপে লাভ করতে উৎসুক হন এবং সপ্তগ্রাম চলে আসেন। পদ্মাবতীর পরিচয় জানার পর নবকুমার তাকে প্রত্যাখ্যান করেন।
আরও পড়ুনঃ দুর্গেশনন্দিনী উপন্যাস PDF বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
এদিকে কাপালিক কপালকুণ্ডলাকে বধ করতে সপ্তগ্রাম চলে আসে। তার হাত ভেঙে যাওয়ায় সে পদ্মাবতীর সাহায্য চায়।
পদ্মাবতী ব্রাহ্মণবেশ ধারণ করে কপালকুণ্ডলাকে সব খুলে বলে এবং নবকুমারকে ছেড়ে চলে যেতে অনুরোধ করে। ব্রাহ্মণবেশী পদ্মাবতীর সাথে কপালকুণ্ডলাকে দেখতে পেয়ে নবকুমার তাকে ভুল বুঝে খুব কষ্ট পান। আর কাপালিক সুযোগ বুঝে সুরাপান করিয়ে নবকুমারকে উস্কে দিতে থাকেন।
শেষপর্যন্ত নবকুমার আর কপালকুণ্ডলার মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব সংঘাতের মধ্য দিয়ে উভয়েই জীবনের চরম উপসংহারে উপনীত হয়।
আরও পড়ুনঃ চোখের বালি উপন্যাস PDF রিভিউ
হুমায়ূন অাহমেদ এর বই যেরকম চোখবুলিয়ে এক বসায় পড়ে উঠে যায়,কিন্তু বঙ্কিম এর লেখা বিশেষ করে কপালকুন্ডলা বইটি পড়তে অাপনার মনোযোগ ধরে রাখতে হবে।
পুরো উপন্যাসের কয়েকটি অংশে আমি সমালোচনা করার মতো জায়গা পেয়েছি তার মধ্যে পদ্মাবতীর পরিবার যে ইসলাম গ্রহন করেছে সেটা সম্পর্কে লেখক বলেছেন মোহাম্মদীয় ধর্ম এবং সম্রাট জাহাঙ্গীরদের বলেছেন মোহাম্মদীয় ধর্মের বাদশাহ্। এসব শব্দ ব্যাবহারে লেখকের জানা প্রয়োজন ছিলো ইসলাম মোহাম্মদের প্রবর্তিত ধর্ম নয়।এক্ষেত্রে লেখকের ইসলাম ধর্মের প্রতি নিচু মনমানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে।
অধিকাংশ পাঠকই পড়তে গিয়ে অামার মতো—চন্দ্ররশ্মিবর্ণাভা বা বারিধারাপরিসিঞ্চিত ঘরানার মতো বেশ কিছু শব্দের অর্থ বুঝতে সমস্যায় পড়বেন হয়তো। আবার বাটী অর্থ যে বাড়ি —সেটা আমার জানা থাকলেও আগে বাটির কথাই মনে আসে।
আরও পড়ুনঃ বাংলা সাহিত্যের সেরা সাতটি বই রিভিউ PDF
বানানের ক্ষেত্রেও কিছুটা সমস্যায় পড়েছি যেমন ধরুণ ধর্ম্ম বা কর্ত্তার মত বানান দেখলে একটু ভিরমি খেতে হয় বৈ কি! তবে বিশ শতকে কলকাতা আর অামাদের ঢাকার উচ্চারণ পার্থক্যহেতু পেয়েছে এর মাধ্যমেই।ওরা কালের বিবর্তনে পরের অংশ নিয়ে উচ্চারণ করেছে — ধম্ম বা কত্তা। আর আমরা শুরুর অংশ নিয়ে ধর্ম বা কর্তা এসবই ব্যাবহার করছি।
অার হ্যাঁ, এসব শব্দ ও বানানের সমস্যার কথা শুনে ভয় না পেয়ে বইটি সংগ্রহ করার সময় বইয়ের শেষের দিকে শব্দগুলোর অর্থ দেওয়া আছে এমন বই সংগ্রহ করবেন অথবা গুগল করে অর্থ জেনে নিতে পারবেন আর যেসব শব্দের অর্থ না বুঝবেন সেগুলো রেখেই পড়ুন, অাশা করি গল্পের কাহিনী বুঝতে পারবেন।
সবশেষে,বঙ্কিমের মত হয়তো অাপনাদেরও প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করবে — আকাশে চন্দ্রসূর্য্য থাকিতে জল অধোগামী কেন?
লিখেছেনঃ Naeem Hasan
বইঃ কপালকুন্ডলা [ Download PDF ]
লেখকঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
বঙ্কিম রচনাবলী প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড PDF Free Download করুন এখান থেকে