বই : মানুষ জীবনানন্দ
লেখিকা : লাবণ্য দাশ
২য় মুদ্রন : ফেব্রুয়ারি ২০১৫
প্রকাশনা : ভাষাচিত্র
মুদ্রিত মুল্য : ১৫০ টাকা
প্রচ্ছদ : সব্যসাচী হাজরা
“এই পৃথিবীতে আমি অবসর নিয়ে শুধু আসিয়াছি -আমি হৃষ্ট কবি
আমি একা -ধুয়েছি আমার দেহ অন্ধকারে একা একা সমুদ্রের জলে; “
এরকম হাজারো কবিতার জনক জীবনান্দ দাশ। স্মৃতির বিস্তৃত প্রান্তে তার হালকা আবছায় সহসা গাঢ় হয়ে মিশে গেছে সাহিত্যের পাতায় পাতায়। কখনো প্রেম, কখনো বিরহ, কখনো নিঃসঙ্গ নাগরিক জীবনের তীব্র হতাশা, কখনোবা আশবাদী এই লেখক। বাস্তব জীবনেও কি এমন ছিলেন? জানতে ইচ্ছা করে না ঠিক কেমন ছিল এই মহারথী যিনি ছাপ রেখে গেলেন এত প্রাগাঢ়…! কেমন ছিলেন মানুষ জীবনানন্দ? চলুন জানা যাক!
কবি জীবনানন্দকে আমরা চিনি তার লেখা কবিতার মাধ্যমে। কিন্তু তার যাপিত জীবন কেমন ছিলো, সেটা জানতে হলে পড়া উচিত তার স্ত্রী লাবণ্য দাশের ‘মানুষ জীবনানন্দ’ বইটি।
বইটি পড়ে জানতে পারি জীবনানন্দ গম্ভীর ছিলেন না। ঠাট্টাতামাসা করতেন মাঝেমাঝে। অমায়িক এক ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন কবি জীবনানন্দ দাশ।
কবি জীবনানন্দ দাশ তার ছাত্রদের অত্যধিক ভালোবাসতেন। তাদের স্নেহের কথাও উঠে এসেছে এই বইতে। প্রতিনিয়ত ছাত্ররা তাঁর বাড়িতে আসতেন এক লাইন কবিতা শোনার জন্য। তিনি তখন মুচকি হাসতেন।
বইটি পড়া মাত্রই সচেতন পাঠক অনুধাবন করতে পারবে কবি জীবনানন্দ দাশের সাংসারিক জীবন কেমন ছিলো। তিনি অবহেলিত ছিলেন কিনা!
আরও পড়ুনঃ রূপসী বাংলা জীবনানন্দ দাশ PDF রিভিউ
বই প্রসঙ্গ ও আলোচনাঃ
বইটার লেখিকা লাবণ্য দাশ জীবনানন্দের স্ত্রী, তার কবি প্রতিভার প্রকাশের পূর্ব থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি দেখেছেন এই মানুষটিকে। তার কথায় প্রস্ফুটিত কেমন ছিলেন মানুষটা।
মা বাবার মৃত্যুর পর লাবণ্যের ভরণপোষণ হয় জেঠামশাই অমৃতলাল গুপ্তের কাছে। তিনি যখন ইডেন কলেজে ভর্তি হোন তার কিছুদিন পর জরুরী তলবে বাড়িতে আসার পথে জামা জুতোতে কাদা লেগে যায়। সেই অবস্থাতেই তার সাথে কবির প্রথম দেখা হলো ড্রয়িং রুমে। দিল্লীর রামযশ কলেজের টিচার জীবনবাবু । যাহোক তাদের বিবাহ পর্ব চুকে গেল। এর মাঝে জীবনবাবুর আধুনিক মননের পরিচয় দিলেন লেখিকা। গতানুগতিক যৌতুকপ্রথা মানতেন না তিনি, পুর্বে বড় ঘর থেকে বিবাহের প্রস্তাব আসে, সাথে বড় যৌতুকের কথা। সাফ মানা করে দেন বিয়ে করতে জীবনানন্দ। তার মতে বিয়ে করতে হলে কিছু পেতেই হবে তেমন কি কথা! লাবণ্যের সাথে বিবাহের সময় কবিকে একটি আংটি দেয়া হয়েছিল। যেটার জন্যে তিনি কুন্ঠায় ভুগতেন।
তখনকার সময়ে মেয়েদের পুরুষদের সামনে যেতে দেয়া হতো না। কিন্তু লাবণ্যকে একবার পুলিশের সামনে যেতে হয়েছিল এবং কবির লেখার খাতা সহ সব তল্লাসী চালিয়ে দুটি বিপ্লবের বই পাওয়া গেল। অতএব লেখিকা বামপন্থী ধরে নিয়ে কথা ওঠল এবং নির্দোষ প্রমাণ হবার পর এত কিছুর জন্যে জীবনানন্দ কিছুই বলেন নি।
আরও পড়ুনঃ একজন কমলালেবু রিভিউ PDF | জীবনানন্দ দাশ এর জীবনী
কবিমাতা কুসুমকুমারী দাশ ছিলেন প্রখ্যাত কবি। কিন্তু বাস্তব জীবনে একজন আদর্শ গৃহিণী ও দরদি মনের। সবসময় দরিদ্রদের সেবা করতেন। সেই সংসার জীবনে জীবনবাবু কেমন ছিল। তৎকালীন কবিদদের সাথে লেখকের সম্পর্ক কেমন ছিল? প্রাতিষ্ঠানিক আচরণ আর সন্তানের প্রতি তার আচরণ আর তার রসাত্নবোধ সব মিলে কেমন ছিল জীবনানন্দ তার একটা বর্ণনা পাওয়া যায় বই তে। কখনো তিনি দায়িত্ববান ও স্নেহময় পিতা হিসেবে বলেছেন,
“-নব নবীনের লাগি
প্রদীপ ধরিয়া আঁধারের বুকে আমার রয়েছি জাগি! “
কখনো তিনি দেখা দিয়েছেন এক আদর্শ শিক্ষক হিসেবে। কখনোবা নতুন প্রজন্মকে কবিতা শুনাতেন প্রাণভরে।
“কামনার পিছে ঘুরে সাজোনি উদাসী।
ধবল কাশের দলে, আশ্বিনের গগনের তলে
তোর তরে রে কিশোর, মৃগতৃষ্ণা কভু নাহি জ্বলে! “
তপোবন প্রেমিক কবির জীবনে হাসি আনন্দ বেদনা সব মিলিয়ে সাহিত্যজগতে রেখে গেছেন এক অমর দাগ। তাই কবিপত্নী কবির মৃত্যর পর কি ভাবলেন? জানতে চান? জানতে চান একদম কাছ থেকে! বইটি পড়ুন।
আরও পড়ুনঃ মাইকেল মধুসূদন দত্ত জীবনচরিত
একান্ত নিজস্ব মন্তব্যঃ
আমার মতে বাংলা সাহিত্য জগতে যে তিনজন কবি থাকলে সাহিত্যে কবিতার ইতিহাস অন্যরকম হতো তাদের মাঝে সবার আগে জীবনানন্দ। গভীর প্রেমের মাঝেও তিনি নিসঙ্গতা পেয়েছেন।
“তবু এ মৃতের গল্প; কোনো
নারীর প্রণয়ে ব্যর্থ হয় নাই;
বিবাহিত জীবনের সাধ
কোথাও রাখেনি কোন খাদ,
সময়ের উদ্বর্তনে উঠে এসে বধু
মধু-আর মননের মধু , দিয়েছে জানিতে;
হাড়হাবাতের গ্লানি বেদনার শীতে
এ-জীবন কোনদিন কেঁপে ওঠে নাই;
তাই লাশকাটা ঘরে
চিৎ হ’য়ে শুয়ে আছে টেবিলের পরে। “
এমন ভাবটা আসলো কোথা থেকে তা নিশ্চয় একটা বড় প্রশ্ন। যদিও জবাব বইটাতে পাবেন না, তবুও জানতে পারবেন এই ভাবটা যে ধারণ করেছিল সেই মানুষটা কেমন ছিল। বইটা ভালো লাগার কারণ:
- ভাষাগত দিকটা খুবই স্বতঃস্ফুর্ত, খুব কম শব্দে ভাবটা সাবলীলভাবে ফুটে ওঠেছে।
- বইটা প্রথম পুরুষে রচিত হলেও এটা পুরোপুরি রোজনামচা ধরনের হয়ে যায়নি আবার একেবারে নিরস কিছু হয়ে যায়নি।
আরও পড়ুনঃ জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা সমগ্র PDF রিভিউ
যাহোক, আমার বইটার সবচেয়ে প্রিয় অংশ শেষের কয়েকটা পেইজ আর সাথে দেয়া জীবনানন্দের কবিতার অংশবিশেষ। যার সব মিলিয়ে জন্ম হলো একটা ” মানুষ জীবনানন্দ “
একদম শেষে আমার খুব প্রিয় একটা কবিতার অংশবিশেষ দিলাম:
“শেষ হ’ল জীবনের সব লেনদেন,
বনলতা সেন।
কোথায় গিয়েছ তুমি আজ এই বেলা
মাছরাঙা ভোলেনি তো দুপুরের খেলা
শালিখ করে না তার নীড় অবহেলা
উচ্ছ্বাসে নদীর ঢেউ হয়েছে সফেন,
তুমি নাই বনলতা সেন।
তোমার মতন কেউ ছিল কি কোথাও?
কেন যে সবের আগে তুমি চলে যাও।
কেন যে সবের আগে তুমি
পৃথিবীকে করে গেলে শূন্য মরুভূমি
(কেন যে সবের আগে তুমি)
ছিঁড়ে গেলে কুহকের ঝিলমিল টানা ও পোড়েন,
কবেকার বনলতা সেন। “
লিখেছেনঃ Ovro Tiash
বইঃ মানুষ জীবনানন্দ [ Download PDF ]
লেখকঃ লাবণ্য দাশ
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুনঃ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত
জীবনানন্দ দাশ রচনাবলী PDF ডাউনলোড করুনঃ
- ছায়া আবছায়া – জীবনানন্দ দাশ [ PDF ]
- ধূসর পাণ্ডুলিপি – জীবনানন্দ দাশ [ PDF ]
- বেলা অবেলা কালবেলা – জীবনানন্দ দাশ [ PDF ]
- মহাপৃথিবী – জীবনানন্দ দাশ [ PDF ]
- সাতটি তারার তিমির – জীবনানন্দ দাশ [ PDF ]
- কবিতার কথা – জীবনানন্দ দাশ [ PDF ]
- গ্রন্থিত-অগ্রন্থিত কবিতাসমগ্র – জীবনানন্দ দাশ [ PDF ]
- মাল্যবান উপন্যাস – জীবনানন্দ দাশ [ PDF ]
- উপন্যাস সমগ্র – জীবনানন্দ দাশ [ PDF ]
- আলেখ্য জীবনানন্দ – ভূমেন্দ্র গুহ [ PDF ]
- মানুষ জীবনানন্দ – লাবণ্য দাশ [ PDF ]