জহির রায়হান রচনাবলী pdf download রিভিউ | Zahir Raihan Somogro
জহির রায়হান, পুরো নাম মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ। ১৯৩৩ সালের ১৯ই আগস্ট নোয়াখালী জেলায় জন্ম। তিনি হলেন বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সারের অনুজ।
জহির রায়হান ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েও সাহিত্যের ক্ষুধা মেটাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় ভর্তি হন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ছয়। একটি গল্প সংকলন এবং পাঁচটি উপন্যাস- শেষ বিকেলের মেয়ে (প্রথম উপন্যাস), হাজার বছর ধরে, আরেক ফাল্গুন, বরফ গলা নদী এবং আর কত দিন। আবহমান বাংলার শাশ্বত রূপ, খেটে খাওয়া মানুষ, বাংলার মমতাময়ী মা ও নারী ছিলো তাঁর সাহিত্যের উপজীব্য বিষয়।
হয়তো কিছুটা বড় ভাইয়ের প্রভাবেই জহির রায়হান রাজনৈতিক আন্দোলনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ভাষা আন্দোলনের সাথে সরাসরি যুক্ত ছিলেন তিনি। ১৯৫২’ র ভাষা আন্দোলনের ১৪৪ ধারা ভাঙ্গা প্রথম ১০ জনের একজন ক্র্যাক জহির রায়হান। এই ভাষা আন্দোলন তাকে এতোটাই অনুপ্রাণিত করে যে তিনি ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ১৯৭০ সালে ‘জীবন থেকে নেওয়া’ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। চলচ্চিত্রকার হিসেবে এটিই তাঁর শ্রেষ্ঠ কাজ।
আরও পড়ুনঃ জহির রায়হানকে নিখোঁজ করলো কারা?
তিনি শুধু সাহিত্যিক না, ছিলেন একজন গুণী চলচ্চিত্রকারও। উপমহাদেশের প্রথম রঙিন সিনেমা ‘সংগম’ তিনিই তৈরি করেন। বাংলাদেশের প্রথম ইংরেজি ভাষায় চলচ্চিত্র ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ তার নির্মিত। বাংলা চলচ্চিত্র জগতে উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন তিনি। হয়তো একজন চলচ্চিত্রকার হিসেবে বিশ্ব দরবার হতে কুড়িয়ে আনতে পারতেন বিভিন্ন পুরস্কার সম্মাননা। কিন্তু দেশ স্বাধীন হবার পর ঢাকা এসে শোনেন বড় ভাই শহীদুল্লাহ্ কায়সার নিখোঁজ, তখন উন্মাদের মতো খুঁজতে থাকেন ভাইকে।
১৯৭২ সালের ৩০ শে জানুয়ারি এক গোপন খবর পেয়ে ভাইয়ের সন্ধানে তিনি মিরপুরে সার্চ পার্টিতে যান। সেই যাওয়াই ছিল তাঁর শেষ যাওয়া। সেখানেই নিভে যায় বাংলার একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। বাংলা উপন্যাসের ক্ষেত্রে মূল্যবান অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা একাডেমি ১৯৭২ সালে তাঁকে মরণোত্তর একুশে ফেব্রুয়ারি পুরস্কার দানে সম্মানিত করে। জহির রায়হান তাঁর সৃষ্টিকর্মের মধ্যেই আজীবন আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন।
শেষ বিকেলের মেয়ে
কাসেদ। কেরানি। সে ভালোবাসে জাহানারাকে, কিন্তু বলতে পারে না। পুরো বই জুড়ে তার নির্লিপ্ততা রয়েছে। অন্যদিকে নাহার, খালাতো বোন। ছোটবেলায় মা মারা যায়, সে উঠে আসে কাসেদের মায়ের কাছে। তার মনের কোণে জন্ম নেয় কাসেদের প্রতি ভালোবাসা কিন্তু সে কথা কেউ জানে না। উপন্যাসটি মূলত কাসেদকে কেন্দ্র করেই এগিয়ে গেছে। মধ্যবিত্তের টানাপোড়েন ভালো ভাবে ফুটে উঠেছে জহির রায়হানে দারুণ ও সাবলীল বর্ণনায়।
৭৩ পাতার এই বইটা এক বসায় পড়ে ফেলে পাঠক কিছুক্ষণ হাহাকার করবে সে নিশ্চিত করেই বলা যায়।
হাজার বছর ধরে
এই বইটা আমি আমার জীবনে সবচেয়ে বেশি পড়ছি। ম্যাক্সিম গোর্কীর মা এর কাছাকাছি বা এক দুইবার বেশি হতে পারে।
হাজার বছর ধরে মানেই গ্রাম বাংলার চিরায়ত রূপ। কুসংস্কার, বহুবিবাহ, পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা, প্রেম, পরকীয়াসহ আরো অনেককিছুই লেখক কলমের খোঁচায় এই বইতে তুলে ধরেছেন। এই বইটার চরিত্রদের লেখক এমনভাবে চরিত্রয়ান করেছেন যে সবাই বেশ শক্তিশালী। হ্যাঁ, মকবুলকেই আমি এই গল্পের অন্যতম নায়ক। তার দাপটে অন্যরা অনেকাংশেই ম্লান মনে হয়েছে। টুনি যদিও মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে৷ তবুও মকবুলের আধিপত্যই বিরাজমান ছিলো এই বইয়ে। এই বইটা ভীষণ প্রিয়। কতটা প্রিয় বলতে পারবো না।
আরও পড়ুনঃ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত
আরেক ফাল্গুন
ভাষা আন্দোলন হয়ে গেছে তিন বছর আগে। আন্দোলনে শহিদদের জন্য, শহিদ দিবস পালন করতে দেওয়া হবে না। সরকারের নিষেধ। কিন্তু বাংলার অদম্য ছেলেরা তা মানবে কেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা প্রস্তুতি নিতে থাকে। রোজা রাখে শহিদদের জন্য। এভাবেই গল্প এগিয়ে চলে সরল রেখার মতো। জহির রায়হানের রাজনৈতিক চেতনা এখানে অনেকটাই উঠে এসেছে। একটা লাইনে ফুটে উঠেছে লেখকের ক্ষুরদার চিন্তা- আসছে ফাল্গুনে আমরা দ্বিগুণ হবো।
বরফ গলা নদী
মধ্যবিত্তের জীবনের দুঃখ, সুখকে কেন্দ্র করে এই উপন্যাস লেখা। চরম বাস্তবতা ঘেঁষা এই উপন্যাস। পড়া শেষ করে পাঠক অনুভূতি পাবে খারাপ লাগার। নিজের ঐ পরিস্থিতিতে দাঁড় করালে হাহাকার উঠবে বুকের ভেতর। ছোট উপন্যাস। আরাম পাওয়া যায় পড়ে।
লিখেছেনঃ Habiba Kamrun Shia ও Monowarul Islam
বইঃ উপন্যাস সমগ্র / রচনাবলী [ Download Part 1 ] [ Download Part 2 ]
লেখকঃ জহির রায়হান
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
জহির রায়হানের অন্যান্য বইসমূহ