Skip to content
Home » নব্বই দশকের শৈশব স্মৃতি ও এক প্রজন্মের কথা

নব্বই দশকের শৈশব স্মৃতি ও এক প্রজন্মের কথা

    নব্বই দশকের শৈশব
    Redirect Ads

    VCR, VCD, DVD তে সিনেমা দেখার যুগ নাই বললেই চলে.. ৫০ পয়সার মতো হাওয়া হয়ে গেছে সিডি,ক্যাসেটের দিন গুলি.. মাঝে মাঝে ৫০ পয়সা চোখে পড়লেও না দেখার ভান করে ছুড়ে ফেলি টেবিলের কোথাও.. অথচ নব্বই দশকের শৈশব কালে ৫০ পয়সায় একটা বার্মিজ আচার হতো..।

    একদিন হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে শুনি youtube, torrent, IDM দিয়ে মুভি নামানো যায়.. সেই দিনই বুঝে গেছি বড় হয়ে গেছি.. বড্ড বেশি ঘুমিয়ে ফেললাম!! এখন আর “Mostofa” ভিডিও গেম খেলার সময় নেই.. আর কক্সবাজার এর আচার দেখলে “আমি খাবো আমি খাবো” করার সময় নেই..

    Download

    VCD তে “Baby’s Day Out” ছবি দেখতাম, ৪২০ নাটক দেখতাম.. সিডিতে ছবি দেখার মজা এখন আর পাই না.. ছবি দেখবো সেটা কেমন খুশির খবর ছিলো বলে বুঝানো সম্ভব না.. ৪২০ নাটকের ফুল সিরিজ সিডি ভাড়া এনে দেখে মনে হলো রাজনীতি অর্ধেক বুঝে গেছি, আসলে কিছুই বুঝে নি তখন.. দুটো পর্বের সিডি একসাথে নিলে ৫ টাকা কম রাখতো…

    মন্তু-টুনি, ফটিক, হৈমন্তী, বিলাসী বিহীন একটি হাহাকার প্রজন্ম ও আমাদের পাঠ্যবই

    মাটির ব্যাংক ভেঙে ভেঙে কয়েন চুরি করে জুস, চুইংগাম, চিপস কত কি খেয়ে দিন গুলো পার করেছি… ক্যাসেট প্লেয়ারে আম্মুর সাথে বসে রবীন্দ্র সংগীত পর্যন্ত শুনতাম.. আম্মুর প্রিয় গান ছিলো, “কাটে না সময় যেনো আর কিছুতেই, বন্ধুর টেলিফোনে মন বসে না…”

    কাজের ফাঁকেফাঁকে আম্মু সুর করে গাইতো.. রান্নাঘরে বই একটা নিয়ে বসে বসে পড়তাম.. চুলায় ডাল বাঘায় দিতো আম্মু, রসুন পেয়াজ গরম করে ডালের উপর ঢেলে দিতো… বিকেলে খালার বাসায় ক্রিকেট খেলতে যেতাম কিংবা পাড়ার মাঠে.. ছোট জায়গায় খেলতাম বলে, জোরে মারলে বল মাঝে মাঝে জায়গায় এসে লাগতো… সবাই বলতো,
    “নাক চেপে মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নিলে ব্যথা কম লাগবে”
    কিছুক্ষন পর ব্যথা করলে আবার খেলা শুরু..

    Download

    কখনো ছাদে, কখনো বারান্দায় কখনো স্কুল মাঠে…ব্যাট বল নিয়ে ছুটতাম… এখন ছুটার জায়গা আছে কিন্তু খেলার কেউ নেই… সবাই বড় হয়ে গেছে, সবার ভাব এখন… স্কুলের, কলেজের রিইউনিয়নে আসে না কেউ… আজ প্রায় ৩/৪ বছর কোন খেলা নেই… ভিডিও গেম খেলা ছাড়ছি প্রায় ৩ বছর.. খেলতে ঢুকলে পিচ্চিরা বলতো ‘সিনিয়র ভাই আসছে”…

    আরও পড়ুনঃ জনপ্রিয় ও সেরা ৫০ বই PDF রিভিউ

    Double Dragon গেমসের last boss ‘শুক্কু’ কে যে কত বার মারছি সত্যি মনে নেই… কত স্কুল ফাঁকি দিলাম, কত শুক্রবার বাসার সবার সাথে ঘুড়তে বের হতাম… শেষবার বায়েজিদ বোস্তামী যাওয়ার কথা ছিলো.. সেই দিনও শুক্রবার ছিলো, বৃষ্টি হলো বলে বের হতে পারলাম না, বাসায় বসে চোখের পানি ফেললাম… সেই বায়েজিদ বোস্তামী আজও যাওয়া হলো না…এখন বুঝি প্ল্যান করে কোথাও যাওয়া যায় না.. যেতে হয় হুট করে.. হোক ঝড়, হোক বৃষ্টি.. ইচ্ছাই অনেক কিছু…

    আমাদের বাংলা সিনেমার কাহিনী সব মুখস্থ থাকতো, তাও বার বার দেখতাম.. কখনো পেয়ারা থাকতো, কখনো আমড়া, কখনো তেতুল ভর্তা.. আমলকি, গাছের লেবু.. আয়োজন করে বসতাম.. captain planet, godzilla, justice league, pokemon, naruto, power ranger আরো কত কার্টুন দেখতাম..

    Download

    শুক্রবার বাবার হাত ধরে যে কত মসজিদে গেছি আমরা..আব্বুর হাত খসখসে ছিলো.. আমি আব্বু কে বলতাম “তোমার হাত খসখসে, কেমন জানি”.. আব্বু বলতো,
    “বয়স হলে এমন হয়”
    আমার হাতও একদিন খসখসে হবে। আমাকেও আমার ছেলে কোন এক জুমার দিন বলবে, বাবা তোমার হাত খসখসে কেন!!
    কি জবাব দেবো আমি? কি জবাব দেবো আমরা?
    বড় হয়ে গেছি?

    আরও পড়ুনঃ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত

    মাঝে মাঝে মনে হয় কেনো বড় হলাম!! কেনো সেই দিন আরেকটু নাক চেপে নিঃশ্বাস নিলাম না, তাহলে হয়ত আরো কিছুক্ষন খেলতে পারতাম.. কেনো শুক্রবার বার বার আসে কিন্তু ওই শুক্রবার গুলো আসে না? কেনো এখন আর সবার সামনে কাঁদতে পারি না!! কেনো আড়াল হলেই বালিশ ভিজে আমাদের!!
    মানুষ গুলোই কি যান্ত্রিক হয়ে গেছে?
    নাকি শহরটাই যান্ত্রিক হয়ে গেছে?

    যে আমরা দেড়টাকে সাড়ে একটা বলতাম, আড়াইটা কে সাড়ে দুইটা বলতাম সে আমরাই এখন ঘড়ি দেখারই সময় পাই না!! চুলায় ডাল বাঘাত দেয় আম্মু, তাও দেখার সময় নেই… ক্যাসেট প্লেয়ারে শুনতে ইচ্ছে করছে,
    “কাটে না সময় যেনো আর কিছুতেই, বন্ধুর টেলিফোনে মন বসে না…”

    Download

    লিখেছেনঃ Hasanul Banna

    ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

    রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট গল্প সমগ্র

    Facebook Comments
    Tags:
    x
    error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করুন