বইয়ের নাম- ক্ষণিকা
কবি- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
জনরা-কবিতা
পৃষ্ঠা-৯৫
মূল্য-১২৫
রবীন্দ্রকাব্য লিরিক প্রধান। ক্ষণিকা কাব্য সে লিরিকের চূড়ান্ত। ক্ষণিকার প্রকাশ কাল ১৯০০।
ক্ষণিকায় কবি একেবারে লোকালয়ে প্রবেশ করেছেন। অন্যান্য কাব্যের মতো এটা জীবনদেবতা বা ভারতের প্রাচীণ সৌন্দর্যমন্ডিত নয়। এখানে, বর্তমানের নিরাসক্ত জীবনের মুহূর্তগুলিকে দেখিয়েছেন কবি। জীবনের বিচিত্রতাই মূলত ক্ষণিকা। কোনটা সুখ, কোনটা দুঃখ, আশা নৈরাশ্য, বিরহ, মিলন একই সাথে রচিত। যদিও এ প্রবাহ রবীন্দ্রনাথে পাওয়া যায় নি। তবে পথের বাঁকে বাঁকে শক্তির নতুন নতুন বিষ্ময়ের সাথে মুগ্ধ করাতেই কবির প্রতিভার পরিচয়।
জীবনকে সহজভাবে দেখবার এই দৃষ্টি এটাই প্রথম নয়। জীবনের ঘটনা যতক্ষণ ভাবরূপ না পায় ততক্ষণ তাহা কবিকে কাব্যপ্রেরণা দেয়না। এটাই ক্ষণিকার মূল কথা।
ক্ষণিকার কবিতা গুলিকে কয়েকটি ধারায় ভাগ করা যায়। যেমন-
- মানুষ প্রধান
- প্রকৃতি প্রধান
- ক্ষণিকার ব্যতিক্রম ও জীবনদেবতা।
আরও পড়ুনঃ সোনার তরী কাব্যগ্রন্থ বিশ্লেষণ PDF
মানুষ প্রধান ভাগে কবির নিজের কথাও আছে। তা ছাড়া প্রথম কবিতা উদ্বোধন। এতে ক্ষণিকার মূল সুরটি প্রতিস্থাপিত। কবি বলেন,
যে সহজ তোর রয়েছে সমুখে
আদরে তাহারে ডেকে নে রে বুকে,
আজিকার মতো যাক্ যাক্ চুকে
যত অসাধ্য-সাধনি।”
কবি “সেকাল” কবিতাটিতে কালিদাসের কালে জন্মগ্রহন করলে তিনি কেমন হতেন, কিভাবে জীবন যাপন করতেন তার চিত্র এঁকেছেন।
“মাতাল” কবিতায় কবি সকল বাধা উপেক্ষা করে সমস্ত নিয়ম নীতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, বিচার বিতর্কের তোয়াক্ষা করে সংসারে আবদ্ধ বিবেচক গতীহীন পুরুষ না হয়ে, চিরদিনের অভ্যস্থ পথ পরিত্যগ করে নতুন জীবনের আনন্দ পেতে চান।
আরও পড়ুনঃ চোখের বালি আলোচনা PDF রিভিউ
“বোঝাপড়া” কবিতায় বলেন, সংসারে পরিপূর্ণতা আশা করা যায় না। জীবন ভালোর সাথে মন্দ মিশ্রিত। সুখের সাথে দুঃখ জড়িত।
দুঃখ নিয়া বেশি ঘাটাঘাটি করলে ক্ষত বেশি বাড়ে। তার থেকে মেনে নেওয়া ভালো।
” মনেরে তাই কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক
সত্যেরে লও সহজে।”
“অচেনা” কবিতায় প্রায় বোঝাপড়ার মতোই। সংসারে মানুষের ব্যবহারে আমরা যা পাই তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকা উচিৎ। মানুষের মন খুটতে না যাওয়াই ভালো। কেন না অনেক সময় তাতে সত্য না থেকে থাকে শুধু বিড়ম্বনা।
“চাই নে রে মন চাই নে।
মুখের মধ্যে যেটুকু পাই
যে হাসি আর যে কথাটাই
যে কলা আর যে ছলটাই
তাই নে রে মন তাই নে।”
আরও পড়ুনঃ বিলাসী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় PDF
“অনবসর” কবিতায় কবি বলেন, যে প্রেম বর্তমান থেকে অতীতে চলে যায় তার অতীত স্মৃতিচারন করে চোখের জল ফেলা, পুজা করা বৃথা। কারন বর্তমান নিয়েই মানুষের জীবন।
“যে যায় চলে বিরাগভরে
তারেই শুধু আপন জেনেই
বিলাপ করে কাটাই, এমন
সময় যে নেই, সময় যে নেই।”
“উদাসীন” কবিতায় কবি জীবনের সহজটাকে উপভোগ করতে চান।
“এতদিন পরে ছুটি আজ ছুটি,
মণি ফেলে তাই ছুটছি।”
একেই কি বলে সভ্যতা ও বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ প্রহসন রিভিউ PDF
“শেষ” কবিতায় জীবনের ক্ষণিক আনন্দ ব্যক্ত হয়েছে। সৃষ্টি মানেই ধংস্ব। জীবন মানেই মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর তাই, ক্ষণস্থায়ী জীবনে যতটা ভালো থাকা যায়।
“দুইতীর” কবিতায়, বাংলার দুইতীরের চমৎকার ছবি এঁকেছেন। কূলে কবিতায় নদীর ভাঙন ধরা কূলে কবি বসে আছেন।
ক্ষণিকাতে কবি প্রথম কথ্য বাংলা ভাষা ব্যবহার করেন। এবং এতে আশ্চর্য ভাবপ্রকাশের ক্ষমতা প্রমাণ করেন। ক্ষণিকা রবীন্দ্রনাথের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। গত জীবনের সুখ দুঃখ নিয়ে না ভেবে বর্তমানে কি আছে এটা নিয়ে ব্যস্ত হওয়া উচিৎ। ক্ষণকালের জীবনকে উপভোগ করার জন্য। ক্ষণিকার ভাবার্থ এটাই।
লিখেছেনঃ ফেরদৌসি রুমী
বই: ক্ষণিকা [ Download PDF ]
লেখক: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন্যান্য রচনা সমগ্র PDF Download