বইয়ের নামঃ মেঘনাদবধ কাব্য
লেখকঃ মাইকেল মধুসূদন দত্ত
“মেঘনাদবধকাব্য” পড়ব এ ইচ্ছা আমার বহুদিনের। আজ পূরণ হল তা বলা যাবে না। কারন আমি মূল কাব্যটি পড়িনি। হায়াত মামুদের সরলীকৃত গদ্যে রূপান্তরিত টা পড়েছি।
যদিও কাহিনীর শেষে মেঘনাদ মারা যায়, তবুও এ উপাখ্যানের নায়ক যে মেঘনাদ তা নাম দেখলেই বোঝা যায়। মধুসূদন দত্তের মত আমিও মেঘনাদের অকাল ও অন্যায় মৃত্যুতে ব্যথিত।
আরও পড়ুনঃ মাইকেল মধুসূদন দত্ত জীবনচরিত
কাহিনী সংক্ষেপঃ
অযোধ্যার রাজার নাম দশরথ। তার তিনশ এর অধিক স্ত্রী। কিন্তু এত রাণীর মাঝে তিন রাণী ছিলেন রাজার সবচেয়ে কাছের। কৌশল্যা, কৈকেয়ী ও সুমিত্রা। কৌশল্যা র পুত্রের নাম রাম, কৈকেয়ী র ভারত। সুমিত্রা র জমজ সন্তান, লক্ষণ ও শত্রুঘ্ন। রাণী কৈকেয়ী আবার রাজার কাছে দুটো বর পেতেন। কোন কারনে রাজা খুশি হয়ে রানীকে দুটো বর দিতে চেয়েছিলেন।
রাজা দশরথের বয়স হলে রাজা চাইলেন রামকে সিংহাসনে বসাবেন। এদিকে রানী কৈকেয়ী র ইচ্ছা তার পুত্র ভারতই হোক রাজা। তাই এতদিনে তিনি রাজার কাছে তার পাওনা বর দুটি চাইলেন।
- এক, রামকে চৌদ্দ বছরের জন্য বনবাসে পাঠানো হোক।
- দুই, ভারতকে সিংহাসনে বসানো হোক।
রাজা অনিচ্ছা সত্বেও তাই করলেন। এদিকে রামের স্ত্রী সীতা ও ছোট ভাই লক্ষণ রামকে একা ছাড়বেন না। তাই সকলের বাধা নিষেধ সত্বেও তারা রামের সংগী হলেন। শুরু হল রামের বনবাস।
আরও পড়ুনঃ কপালকুন্ডলা PDF বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
রাক্ষসদের এক দেশ। দেশের নাম লঙ্কা। সেই দেশের রাজার নাম রাবণ। তার দশটি মাথা, বিশটি হাত। তার আরো দুই ভাই আছে কুম্ভকর্ণ ও বিভীষণ। আরেকটি আছে বোন শূর্পণখা। রাবণ সবাইকে অনেক স্নেহ করেন।
এই শূর্পণখা একদিন লঙ্কা ছেড়ে জঙগলে বেড়াতে গেলে রামের সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু রাম নারাজ। অপরূপা সুন্দরী স্ত্রী সীতাকে রেখে কুৎসিত রাক্ষসী র প্রেমে পড়ার কোন মানে হয়? এদিকে লক্ষণ এই কাহিনী জানতে পেরে ভাইয়ের অপমান সহ্য করতে না পেরে রাগে শূর্পণখা র নাক কেটে দেয়। শূর্পণখা তার ভাই রাবণের কাছে বিচার দিলে সে অত্যন্ত রাগান্বিত হয়। এবং প্রতিশোধ নেয়ার জন্য নানান ছলে সীতাকে ধরে নিয়ে আসে লঙ্কাপুরীতে। শুরু হয় রাম আর রাবণের যুদ্ধ।
আরও পড়ুনঃ ক্রীতদাসের হাসি পিডিএফ রিভিউ
এখান থেকেই মূলত মেঘনাদবধ কাব্যের শুরু।
যুদ্ধে মেঘনাদের চাচা কুম্ভকর্ণ ও মেঘনাদের ভাই বীরবাহু সম্মুখযুদ্ধে নিহত হয়। এবং তার আরেক চাচা বিভীষণ আপন ভাই রাবণের পক্ষে না গিয়ে রামের পক্ষে যোগ দেয়। ঘরের শত্রু বিভীষণ।
মেঘনাদ অত্যন্ত পরাক্রমশালী যোদ্ধা। তার সাথে যুদ্ধ করতে রাম লক্ষণ এমনকি দেবতারাও ভয় পায়। সে ইন্দ্রজিৎ। ইন্দ্রের সাথে যুদ্ধ করে ইন্দ্রকে হারিয়ে দিয়েছে। এই মেঘনাদ মারা যায় মূলত দেব দেবীর ষড়যন্ত্রে।
দেবী দূর্গার মায়াজালে লক্ষণ লুকিয়ে লঙ্কার রাজমহলে প্রবেশ করে। তাকে পথ দেখায় ঘরের শত্রু বিভীষণ। মেঘনাদ লক্ষণ কে নিকম্ভিলা যজ্ঞাগারে দেখে ভীষণ অবাক হয়ে জানতে চায় সে এত এত পাহারাদারের চোখ লুকিয়ে কিভাবে ভেতরে এল! তখন সে দরজার ওপাশে বিভীষণ কে দেখে বুঝতে পারে কিভাবে লক্ষণ রাক্ষসপুরী তে এল।
মেঘনাদ যখন বিভীষণকে তিরস্কার করছিল তখন লক্ষণ পেছন থেকে তীর মেরে মেঘনাদ কে ঘায়েল করে তারপর তরবারি দিয়ে অন্যায় ভাবে কাপুরুষের মত তাকে হত্যা করে। মেঘনাদ তখন নিকম্ভিলা যজ্ঞাগারে পূজা করছিল তাই তার হাতে কোন অস্ত্র ছিল না। সে অস্ত্রাগারে অস্ত্র আনতে যেতে চাইলে তার “চাচ্চু” বিভীষণ তাকে বাধা দেয়।
আরও পড়ুনঃ কৃষ্ণকুমারী নাটক PDF রিভিউ মধুসূদন দত্ত
আমার মতে মেঘনাদের এই মৃত্যুর পেছনে দুই নারী দায়ী।
এক, তার ফুপু শূর্পণখা। (তার কথা আগেই বলেছি)
দুই, দেবী দূর্গা।
রাবণ দূর্গার স্বামী মহাদেব এর পূজা করত। মহাদেব ও তাকে খুব স্নেহ করত। ফলে রাবণ বা মেঘনাদ যদি মহাদেবের কৃপা পেত বা মহাদেব যদি দেবতাদের ষড়যন্ত্র না করতে দিতেন তবে যুদ্ধে মেঘনাদকে হারানো ছিল অসম্ভব। কিন্তু দেবী দূর্গা মহাদেবকে অনুরোধ করেন তিনি যেন রাবণ কে কৃপা না করে রামকে করেন। ফলাফল-অন্যায় ভাবে মেঘনাদের মৃত্যু।
এত সুবিধা পেয়েও কিন্তু রাম যুদ্ধে মরে দুইবার ও লক্ষণ একবার। এবং প্রতিবার মায়াবলে দেবী তাদের জীবন ফেরত দেন।
আরও পড়ুনঃ হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি বইয়ের রিভিউ পিডিএফ
দোষ রাবণ, শূর্পণখা কিংবা রাম যেই করুক না কেন শাস্তি ভোগ করল মূলত আপাত দৃষ্টিতে নিষ্পাপ মেঘনাদ ও সীতা।
মেঘনাদ তো মারাই গেল। সীতা দুইবার শাস্তি পেয়েছে বা বলা যায় অপমানিত হয়েছে।
এক, লঙ্কাপুরীতে বন্দী হয়ে।
দুই, স্বামীর কাছে ফেরত গিয়ে সতীত্বের অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে।
এই জানা কাহিনীটিই মাইকেল মধুসূদন দত্ত এমন সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন, আমার পক্ষে ব্যাখ্যা করা মুশকিল। আরো বর্ননা দিয়েছেন অসম্ভব সুন্দর লঙ্কা রাজ্যের, দিয়েছেন বিভিন্ন সময় রাম ও রাবণের যুদ্ধের, দিয়েছেন স্বর্গ লোকের বিবরণ, দিয়েছেন মেঘনাদের স্ত্রী প্রমীলার রূপের বিবরণ ও স্বর্গের অন্যন্য অপ্সরী দের মায়াবী রূপের বিবরণ।
আরও পড়ুনঃ নীল দর্পণ বই রিভিউ দীনবন্ধু মিত্র PDF
মেঘনাদবধ কাব্য যেন সেই মায়ামৃগ আর পাঠকেরা সবাই সীতা। বর্তমান পাঠকদের কাছে মূল মেঘনাদবধ কাব্য যতই দূরুহ হোক না কেন কোন মায়াজালে তা যেন আমাদের চুম্বকের মত টানে। সোনার হরিণের জন্য সীতা যেমন উতলা হয়েছিলেন, ঠিক তেমনি এ কাব্যের প্রকৃত রস আস্বাদনের জন্য আমরাও যেন সীতা হয়ে যাই। দু চোখজুড়ে চকচক করে সোনার হরিণ জয়ের লোভ। উচ্চমাধ্যমিক বাংলা বইয়ে এই কাব্যের সামান্যাংশ পড়ে যতই কঠিন লাগুক না কেন, দাঁত যে কয়টা ভাঙুক না কেন রবী ঠাকুরের সুরে বলতে ইচ্ছে করে-
“তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই,
মন হরণ চপল চরণ সোনার হরিণ চাই।”
এবং লক্ষ্য অটুট থাকলে সে মায়ামৃগ যতই জোড়ে ছুটুক না কেন – নাগাল পাওয়া যায়। মহাকাব্যের কাহিনী বুঝি এমনি হয়! যদিও সরল গদ্যে কাহিনী পড়েছি, তবুও মুগ্ধ হয়েছি বারবার। আশারাখি একদিন সাহস করে মূল কাব্যটি পড়ে আমার পাঠকজনম স্বার্থক করতে পারব।
লিখেছেনঃ Abdullah Al Mamun
বইঃ মেঘনাদবধ কাব্য [ Download কাব্য ] | [ Download গদ্য ]
লেখকঃ মাইকেল মধুসূদন দত্ত
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
জনপ্রিয় ও সেরা কিছু বই PDF Download রিভিউ | যে বই গুলো সবার পড়া দরকার