বইয়ের নাম- সোনার তরী
কবি- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
জনরা- কাব্যগ্রন্থ
পৃষ্ঠা- ১২৩
মুল্য- ১২৫
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সোনার তরী কাব্যগ্রন্থের প্রকাশকাল ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দ। কাব্যগ্রন্থটি কবি দেবেন্দ্রনাথ সেনের প্রতি উৎসর্গিত। সমগ্র গ্রন্থটি বাংলা কাব্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রোম্যান্টিক কাব্য সংকলন। রবীন্দ্রনাথের নিজের ভাষায়,
“আমার বুদ্ধি এবং কল্পনা এবং ইচ্ছাকে উন্মুখ করে তুলেছিল এই সময়কার প্রবর্তনা, বিশ্বপ্রকৃতি এবং মানবলোকের মধ্যে নিত্য সচল অভিজ্ঞতার প্রবর্তনা। এই সময়কার কাব্যের ফসল ভরা হয়েছিল সোনার তরীতে।”
কাব্যের শুরু নাম কবিতা “সোনার তরী” দিয়ে আর শেষ হয়েছে “নিরুদ্দেশ যাত্রা” দিয়ে। কবিতা দুটি ভিন্নমুখী দুটি ধারার প্রতীক।
সোনারতরী কাব্যের জন্মের একটা গল্প আছে। তাহলো, রবীন্দ্রনাথের উপর জমিদারী তদারকির ভার পড়ে। তাই তাকে শিলাইদহ, শাহজাদপুর, কালিগ্রাম, পতিসর প্রভৃতি স্থানে তার বাস করতে হত। বাংলার উদ্দোম এই পল্লী প্রকৃতির সৌন্দর্য অনুভব করার প্রয়াশ পান। এভাবে পল্লীর সৌন্দর্যের সাথে পল্লীর জনমানুষের খুটিনাটিও তিনি জানতে বা চিনতে পেরেছিলেন। তাদের ছোট ছোট দুঃখ, কষ্ট, হাসি আনন্দের কাহিনী গুলোর সাথে তার পরিচয় হয়। সকাল, দুপর, বিকাল পদ্মার নির্জন চরে বোটে বসে তিনি প্রকৃতির মনোরম সুধা পান করতেন।
এতটা কাছ থেকে এবং এতটা নিবিড় ভাবে প্রকৃতি এই প্রথম জমিদার পুত্রের কাছে ধরা পড়লো। তিনি এবারই প্রথমবার প্রবল ভাবে প্রকৃতিকে ভালোবাসিয়াছিলেন। প্রকৃতির রূপ রস গন্ধ সব কিছু তার কাছে অনন্য হয়ে ধরা দিলো। তিনি এমন ভাবে একাত্মতা বোধ করলেন যে মনে হলো “সৃষ্টির আদিম যুগ হইতে তিনি মাটির সহিত মিশিয়া আছেন”।
আরও পড়ুনঃ চোখের বালি আলোচনা PDF রিভিউ
সোনার তরী বিশ্লেষণঃ
সমগ্র সোনার তরী কাব্যটি বিশ্লেষণ করলে, বেশ কয়েকটি ধারার কবিতা পাওয়া যায়।
১. প্রকৃতি আর মানুষের অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য্য, যা কোন কল্পনার বিষয় নয়। আর এই সৌন্দর্যকে রূপকের সাথে কবি প্রকাশ করেছেন – সোনারতরী, পরশ পাথর, আকাশের চাঁদ, দেউল, দুই পাখী প্রভৃতি।
পদ্মার চর পানিতে প্লাবিত হয়েছে। চাষারা নৌকা বোঝাই করে কাঁচা ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছে আর হাহুতাশ করছে। কেন না আর কয়েকদিন থাকলেই ধান গুলো পাকা হয়ে উঠত। এই কাচা ধান এখন কি করবে। কৃষকের এই অসহায় চিত্র ধরা পড়েছে কবির এই কাব্যের নাম কবিতা সোনার তরী -তে।
“গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা।
কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।
রাশি রাশি ভারা ভারা ধান কাটা হলো সারা,
ভরা নদী ক্ষুরধারা খরপরশা-
কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা।।”
মন্তু-টুনি, ফটিক, হৈমন্তী, বিলাসী বিহীন একটি হাহাকার প্রজন্ম ও আমাদের পাঠ্যবই
২. সংসারকে সত্যভাবে গ্রহন ও ধরনীর প্রতি ভালোবাসা -মায়াবাদ, খেলা, গতি, মুক্তি, অক্ষমা, দরিদ্রা, আত্মসমর্পণ, বৈষ্ণব কবিতা, গানভঙ্গ প্রভৃতি।
“গাহিছে কাশীনাথ নবীন যুবা ধ্বনিতে সভাগৃহে ঢাকি,
কন্ঠে খেলিতেছে সাতটি সুরর সাতটি যেন পোষা পাখি।” (গানভঙ্গ)
৩. বিশ্বের সাথে একাত্মতা, বিশ্বসৌন্দর্য, রহস্যের অনুভূতি – সমুদ্রের প্রতি, বসুন্ধরা, বিশ্ব নৃত্য, মানস সুন্দরী, নিরুদ্দেশ যাত্রা।
“নিখিলের সেই
বিচিত্র আনন্দ যত এক মুহূর্তেই
একত্রে করিব আস্বাদন, এক হ’য়ে
সকলের সনে” -(বসুন্ধরা)
আরও পড়ুনঃ হৈমন্তী গল্প PDF Download রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
৪. মানুষের প্রেম প্রকাশিত হয়েছে- ভরা ভাদরে, প্রত্যাখ্যান, লজ্জা, ব্যর্থ-যৌবন, হৃদয় যমুনা, দুর্বোধ প্রভৃতি।
“এসেছ তুমি গলায় মালা ধরিয়া,
নবীনবেশে শোভন ভূষা পরিয়া
হেথায় কোথা কনক থালা, কোথা ফুল, কোথায় মালা-
বাসর সেবা করিবে কেবা রচনা!” -(প্রত্যাখ্যান)
৫. মৃত্যু বিষয়ক-প্রতীক্ষা, ঝুলন।
“ওগো, পবনে গগনে সাগরে আজিকে কী কল্লোল!
দে দোল্ দোল্ ” -( ঝুলন)
৬. রূপকথা-বিম্ববতী, রাজার ছেলেও মেয়ে, নিদ্রিতা, সুপ্তোত্থিতা।
“ঘুমের দেশে ভাঙিল ঘুম, উঠিল কলস্বর।
গাছের শাখে জাগিল পাখি, কুসুমে মধুকর।” -(সুপ্তোত্থিতা)
আরও পড়ুনঃ কপালকুন্ডলা PDF বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
৭. হিন্দু ধর্মের বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যার প্রতি বিদ্রুপ -হিংটিং ছট্
“হবুপুর রাজ্যে আজ দিন ছয়-সাত
চোখে কারো নিদ্রা নাই, পেটে নাই ভাত।
শীর্ণ গালে হাত দিয়া নত করি শির
রাজ্য সুদ্ধ বালবৃদ্ধ ভেবেই অস্থির।”
সোনারতরী কাব্যে প্রকাশ ঘটেছে মানুষ ও পৃথিবীর সৌন্দর্য। বিশ্বকে তিনি সমগ্রভাবে উপভোগ করেছেন। এবং অনুভব করেছেন। এই বিশ্ববোধ ও বিশ্বের সৌন্দর্য ও রহস্যের সুতীব্র অখন্ড অনুভূতি হলো সোনারতরী কাব্যের মূল সুর। কাল্পনিক জীবনের ব্যর্থতা ও প্রকৃত বিশ্বসৌন্দর্য্যের অনুভূতি সোনার তরীর প্রধান বৈশিষ্ট্য।
“শুন্য নদীর তীরে রহিনু পড়ি-
-(সোনার তরী)
যাহা ছিলো নিয়ে গেলল সোনার তরী।।”
লিখেছেনঃ ফেরদৌসি রুমী
বই: সোনার তরী [ Download PDF ]
লেখক: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন্যান্য রচনা সমগ্র PDF Download