বইঃ চোখের বালি
লেখকঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
‘চোখের বালি’ সম্ভবত বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস। এই উপন্যাসে পারস্পরিক সম্পর্ক, বন্ধুত্ব- বিরোধ , ভালোবাসা, দ্বন্দ – মিলন, মানবচরিত্রের এই বিষয়গুলো খুব সুন্দর ভাবে ফুঁটিয়ে তোলা হয়েছে। এই উপন্যাসের একটা মূখ্য বিষয় হলো, এখানের প্রতিটা চরিত্রই যেনো সমানভাবে পাঠকের মনে আন্দোলিত করেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেই এই উপন্যাসের ব্যাপারে বলেছিলেন,
“আমার সাহিত্যের পথযাত্রা পূর্বাপর অনুসরণ করে দেখলে ধরা পড়বে যে ‘চোখের বালি’ উপন্যাসটি আকস্মিক, কেবল আমার মধ্যে নয়, সেদিনকার বাংলা সাহিত্যক্ষেত্রে।”
এম.এ পাস করে ডাক্তারিতে ভর্তি হওয়া মহেন্দ্র বরাবরই ছিলো বিয়ে বিমুখ, মায়ের স্নেহছায়াতেই ছিলো তার আশ্রয়। মহেন্দ্রর পরম বন্ধু ছিলেন বিহারী, যে কিনা আশৈশব মহেন্দ্র কে দাদা আর তার মাকে মা বলেই জেনে আসছেন। তারই পাত্রী দেখার সময়ে প্রথম চরিত্র হিসেবে ধরা দেয় আশালতা, ঘটনার পরিক্রমায় আশা – মহেন্দ্রর বিবাহ সম্পন্ন হয়, শুরু হয় তাদের নিরবচ্ছিন্ন ভালোবাসাময় দাম্পত্য জীবন।
এদিকে রাজলক্ষ্মী তার ছোটবেলার সখীর সদ্য বিধবা যুবতী কন্যা বিনোদিনীকে তার ঘরে আশ্রয় দেয়। অল্পদিনের মধ্যেই বিনোদিনী তার রূপ-যৌবন, কাজের দক্ষতা, কর্তব্যপরায়ণতা ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বাড়ির সকলের মন জয় করে নিল। আশালতার সাথে বিনোদিনীর ঘনিষ্ঠতা বেশ জমে উঠলো এবং নিজেদের সম্পর্ককে “চোখের বালি” নাম রাখলো। শ্রুতিমধুর নামের পরিবর্তে আদরের এই গালিটিই বিনোদিনীর পরামর্শে তারা গ্রহণ করলো।
আরও পড়ুনঃ শেষের কবিতা উপন্যাস রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর PDF রিভিউ
মহেন্দ্র নববধূ আশালতাকে সংসারধর্মের সকল কর্ম থেকে বিরত রেখে সবসময় একান্তে নিজের কাছে আগলে রাখতো। মহেন্দ্রর এই অতি বাড়াবাড়িই তার মায়ের ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। রাজলক্ষ্মীর আশালতার প্রতি ঈর্ষাই যেন বিনোদিনীকে মহেন্দ্রর আরো কাছে টেনে দিলো এবং তাদের মধ্যকার অবৈধ সম্পর্ক গড়তে ইন্ধন জোগালো।
অন্যদিকে অনাথা ও সরলা আশালতার প্রতি বিহারীর দূর্বলতা বিনোদিনীর চোখে স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়ে। মহেন্দ্র, বিহারী উভয়েরই বিনোদিনীর দিকে নয় বরং আশালতার দিকে নজর, এই বিষয়টিই বিনোদিনীকে বেশি বিদ্ধ করতে থাকে, এই প্রশ্নটা বিনোদিনীর ভিতরকার ঈর্ষাকে বাড়িয়ে দিতে থাকে। কিন্তু উপন্যাসে কাহিনীর আবর্তে একসময় দেখা যায় পরবর্তীতে মহেন্দ্র যখন সকল দ্বিধা কাটিয়ে সবাইকে ছিন্ন করে শুধু বিনোদিনীকে একা কাছে পেতে চাইল তখন বিনোদিনী মহেন্দ্রর কাছে নিজেকে ধরা না দিয়ে বিহারীর দিকে চেয়ে রইল।
কিন্তু বিহারী কি তার মনে বিনোদিনীকে স্থান দিলো? মহেন্দ্র কি পাবে তার কাঙ্খিত বিনোদিনীকে? আশালতা কি তার স্বামীর পূর্ব ভালোবাসা ফিরে পাবে? যে আশালতা একসময় নিরবচ্ছিন্ন প্রেমময় জীবনেই একটুকু বৈচিত্র্যের আশায় সম্পূর্ণ বিশ্বাসে ও আন্তরিকতায় বিনোদিনীর সাথে এতো বন্ধুর সম্পর্ক গড়ে তুললো সেই বিনোদিনীই যে তার জীবনে ঝড়ের কারন হয়ে রইলো! সম্পর্কের এই টানাপোড়েন ও মনঃদ্বন্দ্ব এবং পরিণতি সম্পর্কে জানতে পাঠককে অবশ্যই হাতে নিতে হবে অসাধারণ মনঃস্তাত্ত্বিক এই উপন্যাসটি।
আরও পড়ুনঃ হৈমন্তী গল্প PDF Download রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
উপন্যাসটির কিছু পছন্দের উক্তিঃ
“উগ্র বিষ শরীরে প্রবেশ করিলে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই তাহার চরম ফল ফলিয়া শেষ হইতে পারে, কিন্তু বিষ মনে প্রবেশ করিলে মৃত্যুযন্ত্রণা আনে- মৃত্যু আনে না।”
“অন্যকে দোষী করিয়া যেটুকু সুখ, দোষ মনে রাখিবার দুঃখ তাহার চেয়ে ঢের বেশি।”
“অধিকারলাভের যে মর্যাদা আছে, সেই মর্যাদা রক্ষা করিতে হইলে অধিকারপ্রয়োগকে সংযত করিতে হয়। যতটা পাওয়া যায় ততটা লইয়া টানাটানি করা কাঙালকেই শোভা পায়- ভোগকে খর্ব করিলেই সম্পদের যথার্থ গৌরব।”
“বউ আসিয়া তো ছেলেকে জুড়িয়া বসেই। তখন এত কষ্টের এত স্নেহের মা কোথায় সরিয়া যায়, এ যদি বা তোমার ভালো লাগে, আমার ভালো লাগে না।”
আরও পড়ুনঃ মেঘনাদবধ কাব্য বাংলা অনুবাদ PDF
“শিক্ষক যদি শিক্ষার সর্বপ্রধান অন্তরায় হন, তবে অবলা ছাত্রীর সাধ্য কী বিদ্যারণ্যের মধ্যে পখ করিয়া চলে।”
“পোকা যখন গুটি বাঁধে তখন তত বেশি ভয় নয়, কিন্তু যখন কাটিয়া উড়িয়া যায় তখন ফেড়ানো বড় শক্ত!”
“বিবাহ না করিয়া ঠকা ভালো, বিবাহ করিয়া ঠকিলে মুশকিল।”
“যেখানে দাবি করা চলে সেখানে ভিক্ষা কেন।”
“ভালোবাসি এ কথা ঠিক বলা যায় না; কিন্তু ভালোবাসি না এই কথাটিকে একটু ফিকা করিয়া, নরম করিয়া জানানো দরকার।”
আরও পড়ুনঃ ক্রীতদাসের হাসি পিডিএফ রিভিউ
“যাহার পালাইবার রাস্তা নাই, তাহাকে আবার বাঁধিবার চেষ্টা কেন।”
“উপদেশ দেওয়া সহজ, উপায় বলিয়া দেওয়াই শক্ত।”
“অধিকার লাভের যে মর্যাদা আছে,সেই মর্যাদা রক্ষা করিতে হইলে অধিকার প্রয়োগকে সংযত করিতে হয়।”
লিখেছেনঃ Jannatun Nasira Jui
বই: চোখের বালি [ Download PDF ]
লেখক: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন্যান্য রচনা সমগ্র PDF Download