নাম: মেঘের ছায়া (শুভ্র সিরিজ)
লেখক: হুমায়ূন আহমেদ
ধরণ: ছোট গল্প
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৯২
রিভিউ লেখক: নাঈম সালেহ
গল্পের সারনির্যাসঃ
শুভ্রের বাবা ইয়াজুদ্দিন সাহেবের শরীর ভালো না। অফিসে কী একটা খুটখাট ঝামেলার ব্যাপার।কিন্তু অফিসের ব্যাপার স্যাপার তিনি বাসায় আমল দেননা।শরীর ভালো না।স্ত্রী রেহানা তেঁতুলের শরবত করলেন।তিনি যথেষ্ট বিরক্ত। তিনি তর্কে গেলেননা।শরবত খাওয়া হলে রেহানা বলল,- ভালো লাগছে?- হুঁ
ছেলে শুভ্রের বয়স সাতাশ। রেহানা ছেলের বিয়ে শাদী নিয়ে চিন্তিত।ইয়াজুদ্দিন সাহেবের মতে শুভ্র গায়ে গতরে বড় হলেও এখনো শিশু।
গল্পের বড় একটা অংশ জুড়ে আছে শুভ্রের স্কুল বন্ধু জাহেদ।মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে।মামা তার নামে মাত্র আশ্রয়।প্রাইভেটটিউটর।যা হয় তা দিয়ে নিজেই চলা মুশকিল।জাহিদের বিয়ে হচ্ছে।মেয়ের নাম কেয়া।কেয়ার নানি মৃত্যু শয্যায়।নাতনীর সংসার দেখে যেতে চান। তাছাড়া কেয়ার আপা দুলাভাই কেয়াকে আর পুষবেন না।জাহেদ সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত।তবে মিল হচ্ছে দুজনেই ছন্নছাড়া।জাহেদের মামা চান না জাহেদ সংসার নিয়ে তার বাসায় উঠুক।তার সাধ্যি যা ছিলো,করেছেন।ওর সংসার সামলানোর সাধ্যি নেই তাই মুখের উপর না করে দিলেন।জাহেদের একমাত্র ভরসা মায়ের গলার হার।মা বলেছিলেন বৌমাকেই যেন হারটা দেয়া হয়।হারটা বেচা গেলে হয়ত টানাপোড়ন কুলিয়ে উঠত।তাও গোল্লায় গেলো।সেটা বড় বোনের জবরদখলে। চারদিক থেলে ভীষণ নীরব নির্লিপ্ততা।মামা, বড় বোন,কেয়ার আপা দুলাভাই।শুভ্রের বাবা মাও চাননা গরীবলোকের সাথে তার মাখামাখি হোক।জাহেদের বিয়ে হল।শুভ্রদের গাড়িতে বর যাত্রী গেল।
আরও পড়ুনঃ মিসির আলির অমীমাংসিত রহস্য রিভিউ
শুভ্র ভালোবাসার শিশির জলে,সাহায্য সহযোগিতার সবুজ বসন্তে জাহেদকে চুপসে দিতে চায়।
কনে ঘরে উঠতে দেখেই জাহেদের মামা গদগদ গলায়, ভদ্রতার লাজটুকু না রেখে যাচ্ছে তাই বকা দিল।জাহিদ কনেকে পুণঃ আপা দুলাভায়ের বাসায় রেখে এলো।এতে কেয়ার ভাবান্তর হলো না।সে খ্যাপে যাওয়ার বদলে স্বামীর দৈন্যতায় সমানে সান্তনার বাণী দিয়ে যায়।এ দেখে জাহেদ বেবাক প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। এত দুঃখের মাঝেও তার সুখ – গিরিনির্ঝরণীর কোথাও যেন কমতি নেই।
মামা পাগল হয়ে গেল।বাসা মালিক বাসা ছাড়তে বলে গেল।জাহেদের সামনে চতুর্মুখি শূন্যতা।শুভ্র এক বিধবা মেয়েকে বিয়ে করবে। নীতু নাম।শুভ্রের বাবার মতই লজিক্যালি মেয়ে তাই।ইয়াজুদ্দিন সাহেবের অফিসের ঝামেলা ডিসমিস। মনে করতেন ছেলে মেধায় অপরিপক্ব।এখন দেখেন বাবার মত হয়েছে খোকাটা।ইয়াজুদ্দিন মেসিভ এটাকে মারা গেলেন। মৃত্যুর আগে তিনি আর দশটা ছেলেমেয়ের বাবার চেয়ে নিজের ছেলের জন্য বেশি গর্ববোধ করলেন। বাবার মতই জ্ঞানী হয়েছে শুভ্রটা।
সবমিলিয়ে চমৎকার গল্প।মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে প্রতিটি মা বাবা যা চায়,তিনি ভাষা ও সংলাপের কারিশমায় তুলে ধরলেন,সাথে সাথে মধ্যবিত্তের দৈন্যতা আর চতুর্মুখি নির্লিপ্ততা কে তিনি ভাবমূর্তি দিলেন বিস্তর অংশজুড়ে এবং বোঝালেন প্রতিটি মধ্যবিত্ত সংসারেই যদি একেকটি কেয়া হয়,সে সংসার স্বর্গগুণে প্লাবিত হবে অহর্নিশি। আর মানবসেবা আন্জাম দেয়াই জ্ঞানের ধর্ম, শুভ্রের কর্মকাণ্ডে এটাই প্রতিফলিত।
লিখেছেনঃ স্বপ্নবাজ তরুণ
বইঃ মেঘের ছায়া
লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
হুমায়ূন আহমেদ রচিত সকল বই রিভিউ সহ PDF ডাউনলোড করুন