জোছনা ও জননীর গল্প মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস। অথচ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বাংলাদেশে যে ধরনের উপন্যাস লেখা হয়েছে বেশি, হুমায়ূন আহমেদ সেই দিকে যাননি। উনি এমন ন্যারেটিভ বেছে নিয়েছেন যে ন্যারেটিভটা যুদ্ধ না করা একটা মানুষও বুঝবে। রিলেট করতে পারবে। বা আগুনের পরশমনি। এইখানে যুদ্ধ কিভাবে হয়েছে এইটা বলার চাইতে উনি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছেন যুদ্ধে মানুষের কি হয়, মানুষের জীবনে বা পরিবারে কি প্রভাব পড়ে। বদি কিভাবে যুদ্ধ করলো তার চেয়ে একটা পরিবারের সাথে তার যে আত্মিক সম্পর্ক সেটা কিভাবে তৈরি হচ্ছে এবং এর ভেতর দিয়ে মানুষ নিজের দেশ এবং নিজেদের স্বাধীনতা নিয়ে কিভাবে কন্সার্ন হচ্ছে, সেটা দেখাচ্ছেন উনি। সেই গল্পটা লিখেছেন। মানুষের জন্য এই গল্পটা রিলেট করা সহজ, অনীল বাগচীকে রিলেট করা সহজ। হুমায়ূন এই কাজটা করেছেন সহজভাবেই।
এইসব দিনরাত্রিতে হুমায়ূন যে ওয়ার্কিং হাউজ ওয়াইফ দেখান, উনি কিন্তু কোনোকিছু পুশ করেন না। উনি বলেন না, এটাই হতে হবে। উনি কোনো আদর্শবাদী অবস্থান দেখান না। উনি বাস্তব অবস্থানটা দেখান। কিন্তু এরকম অন্যান্য উপন্যাস পড়লে খুব স্বাভাবিকভাবে একটা ভিলেন চরিত্র পাওয়া যাবে যে ওয়ার্কিং হাউজ ওয়াইফের জীবনে কাটা হয়ে দাঁড়াবে। এটা এইসব দিনরাত্রিতে পাবেন না। শ্বাশুড়িকে আপনি স্রেফ ভিলেন হিসেবে দেখবেন না। মানুষ যে আনপ্রেডিক্টেবল, উইয়ার্ড এবং মাল্টি ডাইমেনশনাল, স্বার্থপর ও মানবিক, এটা টের পাবেন। এখন, এই বইটা আপনি যদি একটা পরিবারের ছেলে বউ আর ছেলের মায়ের হাতে তুলে দেন- বইটা দুই দিক থেকেই রিলেট করা পসিবল।
হুমায়ূন যে বাদশাহ নামদার লেখেন, বাদশাহ হুমায়ুন কে নিয়ে, উনি ভূমিকাতেই বলে দেন যে উনি ঔপন্যাসিক হওয়ার কিছু স্বাধীনতা গ্রহন করছেন। ফলে বাদশাহ নামদারে যে বাদশাহ হুমায়ূন কে আমরা দেখি, যে এক ঐতিহাসিক চরিত্র, যাকে আমি হয়তো অন্য কোথাও পড়তাম, অন্তত বাংলাদেশের বেশিরভাগ লেখায়, একজন বাদশাহ হিসেবেই, যার জীবনের গল্প হয়তো হতো তার রাজকার্য আর যুদ্ধের বিবরনী, আমার হুমায়ূন সেসবকে গৌণ করে দেন। উনি আমার সামনে যে বাদশাহ হুমায়ূন হাজির করেন, তাকে আমি বুঝতে পারি। তার মানসিক দ্বন্দ্ব সম্পর্কে জানতে পারি। তার মানবিক দিক আমি দেখি। বাদশাহ হলেও যে তার অসহায়ত্ব থাকতে পারে, সেটা দেখি। ফলে আমার এই বই পড়া ইতিহাস পাঠের বা ঐতিহাসিক চরিত্র পাঠের গণ্ডি ছাপায়ে যায়, অন্য কিছু হয়ে ধরা দেয়। বাদশাহ হুমায়ূন আমার পরিচিত হয়ে ধরা দেয়।
হুমায়ূন যখন শহর থেকে বেরিয়ে গ্রামের গল্প লেখেন, উনি কিন্তু এনজিও গল্প লেখেন না। গ্রামের কি সমস্যা, সেখানে একদল কিভাবে আদর্শবাদী হয়ে উঠতেসে, উনি এই গল্প লেখেন না। উনি এখানে কিছুটা মানিকের মতোই। উনি যখন শ্রাবণ মেঘের দিন লেখেন বা বানান, উনি এই জিনিস দেখান না যে জমিদারের মেয়ের সাথে গরিব গায়কের প্রেমের দ্বন্দ্ব, উনি দেখান কুসুম আর মতির দ্বন্দ্ব। উনি সমাজতন্ত্র করেন না লেখার মধ্যে। শ্রাবণ মেঘের দিন যদি গ্রামের কোনো পড়তে পারা কুসুমের বয়সী মেয়ের হাতে ধরায়ে দেন, আমার মনে হয় সে রিলেট করতে পারবে। আবার যখন একজন শহুরে শিক্ষিত পড়বে, সে হয়ত দেখবে ডাক্তারের চরিত্র দিয়ে। আবার ফেরা যদি পড়েন, একটা অদ্ভুত লেখা এইটা। বা অচিনপুর। দুইটা বইয়েই উনি এমন কিছু দেখান, এমন চরিত্র আর তাদের নিয়ে এমন গল্প/দ্বন্দ্ব ফাঁদেন যেইটা গ্রামের মানুষও রিলেট করতে পারবে। তাকে মধ্যবিত্তের লেখক বলার যে প্রবণতা- সেই প্রবণতা ধাক্কা খায় এইখানে এসে, আমার মতে। তার গ্রাম দেখার এবং গল্প বলার পদ্ধতি অন্যরকম ছিল। উনি গ্রামের পরিবারের, অন্দরের গল্প বলেন। গ্রামের পরিচিত চরিত্রের চিত্র আঁকেন। উনি গ্রামের অনুন্নয়ন বা গরিব- এসবের চেয়ে প্রাধান্য দেন মানুষের সম্পর্কের জটিলতা কে। এর মানে এই না যে উনি গ্রামের রাজনীতিকে দেখেন না। মধ্যাহ্নতে ধনু শেখের রাজনীতি আমরা দেখি।
মধ্যাহ্ন উপন্যাস ওভারঅল আমার কাছে প্রতিশ্রুতির ব্যর্থতা মনে হয়েছে বিশেষত দ্বিতীয় খন্ড। শুরু থেকে উনি যেভাবে লিখে আসছেন, শেষে গিয়ে মনে হয়েছে হুমায়ূন তার টার্গেটে পৌছান নাই। তো প্রথম পর্বেই আমরা যে চরিত্রগুলা দেখি- এবং তার মধ্যে যে ইমাম চরিত্রটা থাকে, এইটা আমার কাছে ফ্যাশিনেটিং লাগে। কিংবা এই মেঘ, রৌদ্রছায়ার ইমাম। কিংবা হিমুর একটা বইয়ে একটা ইমাম থাকে যার হাটুর নিচ থেকে পা নেই। হুমায়ূন ইমামদের চরিত্রগুলো আঁকেন মানবিকভাবে। তাদের ভেতরে যে মনস্তাত্তিক দ্বন্দ্ব থাকে, তারা যে আল্লাহ ভীরু হয়, ধর্ম পালন করে আবার অর্থ ও ক্ষমতার কারণে সমাজে অসহায় হয়ে পড়ে অনেক সময়, তারা যে পাপ করতে পারে এবং সবচেয়ে বড় ব্যাপার তারা যে অন্যান্য মানুষের মতোই প্রবলভাবে মানবিক- একজনের ইমামের এইধরনের চরিত্রায়ন দেখতে পাওয়া আমাদের বইয়ে কি বিরল নয়?
নন্দিত নরকে আর শঙ্খনীল কারাগার এর সব চরিত্রের নাম একই। গল্পের বর্ণনাও প্রায় একই। কিন্তু পরিণতি আলাদা। এখন হুমায়ূন কেন এইভাবে লিখলেন, সেই ব্যাখ্যা তার আছে। কিন্তু একটা ব্যাপার, একই সদস্য সংখ্যা, এমনকি একই নাম হতে পারে যাদের আর্থিক অবস্থাও একই, এমন হওয়াটা তো এ দেশে অসম্ভব না। কিন্তু হুমায়ূন যে অদ্ভুত খেলাটা খেলেন, নন্দিত নরকের রাবেয়া আর শঙ্খনীল কারাগারে যে রাবেয়া, কিংবা দুই বইয়ের দুই মন্টু, দে আর ডিফারেন্ট। দুটো ভিন্ন গল্প বলেন একই চরিত্র দিয়ে, একই নাম দিয়ে দুটো ভিন্ন চরিত্র আঁকেন। পরিণতি হয় ভিন্ন।
নন্দিত নরকের আরেকটা বিশেষত্ব আছে। হুমায়ূন দেখান যে ঘরের মধ্যেও আমাদের নারীদের সাথে কি হতে পারে। উনি কিন্তু কোন ম্যাসেজই দেন না। যে তোমাকে এইটা করতে হবে, ঐটা করলে হবে না। উনি বলেন না, মন্টুর পথে হাটতে হবে। বা প্রিয়তমেষুতেও উনি কোনো কিছু বলেন না। উনি দেখান। ফলে, কোনো কিছু আরোপিত মনে হয় না।
আমার সবচেয়ে প্রিয় বই, অপেক্ষা। আমি জানি না কেন এই বই আমার এতো প্রিয় হইছে, অপেক্ষার ট্র্যাজেডিগুলা আমার কাছে খুব বেশি ইউনিক লাগে। প্রথমত, হাসানুজ্জামান কোথায় গেল? হুমায়ূন বলেন না, হাসানুজ্জামান এর কি হয়েছে, কেন সে ফেরে নি। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায়, আমরা যে গুমের ঘটনা দেখি, সেইটা পলিটিকাল এস্পেক্ট বাদ দিলে, সুরাইয়ার স্ট্রাগল হতে পারে গুম হওয়া ব্যক্তির পরিবারে স্ট্রাগল। অপেক্ষা আগাগোড়াই ট্র্যাজেডি দিয়ে গড়া, কিন্তু সব ট্র্যাজেডি বাদে চোখে পড়ার মতো একটা ব্যাপার হলো, সুপ্রভার আত্মহত্যা। আমরা আত্মহত্যা নিয়ে যতো কিছু চিন্তা ভাবনা করি বা ভাবি যে একটা মানুষ অনেক ধাক্কা খেয়ে আত্মহত্যা করে, হুমায়ূন দেখায় যে এটা এমনই হবে তা না। সুপ্রভার মতো একজন কমবয়েসীও জীবনের কোনো মুহূর্তে এই কাজ করতে পারে। আপাত দৃষ্টিতে তুচ্ছ কারণেও করতে পারে। আবার সুপ্রভার সাথে তার বড় মামার যে সম্পর্কটাও আসে, সেটাও ইন্টারেস্টিং। এই অপেক্ষা, নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার– এই বইগুলো আমার কাছে হুমায়ূনের নাগরিক জীবন, পারিবারিক জীবন, জটিলতা লিখতে পারার ক্ষমতার প্রমাণ।
হুমায়ূন এর একটা ইউনিক বই হচ্ছে কে কথা কয়। এই বইয়ের ভূমিকাটা প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। হুমায়ূন এই বইটা লিখেছিলেন একটা বই পড়তে গিয়ে, তার মাথায় গল্পটা এসেছিল। উনি এইটা স্বীকার করেছেন, কে কথা কয় ঐ বইয়ের অনুবাদ বা রূপান্তর না হওয়ার পরও, তথ্যের অপ্রাপ্তির ঐ যুগেও হুমায়ূন এই কার্টেসিটা দেখাইছেন। যেখানে আমরা অনেককেই পাবো, এই সাধারণ সত্য বলতে ভয় পায়। হুমায়ূন, মানে বই পড়ে চেনা যে হুমায়ূন আহমেদ, তাকে আমার সবসময়ই সৎই মনে হয়েছে। অকপট মনে হয়েছে। উনি এমন অনেক কিছু লিখেছেন, বলেছেন, স্মৃতি চারণা করেছেন, স্বীকার করেছেন, যেটা তার দিকে আঙুল তোলা অনেকের মধ্যেই পাওয়া যাবে না।
কে কথা কয় এর চরিত্রায়ণ এতটা ডাইভার্স এবং প্লট এতোটা ইউনিক, হুমায়ূন এর অন্যতম সেরা কাজ আমার কাছে এটা। মতিন উদ্দিন কিংবা নদ্দিউ নতিম, কমল, তারপর মতিনের বড় বোনের যে পরিবার বা মতিন উদ্দিনের যে বান্ধবীর গল্প, তার যে বন্ধুর গল্প হুমায়ূন লিখেছে- ভিন্ন ভিন্ন যে দৃষ্টিভঙ্গি এবং ঘটনা- আমি চেষ্টা করছি ব্যাপারটা ব্যাহ্যা করার বা বোঝানোর- হচ্ছে না। আমি যা বোঝাতে চাচ্ছি, সেটা বুঝতে হলে বইটা পড়ে দেখতে হবে, আই থিংক।
হুমায়ূন এর সাইন্স ফিকশনগুলো, অনন্ত নক্ষত্র বীথি বা শূণ্য বা কুহক বা নি, এইখানেও উনি সাইন্স ফিকশনের চিরাচরিত ধাঁচে না গিয়ে সাইন্স কে ব্যবহার করে মানুষের গল্প লেখেন। উনি সাইন্স ফিকশনে মানুষের ভেতরের গল্প বলেন, মানুষ অসহায় হলেও যে মানুহশের ভেতরের ক্ষমতা অন্য রকম সেই গল্প বলেন। কখনও কখনও দেখান অথোরিটারিয়ান চিত্র। কিন্তু মূলে থাকে সেই মানুষই।
হুমায়ূনের ছোট গল্প নিয়ে এখানে লেখা অনেকটাই টাফ। প্রেমের গল্প কিংবা জীবনবোধের বা অতিপ্রাকৃত- ছোটগল্পে হুমায়ূনকে আরও প্রবলভাবে টের পাওয়া যায়। তার পরিমিতবোধ, ছোটগল্পের ছোট পরিসরের মধ্যেই উনি পাঠককে আটকে ফেলতে পারেন। তার ছোটগল্পের গল্প অন্যদিনের জন্য রাখছি আপাতত।
হুমায়ূন যে অতিপ্রাকৃত গল্প আর উপন্যাস লিখেছেন, বাংলার ভূত প্রেত শাকচুন্নি ডাইনি থেকে অনেক ভিন্ন। উনি সুররিয়ালিস্ট, উইয়ার্ড, ক্রিপি। কুটু মিয়া বা পোকা, বীনার অসুখ বা বেয়ারিং চিঠি পিঁপড়া বা দ্বিতীয় জন- মোটামুটি বড় একটা তালিকা তার অতিপ্রাকৃত কাজের।
একজন লেখক হিসেবে হুমায়ূন এর গল্প উপন্যাসের আলোচনা আসে, আসবে। কিন্তু এর বাইরে আরেকটা ফ্যাসিনেটিং ব্যাপার আছে, হুমায়ূনের গান। তার নিজের লেখা গান বা লোকজ সংস্কৃতি থেকে তুলে আনা উকিল মুন্সির বা হাসন রাজার গান- হুমায়ূন ওয়াজ অন অফ এ কাইন্ড। একটা ছিল সোনার কন্যা কিংবা যদি মন কাঁদে বা ও আমার উড়ালপঙ্খীরে বা চান্নিপসর রাতে যেন আমার মরণ হয় – হুমায়ূনের নিজের লেখা গানগুলো, অল্প ক’টা গান, এখনও মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে।
হুমায়ূন কেন ফ্যাশিনেটিং বা সে কতো বড় সাহিত্যিক এটা প্রমাণ করা আমার উদ্দেশ্য না- মানুষের রুচির ভিন্নতা থাকে। মানুষ একেক লেখকের বই পড়তে পছন্দ করে। হুমায়ূন অপছন্দের তালিকায় থাকতে পারে। এটা বড় ব্যাপার না আমার কাছে। কিন্তু, এই অপছন্দের তালিকায় থাকা, বা কেউ একজন জেমস জয়েস বা পামুক পড়ছে, দেশের মধ্যে ইলিয়াস কিংবা মাহমুদুল হক পড়ছে, বা মানিক-সুনীল পড়ছে বলে হুমায়ূনকে ছোট করা এবং তাকে বাতিল বলার চেষ্টা করাটা আমার কাছে সবসময় অসৎ লাগে। আর যেটা বলছিলাম, হুমায়ূন কে প্রমাণ করার চেষ্টা করার প্রয়োজন আমার নেই। তত্ত্বকথার প্রয়োজন হয়তো একাডেমিয়াতে আছে, তাকে কেন পড়তে হবে – এইসব নিয়ে অনেক কাজও হবে হয়তো, তাকে নিয়ে অসততা বা বিদ্বেষ সামনেও হয়ত থাকবে- কিন্তু সব ছাপিয়ে মুখ্য হয়ে থাকবে হুমায়ূন আহমেদ এর প্রতি পাঠক হিসেবে মুগ্ধতা। হুমায়ূন আহমেদের সবচেয়ে খারাপ লেখাটাও, মানে তার পাঠক হিসেবেও যে লেখাটা খারাপ মনে হয়, সেটাও গোগ্রাসে পড়ে ফেলার ব্যাপারটাও থাকবে। বর্ষা, জোছনা, কদম ফুল এর মতো সাধারণ বস্তুও যে উদযাপন করা যায়- সেই উদযাপন থাকবে। আর এইসব উদযাপনের মধ্যেই হুমায়ূন থাকবে, যেকোনো মন খারাপে তার বই হাতে তুলে নেয় কেউ কেউ, কৈশোর থেকে বড় হওয়ার পরও একই আবেগে কেউ কেউ তার বই পড়ে, রিডার্স ব্লকে পড়লে তার বই পড়ে, তার চরিত্রগুলো নিয়ে মানুষ ফ্যসিনেটেড হয় – একজনকে প্রমাণ করতে এর চেয়ে বেশি আর কিছু কি লাগে?
লিখেছেনঃ তানভীর ফুয়াদ রুমি