Skip to content
Home » উঠোন পেরিয়ে দুই পা হুমায়ূন আহমেদ PDF | Uthon Periye Dui Paa Humayun

উঠোন পেরিয়ে দুই পা হুমায়ূন আহমেদ PDF | Uthon Periye Dui Paa Humayun

    উঠোন পেরিয়ে দুই পা হুমায়ূন আহমেদ এর সেরা রচনা গল্প সমগ্র বই সমূহ pdf রিভিউ
    Redirect Ads

    লেখক হুমায়ূন আহমেদের জোছনাপ্রীতির কথা পাঠকমাত্রেরই জানা। লেখকের সৃষ্ট চরিত্র হিমু জোছনা রাতে খালি পায়ে শহরময় হেঁটে বেড়াতো হলুদ পাঞ্জাবী গায়ে জড়িয়ে। শুধু হিমু কেন, লেখকের বিভিন্ন বইতে বারবার উঠে এসেছে জোছনা প্রসঙ্গ। হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের সাথে আমার প্রথম পরিচয়টা একদমই অনাড়ম্বর ভাবে, তখনও আমি তার লেখা বুঝবার বয়সে আসি ও নি। বড়জোর ক্লাস ফোর বা ফাইভে পড়ি। আমাদের বাসার শোকেসে হুমায়ূন আহমেদের দুটো বই ছিলো, তার মাঝে একটার আবার মলাট ছিলো না। সেই বইটার উপরের সাদা কাগজের ওপর আমার বড় ভাই নীল কলমে বইয়ের নামটা লিখে রেখেছিলো, “জোছনাত্রয়ী”।

    বইটা সবসময় চোখে দেখেছি, ধরে দেখা হয়নি। আমার তখন ঠাকুরমার ঝুলি আর মুহম্মদ জাফর ইকবালের সায়েন্স ফিকশনে ঝোঁক, হুমায়ূন আহমেদকে আমি চিনি না। তারপরও একদিন কি ভেবে বইটা খুলে দেখলাম, ভেতরে তিনটা বড়সড় গল্প। বইটা কাছে না থাকলেও গল্প তিনটার নাম এতোদিন বাদেও মনে আছে আমার, জল জোছনা, চাঁদের আলোয় তিনজন যুবক, আর সবাই গেছে বনে। এই ছিলো গল্প তিনটির নাম। মনে আছে, তখন বইয়ের ভেতর আতিপাতি করে খুঁজেছি “জোছনাত্রয়ী” গল্পটা কোথায় সেটা, খুঁজে না পেয়ে বিরক্ত হয়েছি। যে গল্প বইতে নেই, সেই নামে কেন বই লেখা? তিনটা জোছনার গল্প মিলে যে বইয়ের নাম জোছনাত্রয়ী রাখা হয়েছিলো, তা বুঝেছি আরো বহু বহু বছর পর এসে।

    Download

    “উঠোন পেরিয়ে দুই পা” নিয়ে লিখতে বসে “জোছনাত্রয়ী”র কথা বলার কারণ আছে একাধিক। জোছনাত্রয়ীর মলাটের ভেতর ছিলো জোছনা নিয়ে তিনটে গল্প। উঠোন পেরিয়ে দুই পা এর মলাটের ভেতর আছে লেখকের ভ্রমণ-স্মৃতিচারণ বিষয়ক পাঁচটি লেখা, হোটেল গ্রেভার ইন, মে ফ্লাওয়ার, যশোহা বৃক্ষের দেশে, দেখা না দেখা, আর রাবণের দেশে আমি এবং আমরা। ভ্রমণ বা স্মৃতিচারণ ধাঁচের লেখাগুলোতে লেখকের সাথে অনেকটাই কাছ থেকে পরিচিত হওয়া যায়, গল্প বা উপন্যাসে আমরা তো আসলে লেখকের সাথে না, পরিচিত হই লেখকের কল্পনার সাথে। হিমু, রূপা, মিসির আলী বা শুভ্র সেই কল্পনারই বহিঃপ্রকাশ, যারা আমাদের বাস্তব থেকে ঘোরের জগতে টেনে নিয়ে যায়, জোছনার আলোর মতো বিভ্রম তৈরী করে দেয়।

    আরেকটা বিষয় আছে, উঠোন পেরিয়ে দুই পা এর প্রথম দুটো লেখা, হোটেল গ্রেভার ইন, আর মে ফ্লাওয়ার, এই লেখা দুটোতে লেখকের প্রবাস জীবনের ছোটখাটো কিছু ঘটনা উঠে এসেছে, যেগুলো পড়তে গিয়ে জোছনাত্রয়ীর সবাই গেছে বনে গল্পটির অনেক সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছি। গল্পটা যে লেখকের প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতার খানিকটা প্রতিফলন, সেটা বুঝতে পেরে এই দুটো লেখা পড়ার সময় বারবার সবাই গেছে বনে গল্পটির কথা মনে পড়ছিলো। এসব কারণেই জোছনাত্রয়ী প্রসঙ্গ টেনে আনা।
    হুমায়ূন আহমেদ আমেরিকার নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে যখন রসায়নে পিএইচডি ডিগ্রি নিতে যান, তখনকার প্রবাস জীবনের স্মৃতিচারণ নিয়েই উঠোন পেরিয়ে দুই পা বইটির প্রথম লেখা হোটেল গ্রেভার ইন। লেখকের ব্যক্তিজীবনের খুব সাধারণ কিছু ঘটনা, দেশের জন্য মনকেমন করার গল্প। তারপরও, অচেনা কয়েকজন ওয়েট্রেসের সহানুভূতি, কিংবা বিদেশের মাটিতে একদল বাঙালি মেয়ের গাওয়া ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি’ কল্পনা করতে গিয়ে চোখ ভিজে এসেছে বারবার। এরকমভাবে পাঠকের অনুভূতিকে নাড়া দিতে পেরেছেন বলেই হয়তো তিনি হুমায়ূন আহমেদ।

    এই স্মৃতিচারণের মধ্যেই উঠে এসেছে কিছু নির্মম বাস্তবতা। মে ফ্লাওয়ারে তিনি আমেরিকার মতো সভ্য দেশের অনেক সীমাবদ্ধতাই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন, প্রকাশ করেছেন আমাদের এই গরীব দেশের প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা, আর উন্নত দেশের সাথে নিজের দেশকে বারবার তুলনা করে হতাশ হওয়ার গল্প। আমাদের দেশ উন্নত নয়, বরং অনেক পিছিয়ে। তারপরও যখন কোনো এক আমেরিকান বাবার ঘটনা পড়েছি, যে কিনা নিজের শিশুসন্তানকে কান্না করার অপরাধে তুলে আছাড় দিয়েছিলো, তারপর মৃতদেহের গতি করতে কুচি করে কেটে বাড়ির জার্মান শেফার্ড কুকুরটাকে দিয়ে খাইয়েছিলো, তখন লেখকের মতো আমিও আবেগাপ্লুত হয়েছি এই ভেবে যে, এই গরীব দেশের মানুষগুলো হয়তো এখনো এতোটা নৃশংস হয়ে পারেনি। তবে তেমন আশ্বস্তও হতে পারিনি অবশ্য, এরকম নৃশংসতা দেখতে খুব বেশিদিন বাকিও নেই হয়তো। লেখক বেঁচে থাকলে নিজের দেশ নিয়ে অহংকারটুকু কতোটুকু ধরে রাখতে পারতেন কি জানি!

    বইয়ের পরবর্তী তিনটা লেখাতে ভ্রমণকাহিনীই বিস্তারিত ভাবে লেখা হয়েছে, লেখকের সাথে ঘুরেছি চীন, শ্রীলঙ্কা, আগরতলা কিংবা পাতায়া সমুদ্রে, অনুভব করতে চেষ্টা করেছি যশোহা বৃক্ষ দেখে লেখকের আবেগ, মরুভূমিতে জোছনা দেখে তার ভাবালুতা। কখনো কোনো জায়গার ইতিহাস পড়ে অবাক হয়েছি, কখনো হেসেছি নিঃসঙ্কোচে। ডাকোটা তে লেখক আবারও যেতে গিয়েও যাননি, তুলে রেখেছিলেন বৃদ্ধ বয়সে আবার গিয়ে স্মৃতিচারণ করবেন বলে। তা বোধহয় আর হয়ে ওঠেনি।

    Download

    লেখক যেমন জোছনা ও জননীর গল্প, বাদশাহ নামদারের মতো বই লিখেছেন, তেমনি সৃষ্টি করেছেন হিমু কিংবা মিসির আলীর মতো চরিত্রকে, যাদের মাঝে তিনি অমর হয়ে থাকবেন। জোছনা ও জননীর গল্প পড়ে কখনো কেঁদেছি, কখনো শিউরে উঠেছি যুদ্ধের ভয়াবহতার ঘটনাগুলো জেনে। আগ্রহ নিয়ে বারবার মিসির আলীকে নিয়ে লেখা বইগুলো পড়েছি, রহস্যভেদের পাতায় গিয়ে পড়া বইও দ্বিতীয়বার পড়তে একই রকম অনুভূতি কাজ করেছে। দেবী, নিশিথীনি কিংবা দি একসরসিস্ট পড়ে ভয়ে ভয়ে রাতে বাতি জ্বালিয়ে ঘুমিয়েছি একসময়। শুভ্রকে কল্পনায় ভেবে নিয়েছি নিজের মতো করে। কিংবা, তেঁতুল বনে জোছনার সেই লাইনটা কতোবার যে মনে মনে আউড়েছি,

    ” ডাক্তার সাহেব, তুমি আমার জন্য দু ফোঁটা চোখের জল ফেলেছো, আমি তোমার জন্য জনম জনম কাঁদিবো! “

    যেই একজন লেখক সেই সময় সতেরো আঠারো বছর বয়সী আমাকে এতোরকম অনুভূতি চিনিয়েছেন, তার প্রবাসজীবন বা স্মৃতিচারণের গল্পগুলো এই উঠোন পেরিয়ে দুই পা বইটির মলাটের ভেতর পড়তে গিয়ে বারবার মনে হয়েছে, এই ই তাহলে বইয়ের কোনো চরিত্রের বাইরে লেখকের নিজের গল্প!

    তবে এটাও সত্যি, শুরুর দিকের লেখাগুলোতে যেমন হুটহাট চোখ ভিজেছে, পরের দিকে তেমনটা আর হয়নি। তবে ভালো লাগায় মন ভরে ছিলো। লেখকের নতুন আর কোনো বই আসবেনা, নতুন কোনো বই আর পড়া হবে না, কি অদ্ভুত বাস্তবতা, তাইনা!
    উঠোন পেরিয়ে দুই পা এর ভূমিকাতে লেখক তার ব্যক্তিগত জীবনের দুই সহধর্মিনীর কথা উল্লেখ করে বলেছেন লেখায় অকপটে তাদের সাথে পার করা সময়ের কথা, যেটা পড়তে গিয়ে পাঠক ধাক্কার মতো খান কিনা সে বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
    আমি পড়তে গিয়ে অবাক হইনি, ধাক্কাও খাইনি। শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলে পৃষ্ঠা উল্টেছি আর ভেবেছি, মানুষ বদলায়, আবেগ বদলায়, ভালোবাসাও হয়তো বা জায়গা বদল করে, রয়ে যায় শুধু স্মৃতি!

    লিখেছেনঃ শুচিতা মৌমি

    Download

    বইঃ উঠোন পেরিয়ে দুই পা [ Download PDF ]
    লেখকঃ
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

    হুমায়ূন আহমেদ রচিত সকল বই রিভিউ সহ PDF ডাউনলোড করুন

    Facebook Comments
    Tags:
    x
    error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করুন