বইয়ের নাম : নন্দিত নরকে
লেখকের নাম: হুমায়ূন আহমেদ
প্রকাশনীর নাম : অন্যপ্রকাশ
বই প্রকাশ কালের বছর :১৯৭২ সাল
কাহিনী সংক্ষেপ:
লেখক হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস টি তে নিম্নবিত্ত পরিবারের জীবন কাহিনী তুলে ধরেছেন। গল্পের মূল চরিত্রে রয়েছে রাবেয়া। রাবেয়া মেয়েটি মানসিক ভাবে অসুস্থ। রাবেয়ার ৬ সদস্যবিশিষ্ট পরিবারে রয়েছে। ভাইবোনদের মধ্যে রাবেয়া বড়। তার একবছেরর ছোট খোকা। ছোট বোন রুনু ও তার বাবার প্রথম বউয়ের ছেলে মন্টু।
তাদের বাসায় আরো একজন সদস্য থাকেন তিনি হলো মাস্টার কাকা। ভালো নাম শফিক আকন্দ।
তিনি স্কুলে শিক্ষকতা করেন এবং রাবেয়ার ভাইবোনদের পড়ান দেখে তিনি মাস্টার কাকা নামে পরিচিত।
উপন্যাস টি তে লেখক পাশের বাড়ির শান্তি কটেজের শিলু, হারুন ও নাহার ভাবির ( হারুনের বউ) কথা উল্লেখ করেন৷
তাছাড়া আরও উল্লেখ করেছেন রাবেয়ার প্রতি হারুনের দূর্বলতা ও শিলু কে নিয়ে খোকার চাপা আবেগের বর্ননা।
বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী রাবেয়া সারাদিন এ পাড়া – ও পাড়া ঘুরে বেড়ায়। এটাই তার প্রধান কাজ।
হঠাৎ একদিন রাবেয়া হারিয়ে যায়। অনেক খোজাখুজির পর ও যখন তাকে পাওয়া যাচ্ছিলো না তখন স্কুল থেকে ফেরার পথে মাস্টার কাকা তাকে পেয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে।
কিছুদিন পর রাবেয়ার চলাফেরায় স্বাভাবিক মন্থরতা,বমি বমি ভাব, শরীরের আলগা শ্রী ইত্যাদি পরিবর্তন দেখা যায়। এতে কারোর ই বুঝার বাকি থাকেনা যে এসব পোয়াতির লক্ষন৷
বাবা তখন রাবেয়া কে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে কিন্তু ব্যর্থ হয়।
লোকলজ্জার ভয়ে রাবেয়াকে নিজ বাসায় গর্ভপাত করানো হয়। এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরনের কারনে রাবেয়া মারা যায়।
এ ঘটনার পর মন্টু মাস্টার কাকা কে হত্যা করে।
তারপর পুলিশ মন্টুকে ধরে নিয়ে যায় এবং দারোগা সাহেব যখন জেরা করে তখন মন্টু মাস্টার কাকা কে কেন হত্যা করেছে তার কারন জানাতে অক্ষম হয়। ফলে মন্টুর ফাঁসির রায় দেয়া হয়।
উপন্যাস টি তে রাবেয়ার এই করুন সর্বনাশ কে করলো তা লেখক স্পষ্টভাবে কোথাও কোনো নির্দিষ্ট কারন উল্লেখ করেন নি।
উপন্যাস টি সম্পুর্ন পড়লে আসল রহস্য বুঝতে পারা যাবে হঠাৎ মাস্টার কাকার ওপর মন্টুর এরকম আক্রমনের কারন ।
উপন্যাসের শেষ অংশে জেলগেটে একজন শোকাহত বাবা ও অসহায় ভাই ভোর রাতে ঠায় বসে থাকে মন্টুর মৃতদেহের অপেক্ষায়।
পাঠ প্রতিক্রিয়া:
“নন্দিত নরকে” হুমায়ূন আহমেদ এর প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস। উপন্যাস টি লেখকের একটি সামাজিক উপস্থাপনা। পুরো গল্পে রয়েছে একটি নিম্নবিত্ত পরিবারের দুঃখ, কষ্ট, আবেগ ও যৌনতার বর্ণনা।
লেখক গল্পটি নিম্নশ্রেনীদের নিয়ে লিখেছেন। সমাজের অসহায় ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী রা নিম্নশ্রেনীতেই পড়েন।
বইটি কেন পড়া উচিত:
গল্পের মূল চরিত্রের রাবেয়া মানসিক বিকারগস্ত। সমাজে এদের অবস্থান সবার নিম্নে। গল্পটি তে অসহায় ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের প্রতি স্নেহ–মমতা, ভালোবাসা এবং পারিবারিক অসচ্ছলতা, ভাইবোনের মধ্যে মধুর সম্পর্ক ইত্যাদি উপলব্ধি করা যায়। আধুনিক কালে বাহিরে নারীরা আজও অনিরাপদ। অসহায় ও দূর্বলের প্রতি সবলের নির্মম অত্যাচার রুখে দাড়াতে বইটি পড়া উচিত।
বইয়ের পছন্দ ও অপছন্দের দিক:
পছন্দের দিক– উপন্যাসটিতে লেখক গোটা সমাজের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছেন।
বুদ্ধি প্রতিবন্ধীরা সকল ক্ষেত্রেই অবহেলিত। অসহায় ও মানসিক বিকারগস্ত মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা, স্নেহ ভালোবাসার দিক টি ভালো লেগেছে।
অপছন্দের দিক – রাবেয়ার সর্বনাশের কারন হিসেবে মন্টু মাস্টার কাকা কে দায়ী করে। এবং বাড়ি ভর্তি লোকজনের সামনে ধারালো মাছ কাটা বটি দিয়ে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। কিন্তু গল্পে মাস্টার কাকার বিরুদ্ধে কোনো স্বচ্ছ প্রমান পাওয়া যায়নি।
প্রচ্ছেদের সামঞ্জস্যতা :
প্রচ্ছদে গল্পের রাবেয়ার চরিত্র টি ফুটে উঠেছে। একজন মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত অসহায় মেয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় আছে। সে সন্তান সম্ভবা এবং গর্ভের বাচ্চাটির কোনো পিতৃপরিচয় নেই।
বইয়ের নামকরণের সার্থকতা :
নন্দিত শব্দের অর্থ আনন্দ। যা সুখ প্রকাশ করে। অন্যদিকে নরক দুঃখ প্রকাশ করে। সমাজে সুখ, দুঃখ পাশাপাশি বিরাজমান। রাবেয়া মানসিক বিকারগস্ত মেয়ে। তাকে কেউ ভালো কথা বললেও সে ফিক করে হাসে আবার কেউ খারাপ কথা বললেও ফিক করে হাসে। এ সব বুদ্ধি প্রতিবন্ধীরা সমাজে অবহেলিত। রাবেয়ার এই পৃথিবী নামক গ্রহে বসবাস করাকে লেখক “নন্দিত নরকে” বলে আখ্যায়িত করেছেন। এখানে রাবেয়া একটি প্রতীক মাত্র। সমাজের বিভিন্ন জায়গায় এরকম অসংখ্য রাবেয়া ছড়িয়ে আছে।
রেটিং: ৮/১০
রিভিউ লেখনীতে : সুমাইয়া তাসকিন নিনা
বইঃ নন্দিত নরকে [ Download PDF ]
লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত