মানুষ একটা বই দ্বিতীয় বার কেন পড়ে ? এর দু’টো কারণ থাকতে পারে ! প্রথমত, হতে পারে যে, সে বইটা যখন প্রথমবার পড়েছিল, তখন তা বোঝার মত বয়স তার হয় নি । অথবা, বইটা যখন প্রথমবার পড়েছিল তখন তার এতটাই ভালো লেগেছিল যে, সে পরে সেটা আবার পড়ে দেখতে চায়, আগের মত সেই ভালোলাগাটা আছে কিনা ! আমার জন্যে, শ্রদ্ধেয় হুমায়ুন আহমেদ এর “জোছনা ও জননীর গল্প” এমনই একটি বই।
বইয়ের ভূমিকায় গুলতেকিন খানকে ধন্যবাদ দিয়ে লেখক বলেছেন—
“আজ থেকে প্রায় কুড়ি বছর আগে আমার জন্মদিনে গুলতেকিন আমাকে একটা খাতা উপহার দিয়েছিল । তার অনুরোধ ছিল প্রতিদিন এক পৃষ্ঠা হলেও যেন আমি খাতাটায় মুক্তিযুদ্ধের একটা বড় উপন্যাস লিখি । সারা জীবনই গুলতেকিনকে অসুখী করেছি । মনে হয় আজ সে খুশি হবে ।”
ব্যক্তিগত জীবনের বাইরে গিয়ে এ ধরণের বন্ধুত্বপূর্ণ স্বীকারোক্তি সত্যিই খুব ভালো লাগল ! “জোছনা ও জননীর গল্প” আসলে অনেকগুলো পরিবারের গল্প । যেখানে বেসরকারী চাকরিজীবি শাহেদ তার প্রিয়তম স্ত্রী ও কন্যাকে হারিয়ে ফেলেন পঁচিশে মার্চের ভয়াবহ কালরাতের পর ! উপন্যাস জুড়ে আমরা দেখি একাত্তরের সেই অগ্নিঝরা দিনগুলোতে এক অসহায় মানুষের তার প্রিয়জনদের খুঁজে ফেরার গল্প । কখনো এ গল্প আসলে মুক্তিযোদ্ধা নাইমুল আর তার স্ত্রী মরিয়মের ; কখনো এ গল্প গৌরাঙ্গ আর কমলার।
আরও পড়ুনঃ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার
মুক্তিযুদ্ধের এ উপন্যাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে প্রবলভাবেই থাকবেন এটা তো অনুমেয়ই, অবাক লাগে যখন লেখকের দৃষ্টি এড়ায় না ধানমন্ডির বত্রিশের সেই সেল্যুনের মালিক, যে তার দোকানের দরজায় লিখে রেখেছিলেন,
“শেখের বাড়ি যে পথে, আমার বাড়িও সে পথে !”
হুমায়ূন আহমেদ এখানে বেশ কিছু বক্তব্য দিয়েছেন যা বিদগ্ধজনদের বিতর্কের উপাদান হতে পারে । বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাকারীদের স্বীকৃতি নিয়ে লেখকের অভিমত, বেশ কিছু প্রথিতযশা সাহিত্যিকদের মুক্তিযুদ্ধের দিনলিপির সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ, এগুলো এর উদাহরণ ।
আমার কাছে লেখককে সবচেয়ে বেশী সাহসী মনে হয়েছে তখন, যখন তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন । “জোছনা ও জননীর গল্প”, আবারো যখন পড়ছিলাম , নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছিল ! মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেবার সুযোগ হয়ত আমরা পাই নি, কিন্তু স্বাধীনতার মান রাখার জন্যে কি করেছি, এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলেও যখন চুপ করেই থাকতে হয়, এর চেয়ে লজ্জার আর কিই বা হতে পারে!
হুমায়ূন আহমেদ স্যারের মত এ গানটা আমারো তাই ভীষণ প্রিয় –
“যারা স্বর্গগত তারা এখনো জানে, স্বর্গের চেয়ে প্রিয় জন্মভূমি এসো স্বদেশ ব্রতের মহাদীক্ষা লভি, সেই মৃত্যুঞ্জয়ীদের চরণ চুমি ।যারা জীর্ণ জাতির বুকে জাগালো আশা,মৌন মলিন মুখে জাগালো ভাষা । সেই রক্ত কমলে গাঁথা মাল্যখানি, বিজয় লক্ষ্যে দেব তাদেরি গলে ।।”
বইঃ জোছনা ও জননীর গল্প Download (PDF)
লেখকঃ হুমায়ুন আহমেদ
লিখেছেনঃ Tasnia Tahsin Shuha
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন