Skip to content
Home » অপেক্ষা – হুমায়ূন আহমেদ | Opekkha – Humayun Ahmed

অপেক্ষা – হুমায়ূন আহমেদ | Opekkha – Humayun Ahmed

    অপেক্ষা-হুমায়ূন-আহমেদ-pdf
    Redirect Ads

    সারাবিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের কারনে আমরা আজ ঘরে বন্দী। সারা পৃথিবী আজ থমকে আছে, অপেক্ষা করছি এক ভয়হীন পৃথিবীর। যে পৃথিবী আবার ফিরে পাবে তার ব্যস্ততা। কেউ কোনদিন ভাবে নাই যে এভাবে ঘরবন্দী হয়ে থাকতে হবে আমাদের। ঘরবন্দী হয়েও আবার সেই আগের পৃথিবীর অপেক্ষা করছি, আশা করছি সকল জরা-জীর্ণতা কেটে যাবে একদিন। আজ রিভিউ করবো হুমায়ূন আহমেদ এর অপেক্ষা উপন্যাসটির।

    আশা মানুষকে বাচিয়ে রাখে। মানুষ যতবড় বিপদেই পড়ে না কেন, প্রবল উৎসাহে তা মোকাবেলা করতে পারে, অসীম ধৈর্য্যশক্তি নিয়ে অপেক্ষা করে যায় বিপদ কেটে যাওয়ার, নতুন ভোরের। ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে নাগরিক জীবন সব জায়গায়ই ছোটবড় দুঃখ কষ্ট আছে, আছে জীবন চলার পথে অনেক বাধা।

    Download

    এসব ছোটবড় সকল দুঃখই মানুষের মনে, জীবনে প্রভাব ফেলে। মানুষ স্বভাবতই খাপ খাইয়ে নিতে পারে সহজে, সৃষ্টিকর্তা আমাদের এভাবেই সৃষ্টি করেছে, তার করুণা, তার কাছে বিশেষ কৃতজ্ঞতা। খাপ খাইয়ে নিতে পারলেও এর প্রভাব কিন্তু থাকেই। তাইতো লেখক বলেন, “জগতের কোন দুঃখই কম না। ছোট দুঃখ, বড় দুঃখ, সব দুঃখই সমান”।

    আরও পড়ুনঃ কালজয়ী নাটক “কোথাও কেউ নেই” এর সেরা কিছু কথোপকথন

    আধুনিক এ সময়ে আমরা অনেক ভণিতার আশ্রয় নিয়ে থাকি, ভাব ধরি যেন এসব দুঃখ-কষ্ট আমাদের স্পর্শ করতে পারে না। তবে পরম সত্য হচ্ছে আমরা সুন্দর করে লুকাতে পারি, তা যদি না-ই হয় তাহলে একা হলে জীবনের সকল দুঃখের কথা মনে পরে কেন।

    ব্যক্তিজীবন বা নাগরিক জীবন সকল ক্ষেত্রেই আমরা সবাই নিজের বর্তমানের এই দুঃখ-কষ্ট কে কাটিয়ে ওঠার জন্য কাজ করে যাই, অপেক্ষা করে যাই একটা বেটার লাইফের। নিন্মবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবার অপেক্ষা করে যায় তাদের সন্তানটি এক সময়ে উপার্জন করবে, সংসারের এই টানাটানি আর থাকবে না, উচ্চবিত্তরা অপেক্ষা করে যায় আরও ভালো কিভাবে থাকা যায় তা নিয়ে। চরম সংকটে আমরা অপেক্ষা করে যাই সংকট কেটে যাওয়ার। আর এই অপেক্ষাই আমাদের বাচিয়ে রাখে, প্রেরণা দেয় বাচার, কেটে যায় জীবন।

    Download

    এমনি এক অপেক্ষারত স্ত্রী সুরাইয়া। যিনি অপেক্ষা করে আছেন তার স্বামী হাসানুজ্জামানের জন্য। বছর পাঁচেকের ছেলের দাঁত পরার খবর দিলেন স্বামীকে, তাড়াতাড়ি অফিস থেকে আসবে আজ। সেই হাসানুজ্জামান কোন এক অজানা কারনে আর ফিরলেন না বাসায়। পরিবারে অনাগত সদস্যের আগমনের খবরও দেওয়া হয় নাই স্বামীকে। হাসানুজ্জামানের এই না ফেরা স্ত্রী সুরাইয়ার উপর তীব্র প্রভাব ফেলল, স্বাভাবিক আচরণ আর করা হল না কারো সাথে। মেয়ে সুপ্রভা, ছেলে ইমন, ইমনের চাচা ফিরোজের সাথে সমান অস্বাভাবিক আচরণ।

    আরও পড়ুনঃ বাদশাহ নামদার রিভিউ PDF হুমায়ূন আহমেদ

    বাবার আদর না পাওয়া ইমনের আবেগের আশ্রয়স্থল হয় চাচা ফিরোজ। ইমন-সুপ্রভাকে নিয়ে সুরাইয়ার স্থান হয় ভাই জামিলুর রহমানের বাড়িতে। বাইরে থেকে এক কঠিন হৃদয়ের মানুষ জামিলুর রহমান সারাজীবন ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যস্ত থাকায় সংসারের প্রতি তেমন খোঁজখবর রাখা হয় নাই কখনও। মামাতো ভাই টোকন, শোভন আর বোন মিতুর সাথে বেরে ওঠা ইমন, সুপ্রভার।

    কোন এক পীরের মাধ্যমে শুনে সুরাইয়া তীব্রভাবে বিশ্বাস করে ইমনের বিয়ের দিন হাসানুজ্জামান ফিরে আসবেন। নানা চড়াই-উতরাইয়ে তাদের জীবন চলে। জামিলুর রহমানের হৃদয়ের কোমল দিকটি পরে ভাগ্নি সুপ্রভার উপর, স্নেহ ভালবাসায় সব কষ্ট ভুলে থাকে সুপ্রভা। মায়ের খিটখিটে মেজাজের মাত্রা দিনদিন বাড়তে থাকলেও সুপ্রভা ইমন স্বাভাবিক ভাবেই নেয়। প্রখর সুচতুর জ্ঞানের মাধ্যমে মিতুর আলাদা একটা দক্ষতা তৈরি হয়, অনেক কিছুই ধারনা করে বলে দিতে পারে।

    Download

    একসাথে বেরে উঠতে উঠতে ইমন-মিতু একে অন্যের প্রতি অনুভূতি লক্ষ করে, মিতু বিভিন্ন সময়ে বললেও ইমন কখনো তা প্রকাশ করে না। মায়ের প্রতি অভিমান আস্তে আস্তে তীব্র হয় সুপ্রভার। সবকিছু ঠিকভাবে চললেও সুরাইয়া তীব্রভাবে বিশ্বাস করে একদিন হাসানুজ্জামান ফিরবেন। দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ঘটনায় তিনি স্মৃতিচারণ করেন স্বামীর, গভীরভাবে ধারণ করেন। ইমনের বিয়ের ব্যবস্থা করেন, পুরানো সেই আগের বাসায় আগের মত করে আবার সাজান বাড়িটাকে। বিয়েরদিন রাতে সুরাইয়া বসে থাকেন বারান্দায়, কলিং বেল বেজে ওঠে, তবে কি ফিরে আসে হাসানুজ্জামা, জানতে হলে পড়তে হবে বইটি।

    আরও পড়ুনঃ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার

    জীবন ক্যানভাসে বৃহত্তর দৃষ্টিতে তাকালে দেখতে পাব যে আমরা সবাই কোন না কোন এক চক্রে আবদ্ধ, এটা একটা নেভার এন্ডিং লুপের মত। সংসারে কেউ নতুন বউ হয়ে আসেন, সন্তান হয়, তাদের বিয়ে হয়, ঐ নতুন বউটি হয়ে যায় শাশুড়ি, এভাবে চলতে থাকে। জীবন চক্রের প্রয়োজনেই কি আমাদের প্রত্যেকের আবির্ভাব হয়? এই জীবন সংগ্রাম চালিয়ে নেয় এক একটা আশা, এক একটা নতুন অপেক্ষা। একটি পূরণ হলে নতুন আরেক টি আশা বা অপেক্ষার তৈরি হয়। মাসলো’র চাহিদা তত্ত্বে পড়েছিলাম এমন। রুদ্রকে লেখা তসলিমার চিঠির একটা অংশ মনে পরে,

    “জীবন এবং জগতের তৃষ্ণা তো মানুষের কখনো মেটে না, তবু মানুষ আর বাঁচে ক’দিন বলো?”

    আসলে মানুষের জীবনে অপেক্ষা না থাকলে জীবন চলতে কষ্ট হয়ে যেত। হাসানুজ্জামানের জন্য সুরাইয়ার অপেক্ষা, গভীরভাবে ধারণ করা দেখে পাঠক সুরাইয়ার মত স্ত্রী চাইবে মনে মনে, নিজের অগোচরেই। মিতুর মত আকর্ষণীয় ব্যাক্তিতে হৃদয়ে স্থান করে নেবে এক আত্মবিশ্বাসী তরুণী। সুপ্রভার করুণ পরিণতি পাঠকের চোখে পানি এনে দেবে। মাঝে মাঝে হাসানুজ্জামানের প্রতি অনুরাগ আসবে, সুরাইয়ার প্রতিও জমবে ক্ষোভ। হাসানুজ্জামানের প্রতি গভীর অনুভূতি লক্ষ্য করে ছাপিয়ে যাবে সকল ক্ষোভ। চাচা হিসেবে ফিরোজের ভূমিকা পাঠক ব্যক্তিজীবনে অভাব অনুভব করতে বাধ্য হবে। সর্বোপরি, বইটি তীব্রভাবে নাড়া দিয়ে যাবে পাঠককে। গতকাল শেষ করার পর থেকে মাথায় শুধু সুরাইয়া, সুপ্রভা , ইমন, মিতু হাসানুজ্জামান, জামিল এগুলোই ঘুরপাক খাচ্ছে। সুপ্রভার শেষ পরিণতিতে লেখকের উপর তীব্র অভিমান জমে আছে।

    Download

    শেষ করছি ফ্ল্যাপে লেখা অংশটুকু দিয়ে-

    “মানুষের জীবন কি চক্রের মতো? চক্রের কোন শুরু নেই, শেষ নেই। মানব জীবনও কি তাই? রহস্যময় চক্রের ভেতর এই জীবন ঘুরপাক খেতে থাকে? শুরু নেই,শেষ নেই। চক্র ঘুরছে। এই চক্রের ভেতর ঘুরপাক খেতে খেতে অপেক্ষা করে কেউ কেউ।কিংবা সকলেই। কিসের অপেক্ষা?”

    আরও পড়ুনঃ দেয়াল উপন্যাস হুমায়ুন আহমেদ PDF রিভিউ

    ভালোলাগার কয়েকটি উক্তি-

    “স্নেহ-মমতা-ভালবাসা এই ব্যাপারগুলি আসলেই খুব অদ্ভুত। কোন জাগতিক নিয়মকানুনের ভেতর এদের ফেলা যায় না”
    “কিছু কিছু মানুষ স্নেহ এবং ভালবাসাকে চরিত্রের বিরাট দুর্বলতা মনে করেন। সেই দুর্বলতা প্রকাশিত হয়ে পড়লে তাদের লজ্জার সীমা থাকে না”
    “মৃত মানুষদের জন্যে আমরা অপেক্ষা করি না। আমাদের সমস্ত অপেক্ষা জীবিতদের জন্যে”
    “দিনের বেলা যে কোন কষ্টই সহনীয় মনে হয়- রাতে ভিন্ন ব্যাপার”
    “মানুষের বেচে থাকার জন্যে অপেক্ষা নামের ব্যাপারটির খুব প্রয়োজন। অপেক্ষা হচ্ছে মানুষের বেচে থাকার টনিক”
    “মানুষ অদ্ভুত প্রাণী, কখন কোন কোন নেশা ধরে যায় বলা কঠিন”
    “পৃথিবীর সবচে আনন্দময় জিনিসগুলির জন্যে কিন্তু টাকা লাগে না। বিনামূল্যে পাওয়া যায়। যেমন ধর জোছনা, বর্ষার দিনের বৃষ্টি, মানুষের ভালবাসা”

    বইঃ অপেক্ষা Download (PDF)
    লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ

    রিভিউ করেছেনঃ সজীব আল মাসুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

    ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

    Download
    Facebook Comments
    x
    error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করুন