বইঃ শেষের কবিতা
লেখকঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
মূদ্রিত মূল্যঃ ৯৫ /=
প্রাপ্তিস্থানঃ সূচীপত্র প্রকাশন (৩৮/২ক বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০)
প্রথমেই বলি সমাপ্তি নিয়ে। শেষের কবিতার সমাপ্তি নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে। কারো কাছে প্রহসন লেগেছে, কারো কাছে লেগেছে নাটক। কিন্তু শেষের কবিতায় অমিত আর লাবণ্যের মধ্য দিয়ে যে অনুভূতির গভীরতা, শব্দের দ্যুতি আর অলংকরণ ফুটে উঠেছে তা উপন্যাসটির সবকিছুকে ছাপিয়ে।
শেষের কবিতাকে ঘিরে নানাজনের নানা মত, আলোচনা-সমালোচনা থাকলেও আমার কাছে এটি একটি অনবদ্য সৃষ্টি।
‘শুধু উদ্ভিদজগৎ নিয়ে যদি বিভূতিভূষণের আরণ্যক সফল হতে পারে, শুধু বিহঙ্গকূল যদি বনফুলের ডানা উপন্যাসকে চরিতার্থতা দেয়,তবে শুধুমাত্র প্রেমপ্রাসঙ্গিক হওয়ায় ‘শেষের কবিতা’কে কেন বাতিলের কাতারে ফেলতে হবে জানা নেই আমার।’
আরও পড়ুনঃ চোখের বালি উপন্যাস PDF রিভিউ
কাহিনীঃ
অনেকেই বলেন শেষের কবিতা কাহিনীহীন। আমার মনে হয় রবীন্দ্রনাথ কাহিনীরেখা কখনো বর্জন করেন নি।’শেষের কবিতায় চতুরঙ্গে সামান্য বা বক্রায়িত হলেও কাহিনী রয়েছেই।কেবল ভাষার ব্যূহজাল ভেদ করে প্রবেশ করতে হয় সেখানে।
শেষের কবিতা একটি রোমাঞ্চকর কাব্যিক নভেল।
একটি উচ্চ-মনস্তাত্ত্বিক প্রেমের কাহিনী। এতে প্রেমের দুটি সরূপকে খুব স্পষ্ট করে প্রকাশ করা হয়েছে। স্থান, কাল, পাত্রবেদে মানুষের মাঝে যে একাধিকবার প্রেম আসতে পারে তার একটি নিদর্শন ফুটিয়ে তোলা হয়েছে …
কিন্তু মনের মধ্যে সেই প্রেমদ্বয়ের মাত্রা বা শ্রদ্ধা ভিন্ন থাকে…
“কেতকির সঙ্গে আমার সম্বন্ধ ভালোবাসারই, কিন্তু সে যেন ঘড়ায়-তোলা-জল–প্রতিদিন তুলব, প্রতিদিন ব্যবহার করব। আর লাবণ্যর সঙ্গে আমার যে ভালোবাসা সে রইল দিঘি, সে ঘরে আনবার নয়, আমার মন তাতে সাঁতার দেবে।”
আরও পড়ুনঃ কপালকুন্ডলা PDF বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
কেউ কেউ বলেন ‘শেষের কবিতার কবিতাক্ত ভাষা ব্যবহার, সম্পূর্ণত বিষয়ানুগ। কিন্তু হিসেব মেলালে দেখা যাবে, মেঘনাদবধ কাব্য-এর ভাষা, হুতোম প্যাঁচার নকশা-র ভাষা, দুর্গেশনন্দিনী-র ভাষা, গৃহদাহ-র ভাষা, কাঁদো নদী কাঁদো আর গঙ্গা-র ভাষা যেমন বিষয়ের সঙ্গে ওতপ্রোত, তেমনি শেষের কবিতার বিষয়ের সঙ্গে তার ভাষার সম্পর্ক ওতপ্রোত ও যথার্থ।
বইটি পাঠ অভিজ্ঞতায় মনে হয়েছে রবীন্দ্র-সাহিত্যের অনন্য এক সৃষ্টি “শেষের কবিতা।” পড়ার পরে মনে গেঁথে রয়, যা এই উপন্যাসের অন্যতম এক সার্থকতা। অমিত ও লাবণ্যের বোধ, আত্মতা ও ব্যক্তিত্বের ঘূর্ণিঝড় চলেছে পুরো উপন্যাস জুড়ে। অমিত ও লাবণ্য দুটি চরিত্রই আবর্তমান। ওরা কেউই এক জায়গায় স্থির থাকেনি। আর এই আবর্তমানতাই হয়ত সমান্তরাল ঘটনাপ্রবাহে সৃষ্টি করেছে উচ্চাবচতা,সংঘর্ষ আর জোড়া লাগা। যা সবচেয়ে ছুঁয়ে যাওয়ার।
আর অমিত রায়ই বোধহয় বাংলা উপন্যাসের সর্বশেষ নায়কোচিত নায়ক, কেননা তারপরই অনায়ক নায়করা বাংলা উপন্যাসে সফলভাবে তাদের জায়গা করে নিয়েছে। আর এই সর্বশেষ নায়কোচিত নায়ককে সফল করে তুলতে সাহায্য করেছে অপর কেন্দ্রীয় চরিত্র লাবণ্য। লাবণ্যই অমিতের আত্মোপলব্ধি ঘটিয়েছে।
সবশেষে বলব, ‘এই উপন্যাস আমার কাছে গভীর বেদনাখচিত-আনন্দ আছে এর অন্তসারে। অমিত-লাবণ্য দুজনই দুজনকে পেয়েছে, কিন্তু পায়ওনি আবার। ভালো লাগার এই বইটি ছড়িয়ে পড়ুক পাঠক হৃদয় থেকে হৃদয়ে।’
আরও পড়ুনঃ গল্পগুচ্ছ রবীন্দ্রনাথ PDF Download রিভিউ
বই_থেকেঃ
“ফ্যাশনটা হলো মুখোশ।স্টাইলটা হলো মুখশ্রী।”
“বিধাতার রাজ্যে ভাল জিনিস অল্প হয় বলেই ভালো, নইলে সে নিজেরই ভিড়ের ঠেলায় হয়ে যেত মাঝারি।”
“পৃথিবীতে হয়ত দেখবার যোগ্য লোক পাওয়া যায়, তাকে দেখবার যোগ্য জায়গাটি পাওয়া যায় না।”
“আপন রুচির জন্য আমি পরের রুচির সমর্থন ভিক্ষে করি নে।”
“নাম যার বড়ো তার সংসারটা ঘরে অল্প, বাইরেই বেশি।”
“বরাদ্দ ছুটিকে ছুটি বলিই নে। যে ছুটি নিয়মিত তাকে ভোগ করা আর বাঁধা পশু শিকার করা, একই কথা।”
“ভালবাসা খানিকটা অত্যাচার চায়, করেও।”
আরও পড়ুনঃ হৈমন্তী গল্প PDF Download রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
“সহজকে সহজ রাখতে হলে শক্ত হতে হয়।”
“অধিকাংশ মানুষই ভীরু, অকুণ্ঠিত দুর্ব্যবহারের কাছে তারা হার মানে।”
“একদিন আমার সমস্ত ডানা মেলে পেয়েছিলুম আমার ওড়ার আকাশ; আজ আমি পেয়েছি আমার ছোট্ট বাসা, ডানা গুটিয়ে বসেছি। কিন্তু আমার আকাশও রইল।”
“কেতকীর সঙ্গে আমার সম্বন্ধ ভালোবাসারই,কিন্তু সে যেন ঘড়ায় তোলা জল-প্রতিদিন তুলব, প্রতিদিন ব্যবহার করব। আর লাবণ্যের সঙ্গে আমার ভালোবাসা সে রইল দীঘি,সে ঘরে আনবার নয়, আমার মন তাতে সাঁতার দেবে।”
লিখেছেনঃ ফাহিদা ফারজানা
বইঃ শেষের কবিতা [ Download PDF ]
লেখকঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন