কবি – তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
বাংলা সাহিত্যে যে কয়েকজন বন্দ্যোপাধ্যায় অবদান রেখেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। তার ছোট গল্প, উপন্যাস, কবিতা সব ক্ষেত্রে ছিল বিচরণ। আসি কবি উপন্যাসের দিকে-
কবি একটি সামাজিক রোমান্টিক উপন্যাস, যেখানে ডোম বংশে জন্ম নেওয়া নিতাই নিজ সম্প্রদায়ের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ছিলেন। নিজের ইচ্ছায় শিক্ষা গ্রহন করে, পিতৃ পেশা চুরি ডাকাতি থেকে সড়ে এসে সাধারণ কুলি পেশা কে গ্রহণ করেছেন। এরি মধ্যে একবার কবি গানের দল আসে তার গ্রামে, তৎকালীন সময়ে গ্রামে গ্রামে এরকম গানের উৎসব চলতো। সেই দলের প্রধান কবিয়াল টাকা বকেয়া পড়ায় অন্য একখানে থেকে বায়না আসায় দল ত্যাগ করে। তখনি নিতাই এর প্রতিভা প্রকাশের সুযোগ আসে।
ঘর ত্যাগ করে, রেলওয়ে স্টেশনে বন্ধু রাজনের কাছে থাকা শুরু করে। এখানে সে রাজনের শালিকা ঠাকুরঝি র সাথে মনের লেনাদেনা পূর্ণ করে। ঠাকুরঝি র কালো চেহারা হওয়ায় প্রত্যহ লাঞ্চিত হত, প্রথম তার কালো চেহারা নিয়ে নিতাই বলে,
“কালো যদি মন্দ তবে চুল পাকিলে কান্দ ক্যানে?”
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
তখনি নিতাইয়ের প্রতি দুর্বলতা কাজ করে, গরুর দুধ তাকে দেওয়া শুরু করে বাকিতে। এর মধ্যে গায়ে ঝুমুরের দল আসে, এরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কালীন সময়ের দিকে বিশেষ প্রভাব রাখে বাংলার সংস্কৃতি তে। ঝুমুর দল অশ্লীল নৃত্য পরিবেশন করতো, মূলত গানের নৃত্য ছাড়াও এরা যৌন কর্মীও ছিল। নিতাই দের গ্রামে এরা আসলে নিতাইয়ের বাসায় উঠে। তার কবি প্রতিভা দেখে তাকে ঝুমুর দলে যোগ দিতে বলে। কিন্তু সে রাজি হয়না। তারা গ্রাম ছেড়ে অন্য গ্রামে চলে যায় গানের আসরে।
নিতাইয়ের সাথে ঠাকুরঝির সম্পর্কেরর কথা জানাজানি হলে। ঠাকুরঝি বলে কিছু একটা নিতাই করেছে, তখন নিতাই ঠাকুরঝি যাতে সুখে থাকে এজন্য গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার মনস্থ করে। ঝুমুরদলের কবিয়াল চলে যাওয়ায় তাকে দলের কর্তা মাসি নিতাই কে নিতে পাঠায়। নিতাই চলে যায় ঝুমুরদলে। এরপর তার অশ্লীল নৃত্যের জন্য গান গাইতে হয়।ঝুমুরদলের প্রধান নৃত্যশিল্পী বসন্তের সাথে তার বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাকে এক প্রকার পত্নীর মত করে দেখা শুরু করে। কিন্তু যৌনকর্মীদের নানা রকম রোগ বালাই হয়।বসনের ও তাই হয়। কাশির সাথে রক্ত আসা শুরু হয়। এছাড়া গর্ভপাতের জন্য আরো বেশি অসুস্থ হয়। শেষে তার মৃত্যু সন্মিকটে আসে। নিতাই তাকে ভগবানের নাম নিতে বললে, বসন আক্ষেপ করে বলে,
ভগবানের নাম কেন নেব?
আমাকে ভগবান কি দিয়েছে? না স্বামী না পুত্র!
তবে সব মানুষের শেষ জীবনে ধর্মের প্রতি একটা দুর্বলতা কাজ করে, যা তার মাঝেও দেখা গেছে, বসন বলেছিল আসছে জনমে মোরে রক্ষা করো। জীবন এত ছোট ক্যানে, বসনের মৃত্যুর পর নিতাই ঝুমুরদল দ্যাগ করে, ধর্মে মনোনিবেশ করে। কাশী যায়। শেষে গ্রামে ফিরে আসে। এসে রাজনের সাথে দেখা হলে বলে ঠাকুরঝি কই?
রাজন জানায় ঠাকুরঝি মারা গেছে।
নিতাই আবার আক্ষেপ করে বলে,
জীবন এত ছোট ক্যানে?
লেখক মানুষের প্রথম জীবনের বড় অর্জনের পিছে কেমনে ছোটে তা দেখিয়েছেন, কিন্তু জীবনের শেষ মুহুর্তে এসে উপলব্ধি করেছেন, জীবন টা অনেক ছোট! তবে কবি উপন্যাসের কবির সাথে মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবনের মিল খুঁজে পাওয়া যায়!
ফারুক শেখ
শিক্ষার্থী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
কবি তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় pdf download করতে এখানে ক্লিক করুন
বইয়ের ফেরিওয়ালা থেকে বই ধার করতে সদস্য হোন
বইয়ের ফেরিওয়ালায় লিখতে চাইলে এইখানে লেখা জমা দিন