গুণী লেখক মোশতাক আহমেদ (১৯৭৫) এর সাথে আমার পরিচয়ের সূত্রপাত হলো “স্বপ্নস্বর্গ” উপন্যাসের মধ্য দিয়ে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ থেকে এম ফার্ম ডিগ্রি অর্জন করেছেন। পরবর্তীকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে এমবিএ এবং ইংল্যান্ডের লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্রিমিনলজিতে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
বর্তমানে তিনি পুলিশ বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। লেখক পরিচিতি উল্লেখ করার মূল কারণ হলো একজন পুলিশ কর্মকর্তার লেখক সত্তা দারুণ ভাবে পাঠককূলকে প্রভাবিত করেছে। তরুণ প্রজন্মের কাছে তিনি দারুণভাবে পরিচিত-সমাদৃত এবং সেই অজানা ঘোরের সত্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যেই আমার “স্বপ্নস্বর্গ“কে হাতে তুলে নেয়া।
বহুদিনবাদে আমি প্যারাসাইকোলজিক্যাল উপন্যাস হাতে তুলে নিয়েছি, মাঝে বেশ কয়েকবছর এই ধারার উপন্যাস পড়া হয়ে ওঠেনি। প্যারাসাইকোলজি হলো মনোবিজ্ঞানের এমন একটি শাখা যা আপাত অব্যাখ্যাত মানসিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। এটি বিজ্ঞানেরও এমন একটি শাখা যা অন্য সকল শাখার সমন্বয়ে কিছু তথ্য প্রদান করে থাকে।
সুতরাং পাঠকের অনুমান করতে কোন অসুবিধে হয়না যে বইয়ের ভেতরে প্রবেশ করা মাত্র তাকে ব্যাখ্যাতীত কিছু অভিজ্ঞতা এবং ঘটনার সম্মুখীন হতে হবেই। উপন্যাস সাহিত্যের এই ধারাটি বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে, কারণ বাস্তবতার গণ্ডির বাইরে অন্যরকম একটা আবছায়া কুজ্ঝটিকাময় প্রহেলিকা তাকে সম্মোহিত করে রাখে আবার সকল ব্যাখ্যার বাইরে যেয়ে ভিন্ন মতকে আঁকড়ে ধরে মনের তৃপ্ততা খুঁজে নেয়ার সুজোগ লেখক করে দেন।
উপন্যাসের মূল কাহিনির এক-তৃতীয়াংশ জুড়ে আছে নীরবের কাল্পনিক স্বপ্নস্বর্গের অস্তিত্ব। উপন্যাসের নায়ক নীরবের মনোলোকে তীব্রভাবে ছাপ ফেলে ক্রমশই তাকে গ্রাস করে নিচ্ছে এই স্বপ্নস্বর্গ। বাস্তব পৃথিবীর সাথে এই স্বপ্নস্বর্গের কোন যোগসাজশ নেই। মূলত নীরব “সিজোফ্রেনিক ডিলিউশনাল ডিসঅর্ডার” নামক মনোরোগে আক্রান্ত। এই ধরনের রোগী এমন কিছুতে বিশ্বাস করে বাস্তবে যার কোন অস্তিত্ব নেই এবং ঐ ভ্রান্ত বিশ্বাস থেকে তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা দুঃসাধ্য।
নীরব বিশ্বাস করে লাল শাড়ি, নীল পাঞ্জাবি, কলমিফুল, কাশফুল, ঝিরঝিরে বাতাস, আঁকাবাঁকা মেঠোপথ এসব কিছুই পৃথিবীতে নেই, এগুলো কেবল শান্তির স্বপ্নস্বর্গে পাওয়া যায়। আর পাওয়া যায় প্রিয় মানুষ ফারিয়ার সান্নিধ্য; পৃথিবীতে যার কোন অস্তিত্ব নেই অর্থাৎ সে মৃত এবং ফারিয়ার মৃত্যুর জন্য নীরবকেই দায়ী করা হয়। অসুস্থ নীরবকে বাস্তব পৃথিবীতে প্রচন্ড শ্রম এবং বুদ্ধিদীপ্ততার মাধ্যমে আবার বাস্তব পৃথিবীতে ফিরিয়ে নিয়ে আসে শবনম, পৃথিবীকে ভালোবাসতে শেখায়। এভাবেই কেটে যায় কয়েকটি বছর, কিনতু সুখী পরিবারের তকমাটা চিরস্থায়ী হবার আগেই সবকিছু লন্ডভন্ড হবার উপক্রম।
স্বপ্নস্বর্গ আবার তাকে হাতছানি দেয়, নীরব এবার সিদ্ধান্ত নেয়া পুরো পরিবার নিয়ে স্বপ্নস্বর্গে চলে যাবে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য। কিনতু তার স্ত্রী-পুত্রকে স্বপ্নস্বর্গে নিয়ে যাবার একটাই উপায়, খুন করতে হবে তাদের। কিনতু কিভাবে সম্ভব? তাহলে কী পরিণতি নেমে আসবে শবনম এবং তাদের একমাত্র পুত্র নিশবের জীবনে? নীরব কি আর কখনোই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে? নীরব কি সত্যিই তার প্রাক্তন প্রেমিকা ফারিয়ার খুনি? চমকপ্রদ এবং বেশ নাটকীয় সমাপ্তি অপেক্ষা করছে পাঠকের জন্য। তবে আর দেরি কেন, হাতে তুলে নিতে পারেন সহজ – সাবলীল ভঙ্গিমায় রচিত “স্বপ্নস্বর্গ”।
উপন্যাস: স্বপ্নস্বর্গ ঔপন্যাসিক: মোশতাক আহমেদ প্রকাশনী: অনিন্দ্য মুদ্রিত মূল্য: ২৫০ টাকা রিভিউ করেছেন: প্রিয়াংকা বিশ্বাস বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বইয়ের ফেরিওয়ালা থেকে বই ধার করতে সদস্য হোন