বইয়ের নাম: জানালার ওপাশে
লেখক: সাদাত হোসাইন
প্রকাশনী: ভাষাচিত্র
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৬২
মুদ্রিত মূল্য : ১৫০৳
হাল আমলের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক সাদাত হোসাইনের এই গল্পগ্রন্থটি ছোট বড় মিলিয়ে মোট ছয়টি গল্পে লিখিত। বইয়ের নাম ভূমিকার প্রথম গল্প হলো “জানালার ওপাশে”।
১। জানালার ওপাশে –
শুরুটা ফোনকলে আনিকা এবং রাতুলের ঝগড়ার সংলাপের মধ্যে দিয়ে। এরপর মানসিক ট্রামায় ভোগা রাতুল কয়েকদফা কল রিজেক্টের পরে প্রেমিকা আনিকার সাথে কথা বলে। তার মানসিক অস্থিরতার কারণ হিশেবে লেখক রেইনট্রি গাছের পাশের একটি নীল প্লাস্টিকের জানালা, ময়লার ড্রেন, হাতল ভাঙা চাপকল এবং এসবের সাথে জড়িতে এক কাহিনী উল্লেখ করেন।
২। পুঁটিমাছ – এটাকে প্রেমের গল্প বলা যায়। প্রেমের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে
একদিনের জন্য রাজশাহী থেকে ঢাকা আসছে নীতু। কিন্তু, ভুলোমনা রফিক ঘুম থেকে উঠে দেখে তার পকেটে মাত্র তেরো টাকা! ওদিকে নীতুর স্বপ্ন রফিক তাকে সতেরোটা গোলাপ উপহার দেবে। এমন উভয় সংকটে যখন নাস্তানাবুদ অবস্থা তখন রফিককেই সারপ্রাইজ দেয় নীতু।
আরও পড়ুনঃ আন্দরমহল – সাদাত হোসাইন পিডিএফ
৩। সাইকেল-
আফজাল হোসেন এককালে সাইকেলে অফিস করলেও এখন বয়সের ভারে লোকাল বাসের ধাক্কি সামলিয়ে যাতায়াত করেন। অফিসের বড় স্যারের মতো তারও একটা গাড়ি থাকবে এমন শখ। যথারীতি টাকা জমানো হলেও হচ্ছে হবে করে সন্তানদের সুখের জন্য সে গাড়ি আর কেনা হয়ে উঠে না। ঘটনাপ্রবাহে এক সময় আবারও সম্বল হয় সেই জং ধরা দুই চাকার সাইকেল।
৪। সোবহান সাহেব মারা গেছেন-
এই গল্পের প্লট অনেকটা হুমায়ূন আহমেদের “মেঘের উপর বাড়ি” এর মতো। সোবহান সাহেব মারা যাবার পরেও তিনি সবকিছু শুনতে ও দেখতে পান। এ গল্পে লেখক শোকের চেয়ে সম্পত্তির উপরে যে প্রিয়জনদের লোভ-লালসার পারদ উর্ধ্বমুখী থাকে সেটাই টুইস্ট হিশেবে দেখাতে চেয়েছেন।
৫। সে-
নামটা শুনে রোমান্টিক জনরার গল্প মনে হতে পারে। তবে, আমার মনে হচ্ছে লেখক জোর করেই রোমান্টিক বানানোর চেষ্টা করেছেন। প্রেমিকা শীলাকে হারানোর ভয়ে সবসময় আতঙ্কে থাকে হাসান। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে মনমালিন্য হয়। শেষ দিকে বাংলা সিনেমার সস্তা ঘটনার মতো তাদের মিল করা হয়।
৬। বোধ-
এই গল্পের কথক আনু নামের এক ছেলে। ঘোরতর বর্ষার বন্যায় সবকিছু ডুবি ডুবি অবস্থা। সেই সময় গ্রামে আসে মকবুল হোসেনের শহুরে ছেলে শফিক,বউমা আর ছোট্ট নাতী বোধন। একই সময়ে তাদের আদুরে গাভী কালুর সদ্যোজাত বাছুর পানিতে ডুবে মারা যায়। এ নিয়ে মকবুল বা তার স্ত্রীর শোক হাস্যকর মনে হয় শফিকের। কিন্তু, প্রকৃতি শফিক ও কালুর শোক একাকার করে দেয়।
আরও পড়ুনঃ যে বই গুলো জীবনে একবার হলেও পড়া দরকার
পাঠ্যনুভূতি:
বইটা হুমায়ুন আহমেদের বইয়ের অনুকরণে নামকরণ করা হয়েছে কিংবা হুমায়ূনী ঢঙে লেখা কি না আমি সেদিকে যাবো না। তবে বইয়ের প্রতিটা গল্পে লেখক একই বাক্যে বারবার ব্যবহার করে মান কমিয়েছেন। যেমন,
প্রথম গল্পে রাতুল আর আনিকার মধ্যকার কথপোকথনে লেখক একই ধরনের বাক্য অনেকবার পুনরাবৃত্তি করেন। উদাহরণ ,গুনিনি। গুনিনি মানে? রিপ্লাই দাওনি কেন? কি রিপ্লাই দেব? কি রিপ্লাই দেব মানে? স্বাভাবিক হতে হবে মানে! স্বাভাবিক হতে হবে মানে কি? তুমি কি বলতে চাইছো? কি বলতে চাইছো তুমি?
এছাড়াও নীল প্লাস্টিকের জানালা, রেইনট্রি, চাপকল, চাতাল…..এসব শব্দ কয়েক বহুবার উল্লেখ হয় যে পড়তে গেলে রীতিমতো বিরক্তিকর লেগেছে!
আরও পড়ুনঃ হুমায়ূন আহমেদের সকল বুক
দ্বিতীয় গল্পে লেখক সম্ভবত বই পড়া এবং কাপড় পরা এই দুটোর মধ্যে বানানগত পার্থক্য ভুলে গেছিলেন। এছাড়া গল্পটার প্লট অতি কমন!
পুঁটিমাছ, সে এসব সস্তা প্লটের গল্প। প্লটের গভীরতা কম সাথে দুর্বল বাক্যগঠন। সোবহান সাহেব মারা গেছেন এর মন্তব্য তো বলেই দিয়েছি।
বোধ গল্পটাও বরাবরের মতই শুরু একটা বাক্যকে দুই তিনবার পুনরাবৃত্তি করার মাধ্যমে। বন্যায় পানি উঠা আবার একসাথে তে তে করে রোদ উঠা এই বাক্যটা আমার বোধগম্য ছিল না!
এছাড়াও পুরো গল্পগ্রন্থে লেখক একইরকম বর্ণনায় কোথাও শুধুই বিশেষ্য এবং কোন কোনখানে শুধুই সর্বনামের ব্যবহার করে গিয়েছেন যেটা দৃষ্টিকটু মনে হয়েছে।
লিখেছেনঃ Ismot Jahan Lima
বই: জানালার ওপাশে [ Download PDF ]
লেখক: সাদাত হোসাইন
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
সেই সময়, প্রথম আলো ও পূর্ব পশ্চিম | সুনীলের টাইম ট্রিলজি