Skip to content
Home » সেই সময়, প্রথম আলো ও পূর্ব পশ্চিম | সুনীলের টাইম ট্রিলজি | রিভিউ | PDF

সেই সময়, প্রথম আলো ও পূর্ব পশ্চিম | সুনীলের টাইম ট্রিলজি | রিভিউ | PDF

    purba paschim sei somoy Prothom alo Sunil Gangopadhyay সেই সময় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    Redirect Ads

    বইঃ সেই সময়, প্রথম আলো, পূর্ব পশ্চিম (টাইম ট্রিলজি)
    লেখকঃ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    টাইম ট্রাভেল এর কাজটা বই সবচেয়ে ভালো করে, বইয়ের মাধ্যমে অনায়াসে হারিয়ে যাওয়া যায় অতীতে, যতবার ইচ্ছে ততবার। আর সেটার জন্য সুনীলের টাইম ট্রিলজি বা ত্রয়ী উপন্যাসটি বেষ্ট। ট্রিলোজিটা শুরু হয় “সেই সময়” দিয়ে, এরপর “প্রথম আলো” আর সবার শেষে “পূর্ব-পশ্চিম”। সিরিয়াল মেইনটেইন করে পড়াটা ভালো। তাহলে সময় অনুযায়ী ঘটনাগুলো বুঝতে খুব সুবিধা হয়।

    Download

    সেই সময়

    কেউ দেশ খোঁজে মহাভারতের পৃষ্ঠায়, কেউ মুঘল ইতিহাসে, কেউ বা সার্ভে অফিসের মানচিত্রে। কিন্তু সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় দেশকে চিত্রিত করেছেন এই বইয়ের বিশাল ক্যানভাসে।
    পাঠকের নিকট সুনীলের সবচেয়ে আকাঙ্খিত বই এবং টাইম ট্রীলোজির প্রথম বই সেই সময় (১৮৪০-৭০ সালের প্রেক্ষাপটে রচিত ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস)।

    শতাধিক বই গবেষণা করে তৎকালীন সমাজের ইতিহাসের নির্যাস টুকু গল্পের আকারে পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন। লেখক নিজেই বলেছেন বইয়ের মূল চরিত্র হচ্ছে সময়। কিন্ত সময়কে জীবন্ত করতে নানারকম কাল্পনিক ও ইতিহাসের বাস্তব চরিত্রের সাহায্য নিয়েছেন।গল্পের মূল চরিত্র নবীনকুমারের মাধ্যমে সময়টাকে বুঝিয়েছেন লেখক। আবার সময়ের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য তাকে মেরেও ফেলেছেন গল্পের শেষে। নবীনকুমারের মৃত্যু পাঠককে কষ্ট দেবে এমনকি লেখককেও দিয়েছে (তিনি স্বীকার করছেন)।

    বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন, দীনবন্ধু মিত্র, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো বেশ কিছু ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব এই বইয়ের অন্যতম চরিত্র।
    বাংলায় যে নবজাগরণ হয়েছিল সেটা সফল হয় নি। তাই নতুন শতকের পানে চেয়ে থেকে স্বাধীনতার দীর্ঘ আশা বুকে নিয়ে নবীনকুমারকে লেখক মেরে ফেলেছেন আঠারশ সত্তর সালে।
    একজন ঔপন্যাসিকের স্বাধীনতা লেখক সম্পূর্ণ ব্যবহার করছেন কারণ ঔপন্যাসিকের ইতিহাস সম্পর্কে জবাবদিহিতা করতে হয় না (ইতিহাসের বড় কোনো তথ্য বিকৃতি না করলে)।

    আরও পড়ুনঃ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত

    Download

    লেখক দীর্ঘ চার পাঁচ বছর পরিশ্রম করে সে সময়ের জমিদার, ধর্ম ও সমাজ সংস্কারক, ভৃত্য, পতিতা, গোমস্তা, লেখক, তোষামোদকারি, সাধারণ মানুষ এদের বিষয়ে একটা সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন (এবং দিয়েছেন)। বিধবা বিবাহ আইন, সিপাহী বিদ্রোহ, নীল বিদ্রোহ এগুলোও এসেছে। লেখক বইটার মাধ্যমে সেই সমাজটাকে পাঠকের মস্তিষ্কে স্ক্যান করে দিয়েছেন। বাকিটা পাঠকের দায়িত্ব।

    “জন্মের পর বেশ কিছুদিন বাচ্চারা ঘুমিয়েই কাটায়।
    নিদারুণ অন্ধকার থেকে এসে এই পৃথিবীর আলো সইতে যথেষ্ট সময় লাগে”
    “কান্নার ও ক্লান্তি আছে।এক সময় থামতেই হয়”
    “চাঁদকে দেখতে বড় সুন্দর কিন্তু সে একা”
    “শোকের বাড়িতে সবাই যে শোকে কাঁদে তা নয়। কাঁদতে হয় বলেও অনেকে কাঁদে।”
    “সন্ধ্যার ক্ষীণ আলোয় সবকিছুই যেন অচেনা মনে হয়।”

    [ Download ]

    প্রথম আলো

    (১৮৮৩-১৯০৭)
    বাংলাদেশের দুইটি বহুল পরিচিত পত্রিকার নাম বাংলা সাহিত্যের দুইটা দীর্ঘ উপন্যাসের নামানুসারে করা হয়। একটি সুনীলের “প্রথম আলো” অন্যটি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ”মানবজমিন”।

    প্রথম আলো উপন্যাস লিখতে লেখক তার জীবনের সবচেয়ে বেশি সময় এবং পরিশ্রম দিয়েছেন সেটা নিজেই বলেছেন। প্রায় দুই শতাধিক গ্রন্থ অধ্যায়ন করেছেন, ভ্রমন করেছেন তথ্যানুসন্ধানে।

    Download

    ত্রিপুরার রাজ পরিবারের কাহিনী দিয়ে শুরু হয়েছে উপন্যাসের গল্প। পরে সমগ্র ভারতবর্ষে এসে যায় ধাপে ধাপে। এই উপন্যাসের সময়সীমার জাতীয়তাবোধ ও রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষই প্রধান ঘটনা।

    তৎকালীন দেশের অবস্থাকে পাঠকের কাছে প্রানবন্ত করতে লেখক এনেছেন শ্রীরামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের ধর্ম আন্দোলন, অন্যদিকে জ্ঞানচর্চা, থিয়েটারের ভূমিকা, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রুপান্তর, জাতীয় কংগ্রেসের প্রবীন ও নবীন নেতা ও তরুনদের মতবিরোধ, দুর্ভিক্ষ ও প্লেগ রোগ, হিন্দু মুসলমানের সাম্প্রদায়িক ভেদ-রেখা সৃষ্টি ইত্যাদি বিষয়গুলো।

    কাল্পনিক চরিত্র ভরত আর ভূমিসূতা পাঠককের মনে দীর্ঘ সময়ের জন্য নাড়া দেবে এই বই পাঠে। বেশ দীর্ঘ উপন্যাস (বিমল মিত্রের লেখা বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে বড় উপন্যাস ”কড়ি দিয়ে কিনলাম” এর পরে পরের সারির বইগুলোর মধ্যে এটাও পড়ে যাবে)

    কয়েকটি প্রিয় উক্তিঃ
    *মাতৃস্নেহে পায়নি যে তার কাছে স্নেহ ব্যাপারটাই অজ্ঞাত।
    *বন্ধুত্ব আর প্রেম প্রায় কাছাকাছি।প্রেমে ডানা থাকে বন্ধুত্বে ডানা থাকে না।
    *একবার ভদ্রতার স্তরে উন্নিত হলে মানুষ ভদ্রতার কৃতদাস হয়ে যায়।

    [ Download ]

    Download

    পূর্ব পশ্চিম

    (দেশ বিভাগ থেকে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ….)
    সুনীলের টাইম ট্রীলোজির অন্যতম বিশিষ্ট ও বিশাল ক্যানভাসে রচিত পূর্ব-পশ্চিম উপন্যাস।এটিই এই ট্রিলজির শেষ বই। এই জেনারেশনের সাথে বাকি দুটোর চেয়ে বেশি রিলেট করবে।

    দেশ বিভাগ এখন প্রতিষ্ঠিত সত্য তবুও বিচ্ছেদ বেদনা আজও রয়ে গেছে বাঙালি জাতি দিকণ্ড হয়েছে কিন্তু সম্পূর্ণভাবে পৃথক হয়ে যায়নি দু’দিকের বাংলা সাম্প্রতিক ইতিহাসের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে এই কাহিনী ছড়িয়ে গেছে পূর্ব থেকে পশ্চিম গোলার্ধে প্রত্যেক মানুষের মনের মধ্যে উত্থান ও পতনের ফলাফল সেই পূর্ব-পশ্চিমের মর্মেও প্রবেশ করেছে উপন্যাস।

    উপন্যাসের কাহিনীর শুরু হয় ১৯৪৭ সালের দেশভাগের মধ্য দিয়ে এরপর কাহিনী এগোতে থাকে। ভারতের উদ্বাস্তু সমস্যা, ভারতে নকশালপন্থী বিপ্লবীদের কর্মকাণ্ডের বর্ণনা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস সবকিছুই স্থান পেয়েছে দীর্ঘ উপন্যাসটিতে।

    উপন্যাসের মূল কাহিনী মূলত পশ্চিমবাংলা ও পূর্ববাংলার দুইটি ভিন্ন পরিবারকে নিয়ে। পূর্ব পশ্চিমশ্চিম উপন্যাস টি শুধু পূর্ব ও পশ্চিম বাংলায় সীমাবদ্ধ থাকেনি ছড়িয়ে গেছে বিলেত ইংল্যান্ড ও আমেরিকাতে। ঝকঝকে শহর, ব্যস্ত জীবনের ভেতরকার নিগুঢ় সত্যগুলো অকপটে বেড়িয়ে এসেছে লেখকের কলমে। যেকোনো পাঠকই এই উপন্যাসের নায়িকাকে ভালোবাসতে বাধ্য।

    [ Download ]

    অভিব্যক্তিঃ
    তিনটা পড়লে অবশ্যই সিকুয়েন্স ঠিক রেখে পড়বেন। আগেরটা আগে পরেরটা পরে। কারণ বই তিনটা উপন্যাস হলেও সময়কে রক্তে-মাংসে রুপ দেওয়া হয়েছে এখানে। বই তিনটা পড়লে সাহিত্যের স্বাদ যেমন পাবেন তেমনি গল্পের ছলে ইতিহাস জানা হয়ে যাবে।
    সুনীলের এই টাইম ট্রীলোজি পাঠকের জন্য নিশ্চিতভাবে একটা সুন্দর টাইম ট্রাভেল হয়ে যাবে বইয়ের পাতায়। বাংলা সাহিত্যের পাঠক মাত্রই স্বীকার করতে হবে: সুনীলের এই ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস সেই সময়, প্রথম আলোপূর্ব পশ্চিম নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যে এক বিশাল ও অনন্য সংযোজন।

    Download

    লিখেছেনঃ গোলাম কিবরিয়া

    ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

    বাংলা সাহিত্যে যত ট্রিলজি বা ত্রয়ী

    Facebook Comments
    Tags:
    x
    error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করুন