জননী শওকত ওসমান PDF রিভিউ | Janani Shawkat Osman Review
বইঃ জননী
লেখকঃ শওকত ওসমান
প্রকাশনী: সময় প্রকাশন
ধরন: সামাজিক উপন্যাস
পৃষ্ঠা: ২০৮
মুল্য: ২৫০টাকা
আমার জীবনের একটা আক্ষেপ ছিলো যে, শওকত ওসমানের কোন লেখা এদ্দিন পড়া হয়নি।ভেবেছিলাম “কৃতদাসের হাসি” দিয়ে শুরু করবো। কিন্তু, কি হলো জানিনে, “জননী” উপন্যাস দিয়ে শওকত ওসমান শুরু করলাম। লেখকের মুনশিয়ানার পরিচয় দিতে এরচেয়ে ভালো কিছু কি হতে পারে আমি জানিনা। এখনো বিহ্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারছি না।
পুর্ব বাংলায় উপন্যাসে ধানের গন্ধ,গরুর হাম্বা,ছনের ঘর আর নদী-নৌকার উপস্থিতি না থাকলে আমি সস্তি পাইনা। দম আটকে আসে।
গল্পটা মহেশডাঙা গ্রামের।গল্পটা একজন মায়ের।দরিয়াবিবির। দরিয়াবিবি একজন সংগ্রামী নারী।সংগ্রামী মা।কতটা সংগ্রামী হতে পারে, সেটা বলে দিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু, উপন্যাসের লাস্ট ১৫-২০ পাতায় প্রকাশ পাওয়া সেই কস্টকর মাতৃত্বের বোঝাপড়া আর যুদ্ধের কাহিনীতে আমি বার বার শিওড়ে উঠেছি। পাঠকদের জন্যেই রেখে দিলাম সেটা।
গল্পটা আমজাদ আর মোনাদিরের।মোনাদির দরিয়াবিবির প্রথম ঘরের সন্তান। আমজাদ বর্তমান ঘরের সন্তান। লেখক আমজাদের চোখ দিয়ে শিক্ষিত সমাজের মধ্যবিত্ত মানসিকতাটাকে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন। অভাবের স্বরুপ টাকেও তুলে ধরেছেন। উপন্যাসের অনেকগুলো জায়গায় দেখা যায়, মকতব পড়ুয়া আমজাদ বাপের সাথে মাঠ ঘাটে কাজ করতে চায় না। ধুলো মেখে গরু চড়াতেও ঠাটে বাধে তার। না খেয়ে মরবে তাও শিক্ষার “মধ্যবিত্ত ঠাট” ত্যাগ করবেনা।
মোনাদির চরিত্রটা দিয়ে দরিয়াবিবির “মাতৃত্বের” অদৃশ্য বন্ধনটাকে ফুটিয়ে গিয়েছেন শওকত ওসমান। মোনাদির বড়ই স্বার্থপর। দরিয়াবিবির প্রথম ঘরের সন্তান। ৫-৭ বছর চাচাদের ঘরে থেকে তারপর হঠাত মায়ের কাছে ফিরে আসে। হুটহাট করে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়-এদিকে জননী দরিয়াবিবির চিন্তা আর হাহুতাশের অন্ত থাকেনা।
আবার কয়দিন পর টাকা চেয়ে পাঠায় মায়ের কাছে। মা তাকে ফিরিয়ে দেন না। এখানেই “মা” এর অদৃশ্য বন্ধনের স্বরুপটা খুজে ফেরা স্বার্থক।
মাতৃত্ব আর নারীত্বের স্বার্থক বহিপ্রকাশ যেখানে দরিয়াবিবি, সেখানে তার বিপরীতে হাসুবৌ নামক বন্ধ্যা চরিত্রটি যেন “জননীত্ব” এর আকুতিটাকেই ফুটিয়ে তুলে, মাতৃত্বের স্বরুপ দান করার লেখকের প্রানপন প্রচেস্টাটাকেই ষোল আনা স্বার্থক করেছে।
আরও পড়ুনঃ জননী – মানিক বন্দোপাধ্যায় উপন্যাস রিভিউ পিডিএফ
গল্পটা কেবল দরিয়াবিবির একার নয়। গল্পটা তার স্বামী আর আমজাদের পিতা আজহারের।গল্পটা এই ধর্মগোড়া মুসলমান লোকটার প্রানপ্রিয় বন্ধু জাত হিন্দু চন্দ্রকোটালের।
আজহার আর চন্দ্রের ধর্মের বিস্তর পার্থক্য কখনোই দুজনের প্রানের মিলনে বাধা দেয়নি। কিন্তু, হিন্দু-মুসলিম দুই জমিদারের ব্যাক্তি স্বার্থে ধর্মের ব্যবহার, দাংগা; এর মধ্যে দিয়ে মুখ দেখাদেখি বন্ধ, আবার ভুলবূঝাবুঝির অবসান, উপলব্ধি….কাহিনীর অসম্ভব সুন্দর গাথুনী।
উপন্যাসের নারী চরিত্রগুলো একটু বেশী শক্তিশালী।একটু বেশি মানবতাবাদী যেন।
চন্দ্রকোটালের স্ত্রীর উক্তি টা এখনো কানে বাজে, “গাঁয়ে হিন্দু-মুসলমানের ঝগড়া তো ভাইয়ের সঙ্গে কী। যতসব অপসিষ্টি, হতচ্ছাড়া লোক।”
কিংবা, “জমিদারে জমিদারে ঝগড়া। বড়লোক বড়লোকে দলাদলি তোদের কি?”
একটা স্পয়লার দেয়ার লোভ সামলাতে পারছিনে।
আরও পড়ুনঃ ক্রীতদাসের হাসি – শওকত ওসমান পিডিএফ রিভিউ
গল্পের ইয়াকুব চরিত্রটা যেন পদ্মা নদীর মাঝির “হোসেন মিয়া” চরিত্রটার মতই, কিন্তু আরো যেন বেশী শক্তিশালী, একটু বেশি মানবিক-রক্তে মাংসের। আরেকটু কম রহস্যময়, আর গল্পের প্রয়োজনে একটু বেশীই প্রয়োজনীয়।
কিন্তু,সবকিছু ছাপিয়ে উপন্যাসটাকে নদীর ধারার মত সামনে প্রবাহিত করে নিয়েছেন দরিয়াবিবি।
চন্দ্রকোটালের মত বলতে চাই,”দরিয়াবিবি…সেলাম…সেলাম…..।”
নাহ। এখানেই ক্ষ্যান্ত দেই। শওকত ওসমানের লেখার উপর বেবাক অপমান করা হয়ে যাচ্ছে।পাঠকের হাতে বিচারের ভার ছেড়ে দিলাম। আমি নিশ্চিত, বইটা এক নিশ্বাসে পড়ে ফেলে, কেউ আমাকে, মুল্যবান সময় নস্টের অপরাধে গাল দিতে পারবেন না! আর, এটা না পরলে, বাংলা সাহিত্যের একটা বড় কিছুই অধরা থেকে যাবে।
লিখেছেনঃ মাহদি মাহমুদ
বই: জননী [ Download PDF ]
লেখক: শওকত ওসমান
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত