আরেক ফাল্গুন জহির রায়হান pdf রিভিউ | Arek Falgun Zahir Raihan Review
বই: আরেক ফাল্গুন
লেখক : জহির রায়হান
কাহিনী সংক্ষেপে:
ফাগুন মাস। গাছে গাছে সবুজের সমারোহ। ডালে ডালে ফাল্গুনের প্রাণবন্যা। সকালে কুয়াশায় ঢাকা পড়া আকাশে অনেক নিচে দিয়ে মন্থর গতিতে ভেসে চলছিল এক টুকরো মেঘ। সেই মেঘের মতো আসাদ হেঁটে যাচ্ছে নবাবপুরের দিকে। পরনে সাদা প্যান্ট, সাদা শার্ট। কিন্তু পা জোড়া খালি, জুতা নেই। রাস্তার দু’পাশের সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। বংশালের মোড় পেরিয়েই দেখা হলো মুনিম ভাই সহ আরো ৮-১০ জনের সাথে। কারো পায়ে জুতা নেই। কিছুক্ষণ পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিক থেকে নগ্ন পায়ে রানু, বেনু, নিলা এবং সালমা আপা সবাই তাদের সাথে যোগ দিল। ঢাকা শহর জুড়ে ছাত্র-ছাত্রীদের এমন আচরণ দেখে সবাই অনুমান করতে পারছিল পূর্বের মত ভয়ংকর কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। কিন্তু পূর্বে কি ঘটেছিল?
আজ থেকে তিন বছর আগে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি। কবি রসুলের চোখে ঐ দিনের সব ঘটনা স্পষ্ট ভাবে ভেসে ওঠে। মাতৃভাষাকে রক্ষার জন্য, ভাষা আন্দোলনে যোগদানের জন্য জন্য আম গাছ তলায় দশ হাজার ছাত্র-ছাত্রীদের সভা বসেছিল। ছাত্রদের রুখে দিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। সবাই একসাথে বের হতে না পেরে ১০ জনের এক একটি দল নিয়ে মুষ্টি বদ্ধ ভাবে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ বলে স্লোগান দিয়ে বের হয়। কিন্তু পুলিশ সব কয়টি দলকে গ্রেপ্তার করল। তার মধ্যেই হঠাৎ করে পুলিশ গ্যাস নিক্ষেপ এবং গুলি করতে শুরু করলো। তার মধ্যেই হঠাৎ পুলিশের গুলিতে একটি ছেলের মাথার ঠুলি চরকির মত ঘুরতে ঘুরতে প্রায় ৩০ হাত দূরে ছিটকে পড়ল। পেটে, হাতে, বুকে গুলি লেগে অনেকে মারা গিয়েছিল। বরকতের গুলি লেগেছিল গোড়ায়, সাদা পাজামাটা রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে বরকত রাতে হাসপাতালে মারা যায়। কবি রসুলের এখনো মনে হয় মধুর রস্তোরায় গেলে সে কালো রঙের লম্বা লিকলিকে ছেলেটা (বরকত) -কে দেখতে পাবে।
আরও পড়ুনঃ জহির রায়হানকে নিখোঁজ করলো কারা?
বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির শহীদদের হত্যার প্রতিবাদে এবং শহীদদের স্মরণ করে তিন দিন খালি পায়ে হেঁটে ও রোযা রেখে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করা হবে। যার নেতৃত্বে আছে মুনিম। মুনিমের এখনো স্পষ্ট মনে আছে বায়ান্নর ২২ শে ফেব্রুয়ারির কথা। কাক ডাকা ভোরে সবাই হাজির হয়েছিলেন মেডিকেল কলেজ এর পুরনো হোস্টেল একুশে ফেব্রুয়ারির শহীদদের গাইবি জানাজা নামাজ পড়ার জন্য। গায়েবি নামাজ শেষ হলে আবারো জোয়ারের মতো মিছিল বেরিয়েছিল সেদিন। আরো অনেকের মত ফাহাদ ও গুলি খেয়েছিল হাইকোর্টের মোড়ে। চোখের সামনে ফাহাদকে মরতে দেখে মুনিম।
খালি পায়ে হাঁটার দ্বিতীয় দিন। সব ছাত্র রোজা রেখেছে, এমনি কি অনেক সরকারি কর্মচারীর চাকরি হারানোর ভয়ে রাতে না খেয়ে রোজা রেখেছে। বায়ান্নতে তৈরি করা শহীদ মিনারটিকে আবার কাগজ এবং বাঁশের বেড়া দিয়ে সংস্কার করা হয়। এবং সবশেষে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। যার ফলশ্রুতিতে ইউনিভার্সিটি এবং মেডিকেল কলেজের হোস্টেল থেকে অনেক ছাত্র ছাত্রীকে তুলে জেলে নেয়া হয়েছিল ঐদিন রাতে।
আরও পড়ুনঃ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত
তৃতীয় দিন। একুশে ফেব্রুয়ারি। মুসলিম হল, নুরপুর ভিলা, চামেলী হাউস, ফজলুল হক হল, বান্ধবী কুঠির, মেডিকেল হোস্টেল, ঢাকা হল, ঢাকা কলেজ, জগন্নাথ কলেজ, আরমানিটোলায় স্কুল সহ আরো অনেক স্কুল থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। সবার কণ্ঠে বিদ্রোহের সুর। ছাত্র ছাত্রী এবং সাধারণ জনগণকে ভাষা শহীদদের জন্য যেন কাঁদতেও দেবে না সরকার। আবার ও যেন ৩ বছর পর ২১ শে ফেব্রুয়ারীর সাথে নেমে এসেছে পুলিশের অত্যাচার। গ্রেফতার করা হয় আসাদকে। বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারিতে ১০ জন করে বের হওয়া প্রথম দলটির নেতা ছিল আসাদ। আজকের মতো ঐদিনও তাকে প্রথম গ্রেফতার করা হয়। তার মধ্যে কোন দুঃখ বা হতাশা নেই, তবে কিছু একটা পাওয়ার গর্বে তার বুকটা যেন ফুলে উঠেছে।
ছাত্র-ছাত্রী সবাইকে প্রিজনভ্যানে করে জেল গেটে জড়ো করা হলো। আড়াইশোর উপর সংখ্যা তাদের। কারো মাথা ফেটে গিয়েছে, কারো হাতের হাড় ভেঙে গিয়েছে কিন্তু তাদের সকলের মুখে ছিল হাসি, চোখে ছিল শপথের কাঠিন্য। এতো লোককে জেলে জায়গা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে জেল কর্তৃপক্ষকে। এই দেখে কবি রসুল চিৎকার করে উঠলো ‘জেলখানা আরো বাড়ানো সাহেব। এত ছোট জেলখানায় জায়গা হবে না।’ পিছন থেকে আরেকজন বলে উঠল, “এতেই ঘাবড়ে গেলেন নাকি? আসছে ফাল্গুনে আমরা কিন্তু দ্বিগুণ হব”।
পাঠ প্রতিক্রিয়া:
“আরেক ফাল্গুন” আমার পড়া লেখক জহির রায়হানের প্রথম বই। প্রথম বইয়েই লেখক জহির রায়হানের প্রেমে পড়ে গেলাম। উপন্যাসের ভাষায় অনেক সহজ সরল, অল্পতেই গল্পের ভিতর নিজেকে হারিয়ে ফেলবেন, নিজেকে বইয়ের একটি চরিত্র ভাবতে শুরু করবেন।
ছোট এ পাঠক জীবনে যে কয়েকটি বই পড়েছি আমি বলব তাদের সব গুলির মধ্যে “আরেক ফাল্গুন” বইয়ের এন্ডিংটা ছিল শ্রেষ্ঠ। শেষ এক লাইনের মধ্যেই যেন লেখক পুরো উপন্যাসের গল্প বলে দিয়ে গেছেন, “আসছে ফাল্গুনে আমরা কিন্তু দ্বিগুণ হব”।
লিখেছেনঃ Md Omar Faruk
বইঃ আরেক ফাল্গুন [ Download PDF ]
লেখকঃ জহির রায়হান
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
জহির রায়হানের অন্যান্য বইসমূহ