বইয়ের নাম:– মেঘ বলেছে যাবো যাবো
প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭
“মেঘ বলেছে যাবো। আকাশের মেঘেরা কি কথা বলে? তারা কি যেতে চায় কোথাও? বর্ষণ ঘন কালো আকাশের দিকে তাকিয়ে চিত্রলেখার হঠাৎ এই কথা মনে হল। দশ-বার বছরের কিশোরীর মনে এরকম একটা চিন্তা আসতে পারে, চিত্রলেখার বয়স পঁচিশ। এ রকম উদ্ভট চিন্তা তার জন্যে স্বাভাবিক নয়। তবুও কেন জানি নিজেকে তার মেঘের মতো মনে হয়। তার কোথায় যেন যেতে ইচ্ছা করে। এ রকম ইচ্ছা তো সব মানুষেরই করে। সব মানুষের ভেতরই কি তাহলে এক টুকরা মেঘ ঢুকে আছে, যে কেবলি কোথাও যেতে চায়…?”
আজকে বলছি আমার খুবই পছন্দের একটি বই নিয়ে।”মেঘ বলেছে যাবো যাবো”☁
মেঘ বলেছে যাব যাব উপন্যাসটি মূলত মধ্যবিত্ত জীবনের উপর লেখা। এই উপন্যাসটিতে লেখক তুলে ধরেছেন মধ্যবিত্তের স্বপ্ন, চাওয়া-পাওয়া, ভালবাসা, ব্যর্থতা, সুখ দুখ কষ্ট।
“মেঘ বলেছে যাবো যাবো” উপন্যাসটি শুরু হয় হাসানের দেখা অদ্ভুত ১ স্বপ্ন নিয়ে
হাসান একজন বেকার ছেলে। অনেক চেস্টা সত্ত্বেও সে কোনো চাকরি খুজে পায় না। তবে সে পুরোপুরি বেকার নয়। কোটিপতি হিশামুদ্দিনের জীবনী লিখছে সে যদিও এটাকে চাকরি বলা চলে না। প্রতি বুধবারে হিশামুদ্দিন সাহেব হাসানকে এক ঘণ্টা করে জীবনী বলবেন ও হাসান তা লিখে রাখবে। প্রতি ঘণ্টা ৬০০ টাকা হিসেবে দেওয়ার কথা থাকলেও হিশামুদ্দিন সাহেব কখনো তাকে এক ঘণ্টা সময় দেন না। তবে হিশামুদ্দিন সাহেব হাসানকে অনেক পছন্দ করতেন।
একসময় তিতলীদের পাশের বাসায় থাকত হাসানের পরিবার। সেই থেকে তাদের পরিচয়। পরে একে অপরকে ভালোবেসে ফেলে তারা। কিন্তু হাসানের বেকারত্বের জন্য তিতলীর বাবা মতিন সাহেব হাসানকে পছন্দ করতেন না।
আরও পড়ুনঃ কে কথা কয় হুমায়ূন আহমেদ রিভিউ
হাসানের বড় ভাই তারেক তার অফিসের এক বিধবা কলিগ লাবনির সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পরে। প্রথমদিকে তারেক বিষয়টি লুকিয়ে রাখতে চেস্টা করলেও একপর্যায়ে সে তার স্ত্রী রীনার কাছে ধরা পরে যায়। পরে রীনা তারেকের সংসার ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু তারেকের জীবনে যেন কোনো পরিবর্তন আসে না। সে নিজেকে যেন ভারমুক্ত মনে করতে থাকে। হাসান বেকার হলেও সৎ,পরোপকারী ছিল যার প্রমাণ উপন্যাসে পাওয়া যায়। যখন হিসামুদ্দিন তাকে চাকরি দিতে চায় তখন নিজের অনেক অভাব থাকা সত্ত্বেও সে তার বন্ধুর জন্য চাকরির সুপারিশ করে। পরবর্তীতে হিশামুদ্দিন সাহেব মারা যান। মারা যাওয়ার আগে চিত্রলেখা আর হাসানের পরিচয় করিয়ে দিয়ে যান। চিত্রলেখা জানতো তার বাবা হাসানকে অনেক পছন্দ করে।
তিতলীদের আর্থিক অবস্থা খারাপ ছিলো তাদের সংসার চালাতো তিতলীর ফুফু।একসময় তিতলীর ফুফু তার জন্য সম্বন্ধ নিয়ে আসে শওকত এর সঙ্গে। তিতলী বিয়েতে রাজি না থাকলেও তার বাবা ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল এর মাধ্যমে তিতলীকে শওকত এর সঙ্গে বিয়ে দেয়। তাই তিতলীর অনিচ্ছাসত্ত্বেও শওকত নামের ছেলের সাথে বিয়ে হয়ে যায় তিতলীর। কিন্তু তিতলী ভুলতে পারে না হাসানকে। তার স্বামী শওকতের সাথে তার যেন এক স্নায়ু যুদ্ধ চলতে থাকে। কোনো এক কালো মেঘে ঢেকে যায় শওকত আর তিতলীর জীবন। প্রয়োজন ছাড়া তিতলি কথা বলে না শওকতের সাথে।
চিত্রলেখা তার বাবার অফিসে বসতে শুরু করে। সেখানেও অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় তাকে।
একসময় নেপাল বেড়াতে যায় তিতলী আর শওকত। সেখানে এক সকালে নিজেকে শওকতের কাছে বিলিয়ে দেয় তিতলী। তিতলী শওকতের সাথে সুখের সংসার গড়ে তোলে। অন্যদিকে হাসানের ব্রেন টিউমার ধরা পরে। এক মধ্যেবিত্ত সাধারণ বেকার যুবকের মতো হাসানের মৃত্যু হয়। হাসানের ঘটনাটি আমাকে অনেক কস্ট দিয়েছে। হাসানের মতো মানুষ বুঝিয়ে দেয় মানুষ হতে গেলে অনেক অনেক টাকা পয়সার প্রয়োজন নেই। মনুষ্যত্ব প্রয়োজন। যদিও হাসানের
মতো ছেলেরা বাস্তবতার কাছে হেরে যায়। কিন্তু এই কল্পনা তো আমরা করতেই পারি হাসান চিত্রলেখাকে নিয়ে খুব ভালো আছে,সুখে আছে🙂
আরও পড়ুনঃ হুমায়ূন আহমেদের বই সমূহ রিভিউ
ব্যাক্তিগত মত: মেঘ বলেছে যাবো যাবো বইটি এক কথায় অসাধারণ। এই বইটা পাঠককে মাতিয়ে রাখবে আনন্দের মুহুর্ত গুলিতে, আবার কাঁদিয়েও তুলবে।
👉…”জীবন কারো জন্য থেমে চলে না,জীবন চলে জীবনের গতিতে” এই নির্মম সত্যে লেখক বইটিতে তুলে ধরেছেন। বাস্তব কখনো গল্পের মতো হয় না কিন্তু বাস্তবে তার চেয়ে সুন্দর কিছু ঘটতে পারে।
লিখেছেনঃ আনিকা ইসলাম
বইঃ মেঘ বলেছে যাব যাব
লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত