Skip to content
Home » পল্লীসমাজ উপন্যাস রিভিউ – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় | Palli Samaj PDF Sarat

পল্লীসমাজ উপন্যাস রিভিউ – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় | Palli Samaj PDF Sarat

    পল্লীসমাজ
    Redirect Ads

    বই: পল্লীসমাজ
    লেখক: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

    প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ
    পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৯৬
    মুদ্রিত মূল্য: ১২০ টাকা
    প্রকাশনা: বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র
    “পল্লীসমাজ” শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের এক অনবদ্য সৃষ্টি। ঊনবিংশ শতাব্দীর গ্রাম সমাজের মানুষের জীবনধারণের পটভূমি নিয়ে উপন্যাসটি রচিত হয়েছে। যেখানে ওঠে এসেছে – উচ্চশ্রেণীর সমাজপতিদের আধিপত্য, নিম্নশ্রেণীর মানুষের দরিদ্রতা, বঞ্চনা, উৎপীড়ন, বিবাদ, কলহ, কুসংস্কার ইত্যাদি। অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজটাকে আলোকিত করার জন্য একজন প্রতিবাদ মুখর সমাজ-সংস্কারকের সাহসিকতাও ফুটে উঠেছে।

    কাহিনী সংক্ষেপ:

    কুঁয়াপুর গ্রামের জমিদার তারিণী ঘোষাল ও যদু মুখুজ্যের পারিবারিক কলহ ও শত্রুতার মধ্যদিয়ে উপন্যাসের কাহিনী এগিয়ে যায়। এর একদিকে রয়েছে প্রজা পীড়ক বেণী ঘোষাল। অন্যদিকে রয়েছে প্রজা হিতৈষী রমেশ।

    Download

    বেণী ঘোষাল, গোবিন্দ গাঙ্গুলী, পরাণ হালদার প্রমুখ এই গ্রামের হর্তাকর্তা। এরা যেমন নিষ্ঠুর তেমনি হীন, লোভী, স্বার্থপর। বেণী ঘোষালের হীনমন্যতা ও ষড়যন্ত্রের কুটিল-কঠিন আঘাত রমেশ, রমা বা গ্রামের সাধারণ মানুষ কাউকে মুহূর্তের জন্যেও স্বস্তি দেয়নি। এমনকি মাছ বাঁচাবার জন্যে বাঁধ কাটতে বাধা দেয় বেণী ঘোষাল। এতে যদি চাষিদের সর্বস্ব ধান নষ্ট হয় তাতে তার কিছু যায় আসে না।

    রমা একজন সহনশীল বিচক্ষণ নারী। প্রেমময়ী, মমতাময়ী, সুখলাভকারিনী, নম্রস্বভাবা, মাতৃস্বরূপা নারী হিসেবে নিজেকে অধিষ্ঠিত করেছে সে। বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন রূপে দেখা গিয়েছে তাকে। কখনো মনে হবে রমা একজন স্বার্থপর, লোভী নারী। আবার কখনো বা মনে হবে সে লোভহীন, স্বার্থহীন একজন নারী। রমার কাছে নিজের মতামত কখনো গুরুত্ব পেত না বলে একসময় সামাজিক অনুশাসনকেও সে অতিক্রম করে যেতে পারেনি।

    আরও পড়ুনঃ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত

    রমেশ গ্রামের একজন শিক্ষিত যুবক। সে জমিদারও বটে। জমিদার হওয়ার সত্ত্বেও তার মধ্যে বেণী ঘোষালের মতো স্বার্থপরতা, হীনতা পরিলক্ষিত হয়নি। সে একজন সমাজ-সংস্কারক হিসেবে নিজের পরিচয় বহন করে। গ্রামের মানুষদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে চাই। গ্রামোন্নতির পথে তাকে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এমনকি মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে জেলেও যেতে হয়। বেণী ঘোষালের মা বিশ্বেশ্বরী সবসময় তার পাশে ছায়া হয়ে উৎসাহ ও সাহস যোগাতো।

    Download

    মূলত এই দুই পক্ষের শত্রুতা থেকেই কুয়াপূর গ্রামের করুণ চিত্রগুলো উঠে আসে । শিক্ষিত তরুণ রমেশ এইসব পারিবারিক শত্রুতার খেয়াল না করে গ্রামের নিম্ন শ্রেণীর মানুষদের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করার চেষ্টায় লিপ্ত হয় ।

    আরও পড়ুনঃ বিলাসী গল্প – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

    উপন্যাস বিশ্লেষণ:

    আজ থেকে শত বছর আগেও গ্রাম বাংলার সৌন্দর্য্যের আড়ালে ছিল সমাজের করুণ এক রূপ । জমিদারী প্রথা , ধনী – গরীব বৈষম্য , ধর্মীয় কুসংস্কার , হিন্দু – মুসলমান এর অর্থনৈতিক বৈষম্য সহ বাংলার সমাজের সবকিছুই যেন উঠে এসেছে এই উপন্যাসে । “পল্লীসমাজ” যেন বাস্তব সমাজের এক খন্ড রূপ য অতি সূক্ষ্ম ভাবে সমাজের পুরো চিত্র প্রতিফলিত করে । যে বিশেষ চিত্র গুলো এই উপন্যাসে উঠে এসেছে তার মধ্যে অন্যতম হলো :

    ১. জমিদারী রাজত্ব এবং সম্পদের পুঞ্জিভূত হওয়া :
    তৎকালীন সময়ে সমাজের বিশেষ কিছু মানুষের কাছে মূলত সকল অর্থ থাকতো এবং কৃষক কিংবা খেটে খাওয়া মানুষজন পরিশ্রম করলেও অর্থের জন্য জমিদারদের ওপর নির্ভর ছিল । যার কারণে সমাজে জমিদার কিংবা সম শ্রেণীর মানুষজন কর্তৃক নিম্ন শ্রেণীর মানুষজন সাধারণত নিপীড়িত হতো । এই চিত্র কিন্তু ১০০ বছর পরে আজও অন্যরূপে বহাল আছে ।

    Download

    ২. ধর্মীয় কুসংস্কার :
    ধর্মীয় কুসংস্কার সেই সময়ে মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে রক্তের নেয় মিশে গেছিল। বর্ণবাদ প্রথা , হিন্দু – মুসলমান ভেদাভেদ , ধর্মীয় অনাচার স্বাভাবিক বিষয় ছিল । তবে রমেশ চরিত্র সৃষ্টির মাধ্যমে শরৎচন্দ্র এইসকল ধর্মীয় কুসংস্কার এর শক্ত দেয়াল ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা করেছেন ।

    ৩. বংশানুক্রমিক বিবাদ :
    “কারুর সত্যকার দোষ-অপরাধ আছে, কারুর মিথ্যে-অপবাদ আছে-তা ছাড়া। মামলা-মােকদ্দমা, মিথ্যে সাক্ষী-দেওয়া নিয়েও মস্ত দলাদলি ।” এই চিত্র আজও আমাদের গ্রাম বাংলায় একই রূপে রয়ে গেছে । উপন্যাসে শরৎচন্দ্র সমাজের এই চিত্রটি বিশেষভাবে তুলে ধরেছেন ।

    ৪. শিক্ষার প্রতি অনীহা :
    গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে বেঁচে থাকার জন্য শিক্ষা তেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল না । উপন্যাসে দেখা যায় , পাঠশালার করুন অবস্থার পরেও কেউ পাঠশালার উন্নতি নিয়ে ভাবে নি । এমনকি তৎকালীন সময়ে হিন্দু – মুসলমান একসাথে পাঠশালায় বসা নিয়েও বিবাদের সৃষ্টি হতো ।

    আরও পড়ুনঃ মহেশ গল্প – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

    Download

    পছন্দের অংশঃ

    “যে বসন্ত আর্তকে রক্ষা করে না, শুধু বিপন্ন করে, তাহাকেই সমাজ বলিয়া কল্পনা করার মহাপাপ তাহাদিগকে নিয়ত রসাতলের পথেই টানিয়া নামাইতেছে। “

    “মানুষ খাঁটি কি না, চেনা যায় শুধু টাকার সম্পর্কে। এই জায়গায় নাকি ফাঁকি চলে না, তাই এইখানেই মানুষের যথার্থ রূপ প্রকাশ পেয়ে উঠে।”

    “সংসারে যত পাপ আছে, মানুষের দয়ার উপর জুলুম করাটা সবচেয়ে বেশি।”

    “কয়লাকে ধুয়ে তার রঙ বদলানো যায় না মা , তাকে আগুনে পোড়াতে হয় ।”

    “আগুন জ্বলে উঠে শুধু শুধু নেবে না রমা ! তাকে জোর করে নেবালেও সে আশেপাশের জিনিস তাতিয়ে দিয়ে যায় । “

    “মিথ্যেকে ঘাঁটঘাঁটি করে জাগিয়ে তুললেই তার পরমায়ু বেড়ে ওঠে। নিজের অসহিষ্ণুতায় তার আয়ু বাড়িয়ে তােলার মত পাপ অল্পই আছে ।”

    লিখেছেনঃ Mohammad Jahedul Islam

    বইঃ পল্লীসমাজ [ Download PDF ]
    লেখকঃ
    শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

    ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

    শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচনা সমগ্র

    Facebook Comments
    Tags:
    x
    error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করুন