বই: মানসী
ধরণ: কাব্যগ্রন্থ
কবি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
প্রকাশকাল- ১৮৯০ সাল
রবীন্দ্রনাথের প্রথম সার্থক কাব্যগ্রন্থ দিয়ে আমি প্রথম কাব্যগ্রন্থ রিভিউ দেয়া শুরু করলাম। প্রথমবার বলে নজরুলের কাব্য নিয়ে রিস্ক নিলাম না।
কাব্য বা পদ্য বা কবিতা বলতে সাধারণভাবে যা বুঝায় তা হলো – শ্রুতি নান্দনিক শব্দের সমন্বয়ে তালে ও ছন্দে বিন্যস্ত, আবেগঘন অর্থ প্রকাশ,কথন বা লেখন।
অথবা,
**মানব মনের ভাবনা কল্পনা যখন অনুভূতি রঞ্জিত যথাবিহীত শব্দসম্ভারে বাস্তব সুষমামন্ডিত চিত্রাত্নক ও ছন্দোময়তায় চিত্রিত হয় তা হলো কবিতা।
এছাড়াও,
→নারী যেমন আকারে-সাকারে,রঙে-ঢঙে,সাজ-সজ্জায়,বিন্যাস-প্রসাধনে নিজেকে আকর্ষণীয়া করে তুলে কবিতাও তেমন মনের ভাবনা,আবেগ,প্রেম,ভালোবাসাকে শব্দে-ধ্বনিতে,ছন্দে-গন্ধে ভরপুর করিয়ে তুলে ধরে!
S.T. Colridge এর মতে কবিতা হলো–
*Best word in the best order..*
তবে আমার মতে- #কবিতা হলো এমন কিছু যা আবৃত্তি করে বা পড়ে আমি অন্য জগতে,কবির জগতে,প্রেম,দুঃখ বা বিরহের জগতে হারিয়ে যাব এবং আত্নগ্লানির অনল থেকে বেরিয়ে ছুটে যাব কবির অন্তরে। দু:খের সময় কবিতা আমাকে সুখানুভূতি দিবে আর সুখের সময় কবিতা আমাকে জীবনের বর্ণিলতাকে জানিয়ে দিবে-এটাই আমার নিজস্ব ধারণা, কবিতা নিয়ে!
মানসী কাব্যটার প্রতি আমার আলাদা একটা টান কেন সৃষ্টি হয়েছে সেটা এখানে মূখ্য নয় কারণ কাব্যটার ৬৫ টা কবিতায় রবিন্দ্রনাথ নিজের প্রেমধর্ম,ভাববোধ,প্রকৃতিপ্রেম,চিত্রধর্মকে শব্দ,বর্ণ, ধ্বনি দিয়ে এতটা অপরূপ ভাবে তুলে ধরেছেন যে আমি প্রায় অনেকদিন ধরে কবিতাগুলো বার বার করে পড়েছি।
আরও পড়ুনঃ গল্পগুচ্ছ রবীন্দ্রনাথ PDF Download
নিষ্ফল_কামনা কবিতায় কবি লিখেছেন–
যে জন আপন ভীত,কাতর,দূর্বল, ম্লান,ক্ষুধাতৃষাতুর,অন্ধ,দিশাহারা, আপন হৃদযভারে পীড়িত জর্জর, সে কাহারে পেতে চায় চিরদিন-তরে!
আসলেই স্ব-দুঃখে যখন আমরা বিভোর থাকি তখন পরকে কামনা করা কখনো আমাদের জন্য সম্ভবপর হয়না, কিছুতেই না!
মনের গোপনে থাকা ভাব নিয়ে যখন আমরা সংশয়ে থাকি, জানিনা মন কী চায়, কাকে চায়,কে মনের কোণে নিত্য চষে বেড়ায়–
ভালোবাস কি না বাস বুঝিতে পারি নে, তাই কাছে থাকি। তাই তব মুখপানে রাখিয়েছি মেলি সর্বগ্রাসী আঁখি।
সংশয়ের_আবেগ
নিভৃতকোণে বসে যখন আমরা প্রিয়তমের আরাধনা করি, প্রিয়ের কল্পনায় নিজেকে বিভোর করে আবেগের রাজ্যে হারিয়ে যাই তা
আরও পড়ুনঃ হৈমন্তী গল্প PDF Download রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
নিভৃত_আশ্রম কবিতায় উঠে আসছে-
সন্ধ্যায় একেলা বসি বিজন ভবনে অনুপম জ্যোর্তিময়ী মাধুরীমুরতি স্থাপনা করিব যত্নে হৃদয়-আসনে। প্রেমের প্রদীপ লয়ে করিব আরতি। …… লোকালয়-মাঝে থাকি রবো তপোবনে, একেলা থেকেও তবু রব সাথি-সনে।
বিখ্যাত সেই কবিতা #বধূ যা প্রকৃতি মায়ের সৌন্দর্যে উপছে পড়েছে মায়ায়–
বেলা যে পড়ে এল, জলকে চল!
পুরানো সেই সুরে কে যেন ডাকে দূরে-
কোথা সে ছায়া সখী, কোথা সে জল!
কোথা সে বাঁধা ঘাট, অশথতল!
ছিলাম আনমনে একেলা গৃহকোণে,
কে যেন ডাকিল রে ‘জলকে চল’!
নিন্দুকের প্রতি নিবেদন কবিতাটি আরেকটি অসাধারণ কবিতা যেটাতে উঠে এসেছে সেসব মানুষের প্রতি ভাব যারা নিন্দা, কুৎসায় মগ্ন থেকে, আশপাশের ভালোবাসা গ্রহণ করতে পারেনা, দুদিনের দুনিয়ায় তারা বুঝেনা ভালোবাসার মূল্য।
তুমি কেন ভাই, বিমুখ এমন। নয়নে কঠোর হাসি-
দূর হতে যেন ফুঁসিছ সবেগে
উপেক্ষা রাশি রাশি!
কঠিন বচন ঝরিছে অধরে
উপহাস -হলাহলে_
লেখনীর মুখে করিতে দগ্ধ
ঘৃণার অনল জ্বলে।
আমার আশিকীর সাথে মিলে যাওয়া সবথেকে প্রিয় কবিতাটি #ধ্যান….
এই কবিতাটা এতটাই সুন্দর যে দৈনিক একবার মনে-মন্দ্রে পড়ি আমি এটা।
নিত্য তোমাই চিত্ত ভরিয়া স্মরণ করি বিশ্ববিহীন বিজনে বসিযা বরণ করি তুমি আছ মোর জীবন মরণ হরণ করি।
আরও পড়ুনঃ বিসর্জন নাটক PDF রিভিউ সারসংক্ষেপ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আমার #অনন্ত_প্রেম
তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি শত রূপে শত বার জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার।
রবীন্দ্রনাথ নিজেই বলেছেন ভাব ও ছন্দের তালে কবির মনে যে অনিন্দ্য সুন্দর মুহৃতের যোজন ঘটছে তা তিনি নিজেই পূর্ণ প্রকাশ করতে পারছেন না-
এই চিরজীবন তাই আর কিছু আজ নাই। রচি শুধু অসীমের সীমা। কথা দিয়ে ভাষা দিয়ে তাহে ভালোবাসা দিয়ে গড়ে তুলি মানসী প্রতিমা…..।
অনেকদিন পর জানতে পারলাম কবিতার উদ্দেশ্য নীতিপ্রচার,শিক্ষাদান,রাজনীতী বা সমাজনীতি প্রচার করা নয়…..
কবিতা শুধু মনের ভাব প্রকাশের জন্য,একান্ত কবির অনুভুতি তুলে ধরার জন্য।….
অবশেষে আমি রবী’র প্রেমে পড়িলাম…..
লিখেছেনঃ জেসমিন পমি
বইঃ মানসী [ Download PDF ]
লেখকঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা সমগ্র PDF Download করুন