হাঁসুলী বাঁকের উপকথা

হাঁসুলী বাঁকের উপকথা PDF Download রিভিউ | Hasuli Baker Upakatha PDF

Redirect Ads

বইয়ের নাম : হাঁসুলী বাঁকের উপকথা
লেখক : তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
রচনাকাল : আষাঢ়, ১৩৫৪

রিভিউ:

“হাঁসুলী বাঁকের কথা – বলব কারে হায়?
কোপাই নদীর জলে – কথা ভেসে যায় ৷”

রাঢ়ের কোপাই নদীর প্রায় মাঝামাঝি জায়গায় হাঁসুলীর বাঁক ৷ বর্ষাকালে বাঁকটিকে মনে হয় যেন শ্যামলা মেয়ের গলায় সোনার হাঁসুলী, আবার কার্তিক অগ্রহায়ণ মাসে ঠিক যেন রুপোর হাঁসুলী ৷

Download

হাঁসুলীর বাঁকে বাঁশবনে ঘেরা ছোট্ট গ্রাম বাঁশবাঁদি, যেখানে হিন্দু নিচু বর্ণের কাহারদের বাস ৷ এরা বহু শতাব্দীর শিক্ষা-দীক্ষায়,কর্মে-চিন্তায় পিছিয়ে পড়া কুসংস্কারাচ্ছন্ন এক সমাজ ৷ পাশে জাঙল গ্রামে ভদ্রলোকের সমাজ – কুমার, চাষী, গন্ধবণিক আর গুটিকয়েক নাপিত ও তন্তুবায় ৷

কাহারদের পূর্বপুরুষেরা পূর্বে নীলকুঠির সাহেবদের পালকি বহন এবং অন্যান্য ফাইফরমাশ খাটত ৷ কিন্তু কুঠি বিলুপ্তির পর তারা জাঙলের ভদ্রলোকদের জমিতে – বাড়িতে কাজ করে খায় । কাহারদের দেবতা কালরুদ্র আর তাদের কূলদেবতা বাবাঠাকুর ৷ কাহারদের বিশ্বাস তাদের জন্ম হয়েছে ভদ্রলোকের এঁটো পরিষ্কার করার জন্য ৷ আসলে জাত যায় কিসে? পূর্বপুরুষদের নিয়মভঙ্গে নাকি এঁটো খেলে?

হাঁসুলী বাঁকের কাহারদের জীবন কোনো ইতিহাস নয়, এ এক উপকথা ৷ তাদের জীবনযাত্রা অতিপ্রাকৃত চিন্তার মায়াজাল, পৌরাণিক কল্পনা, অলৌকিক কুসংস্কার ও বিশ্বাস, প্রাচীন কিংবদন্তি ও আখ্যান, পূর্বপুরুষদের অতীত ঘটনা প্রতিফলিত জীবনদর্শন দ্বারা প্রভাবিত ৷

নতুন যে কোনো ঘটনা যা পূর্বে ঘটেনি তা তাদের জন্য বিপর্যয়স্বরূপ এবং দেবতার ক্রোধ এবং অভিশাপতুল্য ৷

Download

আরও পড়ুনঃ কবি উপন্যাস তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় PDF রিভিউ

কাহার নর-নারীদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশের মৌখিক নাম “রংএর খেলা” ৷ ভদ্রলোকের সমাজে যে প্রবৃত্তির অাত্নপ্রকাশ কষ্টসাধ্য সাধনার বহিঃপ্রকাশ, কাহারদের জীবনে সেটা কোপাইয়ের দুর্বার বন্যাস্রোতের মতো ৷

‘শ্যাম কলঙ্কের বালাই লয়ে-
ঝাঁপ দিব সই কালীদহে,
কালীলাগের প্রেমের পাকে
মজব অামি অবশ্যাষে!’

সময়ের পরিক্রমায় কি পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখা সম্ভব? কর্তাবাবার বাহন হত্যা করে করালী যে পাপ করেছে তার প্রায়শ্চিত্ত হয়নি বলে কি কাহারদের উপর দেবতার অভিশাপ সত্যিই লেগেছে? নাকি যুদ্ধ আর বন্যার প্রভাবে যে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটেছে তা তাদের সমাজবিন্যাস পরিবর্তনে দায়ী? মাতব্বর বনোয়ারী কাহারদের পূর্বপুরুষদের চিরাচরিত নিয়মনীতি এবং ঐতিহ্যশাসনে বিশেষ সচেতন ৷ সে স্বাংস্কৃতিক রক্ষণশীলতার পরম দৃষ্টান্ত ৷

একদিকে বনোয়ারীর অনমনীয় জীবননীতি অন্যদিকে করালীর নতুন চিন্তাধারা আর স্বাধীনচিত্ততা — কোন সত্তা হাঁসুলী বাঁকের উপকথাকে হৃদয়ে ধরে রাখবে?

Download

আরও পড়ুনঃ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ছোট গল্প সমগ্র PDF রিভিউ

কিছু বিশেষ উক্তি:

মেয়ে-পুরুষের ভালোবাসা হলে ওরা বলে—অঙ লাগায়েছে দুজনাতে ৷ রঙ-ই বটে ৷ গাঢ় লাল রঙ ৷ এক ফোঁটার ছোঁয়াচে মনভরা অন্য রঙের চেহারা পাল্টে দেয় ৷

মায়ের ‘গভ্যের’ মধ্যে বসে কারিগর খাঁচা তৈরি করে-হাড়ের শলা দিয়ে খাঁচা তৈরি করে পরিপাটি চামড়ার ঘেরাটোপ দিয়ে ঢেকে দেয়, তার মধ্যে সুড়ুৎ করে এসে ঢোকে পড়ে পরানপাখি ৷

বউয়ের রোজকার, বিটীর রোজকার কাহারপাড়ায় ‘শাক-ঢাকা মাছ’ ৷

কাহারদের মেয়েরা সতী হলে ভদ্রজনদের পাপ ধরবে কারা, রাখবে কোথা? কাজেই কাহার জন্মের এ কর্ম স্বীকার যে করতেই হবে ৷

আরও পড়ুনঃ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় – বাংলা সাহিত্যে সবচেয়ে নিখুঁততম সাহিত্যিক

ঘি দিয়ে ভাজ নিমের পাত, নিম না ছাড়েন আপন জাত ৷

জাত না দিলে, লেয় কে? তার নাম কি, ঘর কোথা?

পৃথিবীর ভালোমন্দতে হাঁসুলীবাঁকের কি যায় আসে?

“ভাই রে! অন্ধকারের ভাবনা কেনে হায় রে
অন্ধকারেই পরাণপাখি সেই দ্যাশেতে যায় রে!”

ইতিহাসে অবশ্য কর্তার বাণী কালরুদ্রের খেলা, হরির বিধান মানে না ৷ সে বলে আকস্মিক, কাকতালীয় ৷ বলুক-সত্য যাই হোক, কাহারেরা একে সত্য বলেই মানে ৷

আজ এ পর্যন্তই। ঘরে থাকুন সুস্থ থাকুন, বেশি বেশি বই পড়ুন।

লিখেছেনঃ Rabab Reza

Download

বইঃ হাঁসুলী বাঁকের উপকথা [ Download PDF ]
লেখকঃ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাবলী PDF Download করুন

Facebook Comments

Similar Posts