পদ্মার পলিদ্বীপ আবু ইসহাক PDF | Padmar Polidweep PDF | Abu Ishak
বই: পদ্মার পলিদ্বীপ
লেখক: আবু ইসহাক
মুল্য: 300 টাকা
ধরন: চিরায়ত উপন্যাস
প্রকাশনা: নওরোজ সাহিত্য সম্ভার
প্রকাশকাল: মুখর মাটি নামে এর ষোলটি অধ্যায় ১৯৭৪-৭৬ কাল-পরিসরে বাংলা একাডেমী’র সাহিত্য পত্রিকা ‘উত্তরাধিকার’-এ ছাপা হয়েছিল। ১৯৮৬ সালে এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।
আপনি যদি “পদ্মা নদীর মাঝি” বা “হাজার বছর ধরে” পড়ে তৃপ্তি পেয়ে থাকেন তাহলে সে তৃপ্তিকে আরো পরিপুর্ণতা দিবে “পদ্মার পলিদ্বীপ“। কিন্তু কী এই পদ্মার পলিদ্বীপ? যার নামই অত শুনা যায় না। এ বিষয়ে আলোকপাত করেছেন খোদ ঔপন্যাসিক নিজেই। আবু ইসহাক তাঁর এক বক্তৃতায় একবার বলেছেন,
‘আপনারা প্রায় সবাই সাহিত্যিক। কিন্তু আমাদের দেশে সাহিত্য অবহেলিত, আপনাদের মধ্যেই অনেকেই আমার “পদ্মার পলিদ্বীপ” পড়েন নি। “সূর্য দীঘল বাড়ির” নীচে আমার এ সাহিত্যকর্ম চাপা পড়ে গেছে।’
অবশ্য বিশ্লেষকদের মত ভিন্ন। তাদের মতে প্রথম এবং দ্বিতীয় উপন্যাস প্রকাশের সময়ের পার্থক্য ৩০ বছর হওয়ায় দ্বিতীয় উপন্যাস পাঠককে ততটা আকৃষ্ট করতে পারে নি।
আরও পড়ুনঃ জাল আবু ইসহাক PDF Download রিভিউ
বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য সংযোজন এ উপন্যাসের রিভিউ:
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। আর নদীর ধর্মই হলো, সত্যেন সেনের ভাষায়, “একূল ভাঙে তো ওকূল গড়ে।” আর দেশের প্রধান নদী যখন পদ্মা, তখন তার বুকে বছর বছর চর জাগা তো স্বাভাবিকই। তবে এসব চরের দখল নিয়ে যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত তাও যেন স্বাভাবিক অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। সে রকমই এক চর লটাবনিয়া, যা পদ্মার বুকে ক্ষণেক জাগে তো ক্ষণেক বিলীন হয়। এরফান মিয়া সে চরের আইনত মাতব্বর। তার ছেলে ফজল অর্ধশিক্ষিত তরুণ।
বহুদিন পদ্মায় বিলীন থাকার পর একদিন এই চর জেগে উঠে। নিজেদের চর সদলবলে অধিকার করে ফজল এবং তাদের গ্রামবাসী। কিন্তু বিধিবাম! হঠাৎ করে তেড়ে আসে নতুন শত্রু ধনিক শ্রেণির প্রতিভূ, জোতদার; পা না ধোওয়া জঙ্গুরুল্লা। পা না ধোওয়া! এ আবার কী নাম? কিন্তু এই পা না ধোওয়াই ফজলের পরিবারকে ধুয়ে দেয়। নানা ফন্দি ফিকির সহ ফজলের বিরুদ্ধে একের পর এক গুরতর কেস করে সে। সমস্যা শুধু সামাজিক বা শারীরিক ভাবে নয়, সমস্যা আসে পারিবারিক দিক থেকেও।
ফজল তার স্ত্রী রূপজানকে অনেক ভালোবাসে, এদিকে ফজলের শ্বশুর; রূপজান বাপের বাড়িতে গেলে তাকে আটকে রাখে- নানা অজুহাতে। ফজলের পরিবার তাদের পূত্রবধুকে ফিরে পাবার আশায় নানাভাবে ধর্ণা দেয়, কিন্তু রূপজানের পিতার মাথায় খেলা করে অন্য মতলব। ফজলের জীবনে আবার ফিরে আসার উপক্রম হয় তার ই তালাকপ্রাপ্ত পুর্বের স্ত্রী জরিনার। নানাভাবে বিপর্যস্ত ফজল কী পারবে তার চর পুনরুদ্ধার করতে? ত্রিভুজ প্রেমের এ উপাখ্যানে সে কি কাওকে তার জীবন সঙ্গী হিসেবে বাছাই করে নিতে পারবে? জানার জন্য বাংলা সাহিত্যের অন্যতম এই উপন্যাস পড়ে ফেলুন দ্রুত।
আরও পড়ুনঃ রাখালী কাব্যগ্রন্থ PDF রিভিউ জসিম উদ্দিন
বই পর্যালোচনা:
প্রাচীনকালে রচিত সাহিত্য থেকে শুরু করে এ সময়কালের সাহিত্যেও নদী অপরিহার্য বিষয়। গীত, কবিতা, উপন্যাসসহ সাহিত্যের সব শাখাতেই নদী যুক্ত হয়েছে কখনো প্রধান ভূমিকায়, কখনো বিষয়বস্তুর প্রয়োজনে। নদী ও মানুষ একে-অপরের সম্পূরক। উপন্যাসে এ সত্যতা ধরা পড়েছে বিভিন্ন রূপে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মা নদীর মাঝি’, অদ্বৈত মল্লবর্মণের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’, সমরেশ বসুর ‘গঙ্গা’, প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের ‘ইছামতী’, আবু ইসহাকের ‘পদ্মার পলিদ্বীপ’ প্রভৃতি নদীভিত্তিক উপন্যাস। নদী ও মানুষের জীবন যে এই সূত্রে আবদ্ধ, সে সত্যতা ধারণ করেই বিভিন্ন মাত্রিকে নির্মিতি পেয়েছে উপন্যাস। যা উপন্যাস সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য এক প্রবাহধারা।
বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য এ নদীভিত্তিক উপন্যাস নিয়ে সমালোচকদের রয়েছে ভিন্ন মত যেমনঃ কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেছেন,
‘উপন্যাসটি শিল্পিত করার নানা উপাদান থাকলেও পাঠ শেষে মনে হয়, যে শিল্পসৌন্দর্য সাহিত্যে নান্দনিক উত্কর্ষ আনে, সে জায়গাটি ছুঁতে পারেনি লেখক’।
তবে এর বিপরীত অভিমতও দুর্লভ নয়। যেমন আবুল হাসানাত বলেন,
‘আবু ইসহাক সমস্যার গভীরে গেছেন… দৈনন্দিন সাধারণ জীবন যাপনের জন্য কী অপরিসীম পরিশ্রম ও কষ্ট স্বীকার করতে হয় তার বাস্তবধর্মী, জীবনঘনিষ্ঠ চিত্র আবু ইসহাক তাঁর নিজস্ব রচনাভঙ্গিতে উপস্থাপিত করেছেন যা একাধারে তাঁর সৃষ্টিধর্মিতা ও সার্থক শিল্পসৃষ্টির উৎকৃষ্ট ও প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে বলে আমি মনে করি।’
কিংবা মুহম্মদ ইদ্রিস আলীর বক্তব্য-
‘উপন্যাসটির প্যাটার্নে সুনির্দিষ্ট কোনো জীবনবাদী বক্তব্য সুস্পষ্ট না হওয়া সত্ত্বেও গঠনশৈলীগত নৈপুণ্যের কারণে এ উপন্যাসে আবু ইসহাক শিল্প-সিদ্ধির দ্বারপ্রান্তে উপনীত।’
আরও পড়ুনঃ কবর কবিতা জসীম উদ্দিন PDF
সূর্যদীঘল বাড়ীর তুলনায় পদ্মার পলিদ্বীপকে তিনি উৎকৃষ্ট আখ্যায়িত করেছেন।
প্রফেসর কবীর চৌধুরী লিখেছেন:
“তাঁর প্রথম উপন্যাসের মতো এটিও পল্লীজীবন ভিত্তিক, এখানেও জীবনবোধ তীক্ষ্ণ, বাস্তব জীবনের পরিবেশ অকৃত্রিম ও সত্যনিষ্ঠ। তবে ‘সূর্যদীঘল বাড়ী’র চেয়ে বর্তমান উপন্যাসের পরিমণ্ডল বৃহত্তর, জীবন সংগ্রামের চিত্র এখানে আরো দ্বন্দ্বমুখর ও তীব্র নাটকীয়তায় তা অধিকতর উজ্জ্বল এবং পটভূমি পরিবেশেও ভিন্নতর।…দীর্ঘদিন পর (১৯৮৬) তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস প্রকাশিত হলেও আবু ইসহাক ‘পদ্মার পলিদ্বীপ’ উপহার দিয়ে বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক হিসেবে তার পূর্ব খ্যাতি শুধু অমলিনই রাখেননি, আমার বিবেচনায় তাকে সম্প্রসারিত করেছেন।”
আরও পড়ুনঃ দেবদাস উপন্যাস PDF রিভিউ
পাঠপ্রতিক্রিয়া:
“পদ্মার পলিদ্বীপ” আঞ্চলিক না জাতীয়, প্রেমের নাকি জীবনদ্বন্দ্বের, আধুনিক কি অনাধুনিক, এসব প্রশ্ন অবান্তর। এটি একটি আখ্যান। এতে আছে বিশাল মহাকাব্যিক প্রেক্ষাপট, কাহিনী ও প্লট। আছে নদী, চর এবং মানুষের জীবনের আন্তঃসম্পর্কের বিস্তারিত চিত্র। আছে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষ, প্রেমের ফল্গুধারা, প্রকৃতি ও কালের করাল আক্রমণ, জীবনজয়ের অবিরাম সংগ্রাম ও বীরত্বের কথা। পদ্মার পলিদ্বীপ-এর ‘ডকুমেন্টারি গুরুত্ব’ অনেক। কোনো সংজ্ঞার নিক্তিতে ফেলে তার কপালে এক কথায় ‘সফল’ অথবা ‘ব্যর্থ’ লেবেল সেঁটে দেওয়ার সুযোগ নেই। বরং নির্দ্বিধায় একথাই বলতে হবে যে, পদ্মার পলিদ্বীপ বাংলা সাহিত্যে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন।
আমার কাছে এর রেটিং ৫/৫।
লিখেছেনঃ Prottoy Prokas
বইঃ পদ্মার পলিদ্বীপ [ Download PDF ]
লেখকঃ আবু ইসহাক
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
আবু ইসহাক এর অন্যান্য গল্প ও উপন্যাস সমগ্র পিডিএফ ডাউনলোড করুন