বই- দেবদাস
লেখক- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
প্রকাশনী- ঐতিহ্য
পৃষ্ঠা সংখ্যা- ১০৪
মুদ্রিত মূল্য- ১৫০৳
“পারু তোকে আর আগের মত মনে পড়ে না, শুধু যখন নিশ্বাস নেই তখন..”
কী সাংঘাতিক কথা!এই একটামাত্র লাইন পড়েই মনে হলো বইটা আমাকে আজই পড়তে হবে। আর যখন পড়ে শেষ করলাম তখন মনে হলো, আমি শরৎবাবুকে এত দেরীতে পড়লাম কেন!
কাহিনী_সংক্ষেপ
‘দেবদাস-পার্বতী’র নাম শুনেনি এরকম মানুষ আছে!
জমিদার নারায়ণ মুখুয্যের ছেলে ‘দেবদাস’। পড়াশোনায় যার একদম মন নেই। সারাদিন ছিপ কেটে মাছ ধরা,তামাক খাওয়া আর চাঞ্চল্যে যার দিন কাটে।এজন্য উত্তম-মধ্যম ও খেতে হয়। দুষ্টুমি আর বেয়াড়াপনার ফলে একপর্যায়ে দেবদাস’র বিদ্যালয়ে যাওয়াই বন্ধ হয়ে গেলো।
জমিদার বাড়ির পাশের ব্রাহ্মণ পরিবারটি পার্বতীদের। দেবদাসের বাবা-মা সহ প্রায় সকলেই পার্বতীর মতো লক্ষ্মী মেয়েটিকে ভালোবাসে। এদিকে পার্বতী চঞ্চল দেবদাসকে বড্ড পছন্দ করে।দেবদাস তাকে বকা দেওয়া এমনকি ভীষণ মারধর করলেও দেবদা’র সাথে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করে সে। যেদিন দেবদাসের বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো পার্বতী ও বুদ্ধি করে বিদ্যালয়ে আর গেলো না।
কিন্তু, বছরখানেক পরই পড়াশোনার জন্য দেবদাস কলকাতায় পাড়ি জমালো। পার্বতীর ছুটোছুটি ও বন্ধ হয়ে গেলো। প্রথম-প্রথম দু’জনের খুব চিঠি আদান-প্রদান হলেও ক’দিন পরই কলকাতার জীবনে বুঝি দেবদাস অভ্যস্ত হয়ে গেলো। চিঠি লেখা কমে গেলো।পার্বতী অপেক্ষা করে থাকে চিঠির, স্বয়ং দেবদাসের।কিন্তু ততদিনে দেবদাসের হাব-ভাব এমনকি রুচির ও বিশাল পরিবর্তন।
ছেলে-মেয়ে প্রায় সমবয়সী হলেও মেয়েদের বিয়ের ব্যাপারে বাবা-মা বেশ তাড়াহুড়ো করেন। পার্বতীর ক্ষেত্রেও হলো তাই। বিয়ের তোড়জোড় শুরু হলো। পার্বতীর ঠাকুমা দেবদাস’র মা কে যেয়ে দেব-পারুর বিয়ের বিষয়ে কথা বললো। কারণ, সবাই তাদের ঘনিষ্ঠতার কথা কমবেশি জানে।কিন্তু কেনা-বেচা ছোট ঘর আর বাড়ির পাশে কুটুম্বিতা করতে দেবদাসের পরিবার রাজি হলো না। পারুর হাজার কাকুতি ও দেবদাসকে স্পর্শ করলো না। ফলে হাতিপোতার চল্লিশোর্ধ্ব বয়সের জমিদারের সাথে পার্বতীর বিয়ে হয়ে গেলো।
আরও পড়ুনঃ শ্রীকান্ত – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
দেবদাস ততদিনে নিজের ভুল বুঝতে পারলেও তা ঢের দেরী হয়ে গেছে। পার্বতীকে হারিয়ে দেবদাস বুঝেছে কী হারিয়েছে সে! কিন্তু দেবদাস নিরূপায়। মনের বেদনা ভুলতে সে ছুটে যায় বেশ্যালয়ে। পরিচয় হয় চন্দ্রমুখীর সাথে। কিন্তু কিছুতেই সে পার্বতীকে ভুলতে পারে না…পারবে কি কখনো?
পাঠ_প্রতিক্রিয়া
বইয়ের চরিত্রের মানুষগুলোকে কেমন জীবন্ত মনে হলো।বইটা শেষ হতেই দেবদাস লোকটার জন্য বেশ মায়া লাগলো। মনটা বিষণ্ণ হয়ে গেলো। আরো কম বয়সে পড়লে হয়তো বালিশের কভার ভিজিয়ে কান্নাও করতাম। তবে, কান্না না করলেও বইটার কাহিনী মনে গেঁথে গেছে পুরোপুরি।
আরও পড়ুনঃ চরিত্রহীন – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
দেবদাস, পার্বতী, চন্দ্রমুখী সবগুলো মানুষের জন্য খারাপ লাগছে। মানে কী ভীষণ মন খারাপ করে দিয়েছে বইটা তা বলে বোঝাতে পারবো না।
এটা দিয়েই শরৎচন্দ্র পড়ার হাতেখড়ি হলো। মন খারাপ দিয়েই হলো। তারপরও আচ্ছন্ন হয়েছি লেখকের লেখনশৈলীর ওপর। যে লেখকের লেখা পড়েই মন খারাপ হয় কেন জানি সেই লেখকের বই পড়তে ভালো লাগে। সেই হিসেবে শরৎচন্দ্রেকে পড়তে হবে।অবশ্যই পড়তে হবে ♥
লিখেছেনঃ জান্নাতুল ফেরদৌস
বইঃ দেবদাস [ Download PDF ]
লেখকঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় অন্যান্য রচনা সমগ্র ডাউনলোড করুন