নুরুলদীনের সারাজীবন PDF রিভিউ | Nuruldiner Sara Jibon Natok PDF
বইয়ের নাম : নুরুলদীনের সারাজীবন
লেখক : সৈয়দ শামসুল হক
প্রকাশনা : চারুলিপি প্রকাশন
প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি, ১৯৯১
১৯৮২ সালে কবির শান্ত আকাশে নুরুলদীন ঘুরপাক খায় এই নাটকটির আবহমণ্ডল। কবি নুরুলদীনের কথা মনে পড়ে যায় শিরোনামে কবিতা সংকল করেছেন। বলতে গেলে, একটি জলন্ত চরিত্রকে ইতিহাসে ঠাঁই দেয়ার বহিঃপ্রকাশ এই বইটি। বাঙালী, বাংলাদেশ এই নুরুলদীনকে মনে রাখতে বাধ্য, এটি কবি তার চিন্তায় কুশীলবের মাধ্যমে পুরো বিষয়টি প্রকাশ করেছেন। নাটকের বিভিন্ন আবহমণ্ডল প্রকাশ করছেন। রংপুরের নুরুলদীন সকলের প্রতি ডাক আজও দেশের প্রতিকূল সময় মনে করায়।
নুরুলদীনের সারাজীবন নাটকটি সৈয়দ শামসুল হকের অমর সৃষ্টি। ইংরেজ আমলে কৃষক নেতার জীবনের উপর লেখা এই নাটকটি বাংলাসাহিত্যের নাটকের সংক্ষিপ্ত তালিকায় বেশ উপরের দিকে চলে আসে।
আরও পড়ুনঃ নবান্ন বিজন ভট্টাচার্য নাটক PDF রিভিউ
শুরুতে বলে রাখি নুরুলদীনের আসল নাম “নূরুলউদ্দীন” কিন্তু রংপুরের সাধারণ মানুষের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নুরুলদীন বলে ডাকা হয় পুরো নাটকে। নাটকের কাহিনী বলতে যেটা নির্দেশ করে তা হল: ১১৮৯ সন। ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর আক্রমণে, নির্যাতনে সবাই বন্ধী।
নূরলদীন রংপুরের কৃষকনেতা। যিনি বাল্যকালে বাবার সাথে মাঠে যেতে উচ্ছ্বসিত হয়ে পক্ষান্তরে ম্লান হয়ে যান। কেননা হালের গরুর বদলে তার বাবা লাঙ্গলের জোয়াল কাঁধে তুলে নেন। নূরলদিন গরু কোথায় জানতে চাওয়ায় তার বাবা বলেছে, জমিদারের খাজনা দিতে না পারায় জমিদার গরু কেড়ে নিয়েছে। নূরলদীনের হাত কাঁপতে থাকে। সে আর লাঙ্গল হাতে নিতে পারেনা।
“থরথর করি কাঁপে মুষ্টি তার, হাত থামি যায়,
বাপ উলটি ধমকায়, ‘বজ্জাতের ঝাড়,
আবার থামিলে তোর ভাংগি দেমো ঘাড়।”
বাবার ধমক খেয়ে নূরলদীন লাাঙ্গল হাতে ধরে, বাবা জোয়াল টানতে গিয়ে কোমর ভেঙে জমিতেই মারা যায়। সে থেকে অত্যাচারী নীলকর ব্রিটিশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে উঠেন নূরলদীন। সকল কৃষকদের একত্র করে ১১৮৯ সনে সংগ্রামের ডাক দেন।
আরও পড়ুনঃ নীল দর্পণ বই রিভিউ দীনবন্ধু মিত্র PDF
নূরলদীনের মধ্যে আমাদের বিদ্রোহী চেতনাকে জাগ্রত করতে সৈয়দ শামসুল হকের প্রয়াস এ গ্রন্থ। রংপুরের আঞ্চলিক ভাষা একটু দুরূহ ঠেকতে পারে। তবে এটি একটি অসাধারণ কাব্যনাট্য।
সবাইকে নীল চাষ করতে হবে, বিনিময়ে কিছু পায় না চাষারা। উল্টো দালালরা (দেবী সিং) খাঁজনা না দিতে পারলে সব লুট করে নিয়ে যায়। ভুখা পেটে দিন কাটায় পরিবার। এসব কষ্টের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় নুরুলদীন। সবাই একত্র করে। লাঠি দিয়ে মোগলাপুর কুঁটি দখল করতে চায়। একপর্যায়ে ইংরেজরা অস্ত্র দেখায়, সবার কথা শুনে। কিন্তু মানে না, ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।সায় দেয় গ্রামের কিছু লোক।
এভাবে তাদের চক্রান্তে নিহত হয় কৃষক নেতা কিন্তু জনগনের কাছে দেখে জান প্রতিবাদী মনোভাব নুরুলদীননের নিধর দেহ পড়ে আছে মঞ্চে। হঠাৎ তিনি উঠে পড়েন, “জাগো বাহে,কোনঠে সবায়” বলে। ভিন্ন ভিন্ন কন্ঠে আবর্তিত হয় নীলকোরাস, লালকোরাস, আব্বাস মন্ডল, আম্বিয়া, টমসন, লেফটেনেন্ট, লিসবেথ, গুডল্যাড প্রমূখ। নাটকে নুরুলদীন, আম্বিয়ার নিবিড় সম্পর্ক আলোকপাত করা হয়। কোম্পানির কষ্টের কথা এবং কূটকৌশল প্রকাশিত হয়। ১০ টি দৃশ্যের মধ্যে কিছু কথা অবশ্যই বলতে হয়,
“স্বার্থটা উভয় পক্ষে এক হলে, মিত্র হয়ে যায় পরম শত্রু, মাঝির অন্তর যদি ভাংগি যায়, নৌকা তার টুকরা হয়া নদীজলে ভাসে”
আরও পড়ুনঃ রক্তাক্ত প্রান্তর নাটক PDF রিভিউ | মুনীর চৌধুরী
পরিশেষ বলা যায়, নুরুলদীনের সাহস আজও তিস্তা নদীতে বহমান, বাতাসে উড্ডীয়মান, কৃষকের কন্ঠে চলিত হয়। কৃষকদের দাবী আদায়ে সোচ্চার লোকটি নিজ পরিবারের অসহায়ত্বের কথা মাথায় না রেখে আন্দোলন করেছেন। কবি তা অত্যন্ত সুন্দর রুচিশীল ভাবে নাটকে সংলাপের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।
ইতিতে একটা কথা বলব, নুরুলদীনের কথা মনে পরে যায়…
লিখেছেনঃ Zihadul Islam Sujon
বইঃ নুরুলদীনের সারাজীবন [ Download PDF ]
লেখকঃ সৈয়দ শামসুল হক
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
সৈয়দ শামসুল হক উপন্যাস সমগ্র রচনাবলী PDF Download করুন