বইয়ের নাম- রক্তাক্ত প্রান্তর
জনরা- নাটক
নাট্যকার- মুনীর চৌধুরী
পৃষ্ঠা-৪৬
মূল্য-৫০
বইঘর প্রকাশনী
সাহিত্যের বিভিন্ন শাখার মধ্যে অন্যতম প্রধান ও উজ্জল শাখা হলো নাটক। নাটক সমাজের দর্পন। মুনীর চৌধুরী বাংলা সাহিত্যের একজন খ্যাতিমান নাট্যকার। ১৯৬২ সালে তিনি “রক্তাক্ত প্রান্তর” নাটকের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার অর্জন করেন।
রক্তাক্ত প্রান্তর সত্যিই রক্তের প্রান্তর বা মাঠ। ১৭৬১ সালে সংঘটিত পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ “রক্তাক্ত প্রান্তর” নাটকের পটভূমি। পানিপথের যুদ্ধ মূলত, মারাঠাদের সাথে মুসলমানদের যুদ্ধ। এই যুদ্ধের ইতিহাস যতোটা না শোকের তার থেকে বেশি ভয়াবহ আকারের । যতো হিন্দু আর মুসলমান এই যুদ্ধে মারা যায় পাক ভারতের ইতিহাসে আর কখনো কোন যুদ্ধে এমন হয়নি।
পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের পূর্বে দু’বার মারাঠাদের কাছে মুসলমানরা পরাজিত হয়েছে। আহমদ শাহ আবদালীর নেতৃত্বে পুরো ভারতের মুসলমান এক হয়ে মারাঠাদের বিরুদ্ধে পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ শুরু করে। পানিপথের যুদ্ধে মেহেদী বেগগ মারা যায়। এই যুদ্ধে মুসলমানরা জয়ী হয় এবং মারাঠারা হয় পরাজিত। মেহেদী বেগের জামাতা এবং জোহরা বেগমের স্বামী ইব্রাহিম কার্দি মারাঠা সৈন্যধক্ষ।
যুদ্ধের সময় দুই দলই দূর্গ তৈরি করেছে। রাতের অন্ধকারে মারাঠা দূর্গে গিয়ে জোহরা বেগম তার স্বামীকে অনুরোধ করে মারাঠা শিবির ত্যাগ করার জন্য। কিন্তু ইব্রাহিম কার্দি রাজি হন নি। শুন্যহাতে জোহরা বেগম ফিরে আসতে হয়। ইব্রাহিম কার্দি মুসলমান হয়েও মারাঠা পক্ষ অবলম্বন করেছেন কারন, দুঃসময়ে মারাঠারা তার পাশে দাড়িয়েছিলো। তার কাছে স্বজাতির থেকের ঋণ অনেক বড়। এদিকে জোহরা বেগমের পিতার হত্যাকারী হলো মারাঠারা।
পতিভক্তি থাকলেও সে পিতার হত্যাকারীর পক্ষ অবলম্বন করতে পারে না। এই দুই চরিত্রের দ্বন্দ্বই এই নাটকের মূল ট্রজেডি ডেকে আনে। অন্যান্য আরো চরিত্র যেমন, আহমদ শাহ আবদালী, নজীবদ্দৌলা, জরিনা, সুজাউদ্দৌলা, রহিম, মন্নু বেগ, দিলীপ। মোট তিন অঙ্কের আটটি দৃশ্য। এর মধ্যে চারটি দৃশ্যই ট্রাজেডি। তবে মূল ট্রাজেডি হলো ইব্রাহিম ও জোহরার। তাদের প্রেম অটুট কিন্তু যুদ্ধ তাদের আলাদা করে দিয়েছে। দুজনই গোপনে একত্র হয়। কিন্তু আদর্শ ত্যাগ করতে পারে না। নাটকের কাহিনী শুরু হয় যুদ্ধের আয়োজনে এবং ধীরে ধীরে কাহিনীর গতি প্রকাশ পায়।
আরও পড়ুনঃ কবর নাটক PDF রিভিউ | মুনীর চৌধুরী
যুদ্ধ শেষ হয়। লাশের উপর লাশ। রক্তে রক্তাক্ত প্রান্তর। কিছু বুঝার উপায় নেই। কাউকে চেনার উপায় নেই। তবে নাটকে এই রক্তক্ত প্রান্তর ছাপিয়ে উঠে আসে রক্তাক্ত হৃদয়ের ক্ষরণ। চরিত্রের ট্রাজেডি সমূহ।
জোহরার বক্ত্যবে-
“এই শিবিরে তোমার আর আমার মাঝখানে আমার পিতার লাশ শুয়ে আছে। আমি তোমার কাছে এগুবো কি করে?”
সুজাউদ্দোলার সংলাপ-
“মানুষ মরে গেলে পচে যায়। বেঁচে থাকলে বদলায়। কারণে-অকারণে বদলায়।”
এই নাটকের প্রতিক্রিয়া বলতে হলে এটাই বলতে হবে, রক্তের গঙ্গাও বোধহয় এতটা হৃদয়ক্ষরণ ঘটাতে সক্ষম হবে না। জোহরা বেগম যখন ইব্রাহিম কার্দির কাছে গিয়ে ফিরে আসার আবদার করে সেই অংশটুকু পাঠককে সত্যিই কষ্ট দিবে। কেন না একজন আরেকজনকে এতোটা পছন্দ করে। তারা তাদের ছেড়ে থাকবার কথা মোটেই ভাবতে পারে না। সেখানে শুধু মাত্র আদর্শের জন্য দুজন দু দিকে ছিটকে যায়। পিতার হত্যার প্রতিশোধে জোহরা বেগম ওরফে মুন্নু বেগ কতটা কঠিন হতে পারে একজন মেয়ে মানুষ হয়ে এটাও আমাকে অবাক করে দেয়। এছাড়াও নাটকের হিরণ, আতা খাঁ, রহিম চরিত্র গুলোর কাহিনী গুলো যন্ত্রণা দায়ক।
আরও পড়ুনঃ চিঠি মুনীর চৌধুরী নাটক PDF রিভিউ
সত্যি বলতে, “মানুষ মরে গেলে পচে যায়। বেঁচে থাকলে বদলায়। কারনে অকারনে বদলায়” সুজার এই একটা উক্তির জন্যই নাটকটা আমার খুবই প্রিয়। তাছাড়া ইব্রাহিম কার্দির ব্যক্তিত্ব বোধ! অসাধারণ। একেবারে নাটকের শেষ পর্যন্ত চরিত্রটাকে অসম্ভব ভালো লাগে । ভালো লাগে জোহরা বেগমকেও। তবে বিরক্ত লাগে জরিনা আর দিলীপ চরিত্র দুটোকে।
নাটকের শেষে যুদ্ধ জয় আমাকে ততটা স্বস্তি দিতে পারেনি। কেননা এই ররক্তের বন্যা দিয়ে যুদ্ধের জয় হলেও, যুদ্ধে মানুষ যা হারিয়েছে। তা কোনদিন ফিরে পাবে। সর্বোপরি নাটকটি ভালো লেগেছে।
লিখেছেনঃ ফেরদৌসি রুমী
বইঃ রক্তাক্ত প্রান্তর [ Download PDF ]
লেখকঃ মুনীর চৌধুরী
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
মুনীর চৌধুরী রচনাসমগ্র PDF Download করুন