গল্প সমগ্র সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ছোটগল্প PDF রিভিউ | Golpo Somogro Waliullah
বই – শ্রেষ্ঠ গল্প
লেখক – সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ
সম্পাদনায়- আহমাদ মোস্তফা কামাল
প্রকাশক-বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র
মূল্য – ১৮০ টাকা
আহমাদ মোস্তফা কামাল এর মতে, তিনি বাংলাদেশের প্রথম এবং প্রধানতম দার্শনিক কথাশিল্পী। যে গল্পগুলো নিয়ে সাজানো হয়েছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নয়নচারা, জাহাজী, মৃত্যুযাত্রা, একটি তুলসী গাছের কাহিনী, কেরায়া, গ্রীষ্মের ছুটি, স্তন, মতিনউদ্দিনের প্রেম, মানুষ, ছায়া, দ্বীপ, প্রবল হাওয়া ও ঝাউগাছ, সূর্যালোক মাঝ্ অবসর কাব্য, রক্ত ও আকাশ, না কান্দে বুবু ।
তার ভাষা ধীরগতির, ধীরে সুস্থে এগোতে এগোতে পাঠকের ভেতরে সৃষ্টি করেন এক অন্তর্গত আলোড়ন। ভেতর থেকে নাড়িয়ে দেন। করে দেন অসহায়। এক অস্বস্তি, বিপন্নতার মুখোমুখি দাড় করান পাঠককে। এভাবে টের পাওয়া যায় তার অসাধারণ শক্তিময়তা। এই সঙ্কলনের একটা ত্রুটি বলব পাগড়ি গল্পটা আসা উচিত ছিল। তার স্তন, সারেং, মাঝি এখনো মনের ভেতরে নাড়া দেয়, দিয়ে যাবে। তার গল্পের স্বাদ নিতে পাঠক হিসেবে কিছুটা অগ্রসর হবার দরকার আছে।আর দীক্ষিত পাঠক হলে ত কথাই নেই, আপনার জন্যই ওয়ালিউল্লাহ।
বাংলাদেশের গ্রামীন জীবন তার অধিকাংশ গল্পের পটভূমি। গ্রাম জীবনের অনাচার, নানা কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতার সার্থক একেছেন তিনি তার গল্পে। সাধারণ মানুষের প্রতি অপার দরদ, মানবিক বোধ টের পাওয়া যায় গল্পের পরতে।
তার গল্পের নির্মাণকুশলতাও দেখার মত। কিভাবে বলা যায় সেটা ও লক্ষ্য করার মত ।
তার ‘না কান্দে বুবু’ আঙ্গিক অন্যরকম লেগেছে। তার গল্পের অনেক লাইন মনে গেথে গেছে।
যেমন – সারেং গল্পের ”মানুষ হতে হলে প্রথমে মানুষের লাথি খেতে হবে।” বুকের ভেতরটা
কেমন যেন করে উঠে।
কিংবা মাঝি গল্পে, মাঝি মনির তার আরোহীদের ঝড় আসবে বলে সতর্ক করে নদী পার হতে বারবার মানা করে। কারণ সে নদী চেনে, ঝড়কে ও চেনে। এমনি এক ঝড়ে তার বাপ মরে গিয়েছিল।
কিন্তু যাত্রীরা পাত্তা দেয় না , বরং সন্দেহ করে। এবার সে নৌকা ছাড়ে। কিন্তু মাঝনদীতেও যখন ঝড় আসে না, তখন মনির মনে মনে বলে , খোদা ঝড় কি আসবো না ? আরোহী তাকে বিশ্বাস করেনি – এই অপমানের কষ্ট তার কাছে মৃত্যুর চাইতেও বেশি মনে হয়।
খোদা ঝড় কি আসবো না ? – এই লাইন সবসময় বুকে ব্যথা দিয়ে যাবে।
আরও পড়ুনঃ চাঁদের অমাবস্যা সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ PDF রিভিউ
পাঠ প্রতিক্রিয়া
মাত্র তিনটি উপন্যাস, দুটি গল্পগ্রন্থ, দুটি নাটক; তাঁর জীবনকালে প্রকাশিত এই কয়েকটি মাত্র গ্রন্থ এবং আরো কিছু অগ্রন্থিত রচনা, এই নিয়েই বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান লেখক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ। সেইসময় যখন আমাদের কেবল মুসলিম পরিচয়টাকেই বড় করা হচ্ছে তখন তিনি সামনে আনেন আমাদের বাঙালিত্বকে। আর যেহেতু তিনি নিজে বাঙালি মুসলমানের সাহিত্যরুচি তৈরি করতে চেয়েছিলেন তাইতো তাঁকে করতে হয়েছে নানা পরীক্ষা। উপন্যাসে আর নাটকে কখনও ধর্মীয় ভন্ডামি তুলে এনেছেন আবার কখনও বা অস্তিত্ববাদ উঠে এসেছে। ঠিক তেমনিভাবে গল্পেও করেছেন নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা। তাইতো প্রায় একই সময়কারে রচিত তাঁর গল্পগুলোর মধ্যে লক্ষ্য করা যায় নানা বিপরীতধর্মিতা।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ তাঁর গল্পের ভাষাভঙ্গি, ঋজুতা, মানসিক টানাপোড়েন নির্মাণে দক্ষতা, সচেতনতা, চরিত্রচিত্রণের কুশলতা, শিল্পমূল্যের ব্যাপারে তূক্ষ্ম সচেতনতা ইত্যাদির জন্য বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান লেখকে পরিণত হয়েছেন। আর এইসব বৈশিষ্ট্যেরই দেখা পাওয়া যায় আলোচ্য গ্রন্থের ১৮ টি গল্পতে। কখনও তিনি এক অনাহারী কিশোরের আহাজারি শুনিয়েছেন কখনোবা মানুষের অস্তিত্বের প্রশ্ন সামনে এনেছেন। কখনও সোজা ভাষায় বর্ণনা করেছেন কখনোবা আশ্রয় নিয়েছেন রূপকের, প্রতীকের, কখনোবা গল্প গড়েছেন অ্যাবসার্ড নাটকের আদলে।
‘স্তন’ গল্পের কথা যদি বলি। আবু তালেব সাহেবের কন্যা খালেদা সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেলে শিশুটি দুধবঞ্চিত হয়। এদিকে তালেব সাহেবের এক দূরসম্পর্কের আত্মীয় কাদেরের স্ত্রী মাজেদা মৃত সন্তান প্রসব করে। এটিকে একটা সুযোগ ভেবে তালেব সাহেব শিশুটিকে নিয়ে যায় কাদেরের বাড়িতে। ঔষধ-পথ্য ও ধানী জমির লোভ দেখিয়ে নিজ নাতিকে বাঁচাতে চায় সে। আর এখানেই লেখকের মুন্সিয়ানা। তিনি দেখিয়েছেন কিছু কিছু সম্পর্ক যাবতীয় লেনদেনের ঊর্ধ্বে। তাইতো স্তনে ভরপুর দুধ থাকলেও তালেব সাহেবের নাতি দুধ পায় না, দুধ যেন জমে গেছে। আর গল্পের লাস্ট লাইনটা তো পুরো গল্পকে আরো অসাধারণ করে তোলে। সে কথাটি নাহয় নাই বা বললাম! তো আসুন যাত্রা করি লেখকের সৃষ্ট জাদুময় দুনিয়ায়!
নিজেকে সমৃদ্ধ করতে ওয়ালীউল্লাহ্ পড়া উচিত। যারা লেখালিখি করেন তাদের জন্য অনেক শিক্ষণীয় উপাদান আছে এই বইটিতে।
লিখেছেনঃ Mahmud Rahman
বইঃ শ্রেষ্ঠ গল্প সমগ্র
লেখকঃ সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ রচনা সমগ্র PDF Download করুন