Skip to content
Home » লালসালু উপন্যাস PDF রিভিউ সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ | Lalsalu Syed Waliullah

লালসালু উপন্যাস PDF রিভিউ সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ | Lalsalu Syed Waliullah

    লালসালু উপন্যাস সংক্ষেপে রিভিউ চরিত্র সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ pdf
    Redirect Ads

    উপন্যাস – লালসালু
    লেখক – সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ
    (বিশ্লেষণধর্মী পাঠ-ভাবনা)

    বাংলা কথাসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রূপকার ও সমাজসচেতন সাহিত্যশিল্পী সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামের ষোল শহরে জন্মগ্রহণ করেন । জীবনসন্ধানী এই সাহিত্যিক ব্যক্তিজীবনের অভিজ্ঞতা এবং সামাজিক অসঙ্গতিকে বেছে নিয়েছেন তাঁর সৃষ্টি পথের মূল সম্পদ হিসেবে ।মনোলোকের রহস্য অনুসন্ধানেও তিনি ছিলেন সদা তৎপর । এ কথাও অনস্বীকার্য যে বাংলাদেশের কথাসাহিত্যকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার পথিকৃৎ তিনি ।

    Download

    ঔপন্যাসিক তাঁর উপন্যাসে শুধু ব্যক্তি ও সমাজের চিত্রই তুলে ধরেননি , তুলে ধরেছেন এই দুইয়ের মধ্যকার প্রবাহিত অন্তর্নিহিত জটিলতার আখ্যান , তুলে ধরেছেন ধর্মীয় এবং সামাজিক কুসংস্কারের অন্ধকারজগত । তাঁর বহুল আলোচিত ‘লালসালু’ উপন্যাসটি ধর্ম নিয়ে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থকারীদের স্বরূপ উন্মোচনের দলিলই কেবল নয় বরং বিদ্রোহী নারী সত্তার প্রতিবাদের সুস্পষ্ট প্রতীক ।

    এই উপন্যাসে একদিকে যেমন আমাদের রূপসী বাংলার সৌন্দর্য, মাধুর্য,কঠোরতা, হাপিত্যেশ উঠে এসেছে, তেমনি ধরা পড়েছে অগণিত গ্রামীণ মানুষের অকপট সরল জীবন-যাপনরীতি।

    সর্বোপরি উপন্যাসের মূল বিষয় বাংলার পীরবাদ । মূলত উপন্যাসের কাহিনি আবর্তিত হয়েছে ভাগ্যান্বেষী মজিদের ধর্মকে পুঁজি করে লোক ঠকিয়ে নিজ স্বার্থসিদ্ধির ঘটনাকে কেন্দ্র করে । নোয়াখালী অঞ্চল থেকে আগত মজিদ গারো পাহাড়ি অঞ্চল মহব্বতনগর গ্রামে পা রেখেই তার কুটবুদ্ধির প্রতিফলন ঘটায় গ্রামের মানুষের সরলতার সুযোগে । গ্রামে এসে সে প্রথম ঘাঁটি গাড়ে গ্রামের মাতব্বর খালেক ব্যাপারীর বাড়িতে । গ্রামের অদূরে বাঁশঝাড়-সংলগ্ন পরিত্যক্ত পুকুর পাড়ের শ্যাওলা পড়া জরাজীর্ণ কবরকে সে ‘মোদাচ্ছের পীর’ নামক একজন পীরের মাজার বলে ঘোষণা দেয় এবং এ ও জানায় যে বিষয়টি তার স্বপ্নে পাওয়া এবং সেই পীরের আদেশেই তার এখানে আগমন । গ্রামের সবাই মিলে সরল বিশ্বাসে কবরটির সংস্কার করে ঝালরওয়ালা লালসালু বিছিয়ে দেয় এবং মজিদ কথিত মাজারের খাদেম সাজে ।

    আরও পড়ুনঃ চাঁদের অমাবস্যা সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ PDF রিভিউ

    Download

    মজিদের ছিল নির্লিপ্ত মিথ্যা বলার প্রবণতা , কন্ঠে মিহি সুর । গ্রামের সহজ-সরল ধর্ম-ভীরু মানুষদের ভয়ভীতি দেখিয়ে সে সহজেই নিজ স্বার্থ হাসিল করে আসনে গেড়ে নিতে সক্ষম হয়।

    অচিরেই সেখানে ভক্তদের পদচারণায় মুখরিত জনপদে পরিণত হয় , সেই সাথে কৃপাপ্রার্থীরা টাকা-পয়সাও দিতে থাকে প্রচুর । ফলে অল্প সময়েই মজিদ গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিত্বে পরিণত হয় , বিচার-সালিশ প্রক্রিয়ায় সে-ই হয় প্রধান সিদ্ধান্তগ্রহণকারী ব্যক্তি । তার নানাবিধ ভেল্কিবাজি নিরক্ষর গ্রামবাসীর কাছে তাকে অলৌকিক ক্ষমতাবান হিসেব প্রতিকায়িত হয় ।তার প্রথম স্ত্রী রহিমা ঠান্ডা-ভীতু প্রকৃতির মানুষ , কাজেই তাকে অনুগত রাখতে মজিদকে কোন বেগ পেতে হয় না । তবে তার স্বাভাবিক জীবন পথে বাঁধা হয়ে আসে দ্বিতীয় স্ত্রী জমিলা । মজিদের কুটবুদ্ধির জাল মাজার পেরিয়ে মাতব্বর খালেকের ব্যক্তি-জীবনেও প্রবেশ করে যার ফলশ্রুতিতে খালেক বাধ্য হয় তার নিঃসন্তান স্ত্রী আমেনাকে তালাক দিতে ।

    গ্রামবাসী যাতে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে মজিদের মাজার ব্যবসায় কোন লোকসান ঘটাতে না পারে,তারজন্য শিক্ষিত যুবক আক্কাসের বিরুদ্ধে সে উঠেপড়ে লাগে । তার স্কুল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন গুঁড়িয়ে দেয় এবং তাকে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য করে । এছাড়াও পাশ্ববর্তী গ্রাম আওয়ালপুরে অন্য পীরের আগমনে মজিদ নিজের আধিপত্য বিনাশের আশঙ্কা করে এবং গ্রামবাসীদের কৌশলে ঐ পীরের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলে ।

    উপন্যাসে ধর্মগুরুদের এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবার-বিদ্রোহের মুখ্যতম আঘাত হানে কিন্তু নারী , যে নারীকে রেখে দেয়া হয় পর্দার আড়ালে । মজিদের ধর্মের নামে স্বেচ্ছাচারিতা প্রবলভাবে প্রতিরোধের সম্মুখীন হয় তার অত্যাচারে অতিষ্ট কিশোরী বধূ জমিলা যখন তার বুক থু-থু নিক্ষেপ করে । মজিদ পূর্বে এমন দৃঢ়চেতা প্রতিপক্ষের সম্মুখীন হয়নি বিধায় মনে মনে ঘাবড়ে যায় । পরবর্তী সময় মাজার প্রাঙ্গণে মজিদ কতৃক পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে জমিলা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে , এতটাই জেদি চিত্ত তার যে সে কারো সাহায্য প্রার্থনা করে না । অত্যাচারে চেতনাহীন জমিলার একটি পা কবরের গায়ে লাগে । এটা ছিল ঔপন্যাসিকের প্রতীকী প্রকাশ । এ যেন মজিদকেই সুতীব্র পরিহাস ! মূলত এই দ্বন্দ্বটা কৃত্রিম অন্ধ সংস্কারের সাথে মুক্তমানব সত্তার । জমিলা কিন্তু হার স্বীকার করে নি , নত হয়নি , তার বিদ্রোহ ছিল লক্ষ্যভেদী এবং শেষ অবধি সে অপরাজিত । মজিদের শেষ পরিণতি কোন দিকে ধাবিত হয়েছিল তা জানতে হলে উপন্যাসটির নিবিড় পাঠের জন্য পাঠককে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি ।

    Download

    আরও পড়ুনঃ গল্প সমগ্র সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ছোটগল্প PDF রিভিউ

    লালসালু উপন্যাসে প্রতারক ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব মজিদের স্বরূপ উন্মোচনের মাধ্যমে ঔপন্যাসিক সমাজের দুষ্টুচক্রের ফাঁদকে তুলে ধরেছেন । তবে তিনি না করেছেন প্রতীকাশ্রয়ে জমিলার মধ্য দিয়ে । উপন্যাসের ঘটনা বিন্যাসে তিনি কোন প্রথাবিরুদ্ধ কাহিনি সংস্থাপন-রীতিকে প্রাধান্য দেননি । বাংলা উপন্যাসের ধারায় প্রচলিত পদ্ধতিই তিনি অনুসরণ করেছেন । উনিশ শতকীয় এবং ভিক্টরীয় উপন্যাস গৃহীত ঘটনা বিন্যাস কৌশলকে উপজীব্য করে ‘লালসালু’ উপন্যাসটি রচিত হয়েছে ।

    পরিশেষে বলি, উপন্যাস পাঠে এটা সহজেই অনুমেয় যে ধর্মবিশ্বাসে আঘাত হানা ঔপন্যাসিকের লক্ষ্য ছিল না , তাঁর লক্ষ্য ছিল ধর্মের নামে প্রচলিত কুসংস্কার , গোঁড়ামি আর অন্ধত্ব দূরীকরণ । উপন্যাসের ঝালরওয়ালা লালসালুটি কেবল অজানা পীরের কবরটিই আবৃত করে রাখেনি ,ঢেকে রেখেছিল আমাদের সহজাত বোধবুদ্ধি এবং চিন্তার গতিপথকে । অনবদ্য জীবনবোধ ,প্রতিবাদের শাণিত রূপের প্রকটতা ,অপবিশ্বাসের নগ্ন স্বরূপ উম্মোচন সবমিলিয়ে ‘লালসালু’ বাংলা সাহিত্যের এক কালোত্তীর্ণ উপন্যাস । শিল্পিত সামাজিক দলিল হিসেবের এটি বাংলা সাহিত্যের একটি অবিস্মরণীয় সংযোজন ।

    লিখেছেনঃ প্রিয়াংকা বিশ্বাস

    Download

    বইঃ লালসালু [ Download PDF ]
    লেখকঃ
    সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ

    ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

    সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ রচনা সমগ্র PDF Download করুন

    Facebook Comments
    Tags:
    x
    error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করুন