বইয়ের নামঃ বহিপীর
লেখকঃ সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ
ঘরনাঃ বাংলা নাটক
বইয়ের পৃষ্ঠাঃ ৭৮
মূল্যঃ ৮৪ টাকা
প্রকাশনীঃ জয়
ব্যক্তিগত অনুযোগ (রেটিং): ৪.৬/৫
চরিত্রঃ বহিপীর, হাতেম আলী, হাশেম আলী, তাহেরা, খোদেজা, খাদেম হাকিকুল্লাহ….. প্রমুখ।
“যে-মেয়ে ঘর ছেড়ে পালাতে পারে সে অত সহজে ভয় পায় না। কিন্তু আমি এ-কথা বুঝি না যে, তুমি কি করে পালাতে পারলে। কথাটা যেন বিশ্বাস হতে চাইয় না। কে কখন এমন কথা শুনেছে? পালাবার সময় সত্যিই এ-কথা খেয়াল হয় নি যে কোথায় যাবো কোথায় থাকবো কী করে এমন কাজ করি?”
উপরের কথাগুলো ‘পি.ই.এন.’ পুরষ্কারপ্রাপ্ত নাটক ‘বহিপীর’ এর অংশবিশেষ, যেখানে খোদেজা অবাক কণ্ঠে নিজের অবিশ্বাস্য কথাগুলোকে বলে যাচ্ছিলো।
খুব কম কিছু লিখে, খুব কম কিছু সৃষ্টি করেও যে বাংলা সাহিত্যে স্মরনীয় স্থান দখল করা যায়, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ তাদের মধ্যে একজন। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ আমাদের পাঁচ দশকের এক বিরল, নিরীক্ষাপ্রিয় ও মৌলনাট্য প্রতিভা। আধুনিক নাটকে সংলাপ সৃষ্টি, নাট্যশৈলী নির্মাণ, অভিনয় কৌশল, বিষয়বস্তু যোজনা, মঞ্চ পরিকল্পনা- এই সবকিছুতে পুরোনো আবহ কাটিয়ে উঠেছে বাংলা নাটক।
এতে আরো নতুনত্ব এসেছে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর মতো নাট্যকারের স্পর্শে। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ এর প্রথম নাটক বহিপীর ১৯৫৫ সালে রচিত হয়, আর, এই নাটকে নাট্যকার আমাদের দেশীয় সমাজের চেতনা উদ্ভুদ্ধ করেছেন।
আরও পড়ুনঃ চাঁদের অমাবস্যা সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ PDF রিভিউ
রেশমপুরের সামান্য জমিদারির মালিক হাতেম আলীর জমিদারি সান্ধ্য আইনে নিলামে ওঠার উপক্রম। স্ত্রী ও পুত্র হাশেম আলীকে নিয়ে তিনি টাকা সংগ্রহের জন্য চিকিৎসার কথা বলে পারিবারিক বজরায় ঢাকা যাচ্ছেন। ঢাকার নিকটবর্তী ডেমরা ঘাটে বজরা উপস্থিত হলে জমিদার পত্নী বিপন্ন অবস্থার সম্মুখীন তাহেরা কে দেখতে পান।
সহানুভূতিশীল হয়ে তাহেরাকে তাদের বজরায় আশ্রয় দেন।
তাহেরার ঘরে সৎ মা আর তার পিতা তাহেরা প্রতি ততটা স্নেহবৎসল নয়। তারা জোর করে এক বৃদ্ধ পীরের সাথে তাহেরার বিয়ে দেয়।
কিন্তু তাহেরা এই বিয়ে মানে না, ফলে, সে তার চাচাত ভাইয়ের সাথে পালিয়ে আসে।
একই সাথে, সেই সময়, পীর সাহেবেও তার খাদেম হাকিকুল্লাহ কে সাথে নিয়ে তাহেরার খোঁজে বের হয়। ঝড়ের সময় খালের ভিতরে ঢুকবার সময় পীরের নৌকার সাথে হাতেম আলীর বজরার ধাক্কা লাগে।
এরফলে, বহিপীরও হাতেম আলীর বজরায় স্থান পায়।
হাকিকুল্লাহর মাধ্যমে পীর সাহেব জানতে পারেন তাহেরাও এই বজরায় আছে। ঢাকায় গিয়ে হাতেম আলী তার বন্ধুর কাছে টাকা না পেয়ে উৎকন্ঠা আর অস্থিরতা নিয়ে ফিরে আসে। পীর সাহেব তার উৎকন্ঠার কারণ জানতে পেরে তাকে টাকা সাহায্য দেওয়ার কথা বলে।
কিন্তু শর্ত একটি, তাহেরাকে ফিরিয়ে দিতে হবে। তাহেরা যখন জানতে পারে এই কাহিনী, তখন সে জানায়, প্রয়োজন হলে সে নদীতে ঝাঁপ দিবে তবুও ভন্ড পীরের সাথে যাবে না।
আর, এসব চরিত্রগুলোকে ঘিরে নাটকটি এগিয়ে যেতে থাকে সুচারূরুপে।
নিজের ব্যক্তিগত পাঠ প্রতিক্রিয়া বলতে গেলে বলবো যে, নাটকটি ছিলো সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর সবচেয়ে অনিন্দ্য এক সৃষ্টি। নাটকের অংকিত কাহিনী মূলত সরল কিন্তু তা একটি বিশেষ সমাজ বাস্তবতাকে স্পর্শ করে।
আরও পড়ুনঃ কাঁদো নদী কাঁদো সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ PDF রিভিউ
এই নাটকে এই দেশীয় ধর্ম আশ্রিত ব্যক্তিবর্গ, পীর দরবেশ এবং তার খাদেমদের চারিত্রিক অসঙ্গতি নাট্যকার প্রদর্শন করেছেন। সহজ কাহিনীর অভ্যন্তরে অসম্ভব সত্য এবং অস্তিত্ববাদী বক্তব্য উপস্থাপিত হয়েছে।
ধর্মের নামে সমাজকে কুসংস্কারে ঘিরে ফেলে এক পরিবারের বর্ণনা দেওয়া আছে, সমাজকে ছিন্ন করে নিয়ে অস্থিরতার এক সরল কাহিনী সৃষ্টি হয়েছে এই নাটকে।
সব বইপ্রেমীদের, সাহিত্যপ্রেমীদের আর গল্পপ্রেমীদের সৃষ্টিশীল এই অনব্দ্য নাটকটি পড়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি…
লিখেছেনঃ মোহাম্মদ খালিদ সাইফুল্লাহ ফয়সল
বইঃ বহিপীর [ Download PDF ]
লেখকঃ সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ রচনা সমগ্র PDF Download করুন