বইয়ের নাম- উজানে মৃত্যু
জনরা- নাটক
নাট্যকার- সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ
পৃষ্ঠা-৭১
মূল্য-১০০
প্রথম প্রকাশ-১৯৬৪
নুসরাত প্রকাশনা
“উজানে মৃত্যু” বাংলা নাট্য সাহিত্যে এক বিরল সৃষ্টি। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ নাট্যজগতে পা রাখেন “বহিপীর” নাটকের মাধ্যমে। এরপর তরঙ্গভঙ্গ, সুড়ঙ্গ পেরিয়ে “উজানে মৃত্যু” নাটকে গিয়ে ইতি টানেন। এদিক দিয়ে “উজানে মৃত্যু” নাটকটি নাট্যকারের শেষ নাটক। এমনকি অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে পাকা হয়ে উঠেছিলেন বলা যায়।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বাংলা কথাসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক। জীবন-সন্ধানী ও সমাজসচেতন এ সাহিত্য-শিল্পী জীবনে অনেক অঞ্চলের মানুষের সাথে মিশবার প্রয়াশ পেয়েছেন। আর সে সকল জীবনবোধ থেকে সংগ্রহ হয়েছে তার সাহিত্যের উপাদান। এসবই তাঁর উপন্যাস ও নাটকের চরিত্র-চিত্রণে সর্বদা সহায়তা করেছে।
“উজানে মৃত্যু” নাটকের চরিত্র গুলোর কোন নাম নেই। চরিত্র চিত্রণ, আর বর্ণনাতে নাট্যকার তাদের পুরোপুরি নিঃসঙ্গ করে উপস্থাপন করেছেন। এভাবে ভাবলে “উজানে মৃত্যু”কে একটা নিসংঙ্গ সৃষ্টি বলে মনে হয়।
বিশ শতকের মানুষের জীবনে কোন গল্প নেই। সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সে পুরো নিঃসঙ্গ। জীবনের শুন্যতাকে বয়ে নিয়ে জীবন যুদ্ধে এগিয়ে চলছে। উপভোগ করছে নিজের যন্ত্রণা, দুঃখবোধ। “উজানে মৃত্যু” নাটকেও এরকম বিপন্ন মানবচেতনার গল্প। গল্প হয়েও তাই কোন গল্প নেই, এই নাটকের। কিছু গল্পহীনদের গল্প, আর ঘটনা হীনদের ক্ষয়ে যাওয়া কিছু ঘটনার সমাহার।
আরও পড়ুনঃ বহিপীর নাটক PDF রিভিউ | সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ
চরিত্রের নাম না থাকলেও নাট্যকার চিহ্নিত করেছেন- নৌকাবাহক, সাদা পোশাক পরিহিত ব্যক্তি, কালো পোশাক পরিহিত ব্যক্তি। তার তিনজনই শ্রমজীবী, সমাজে খেটে খাওয়া মানুষ।
স্ত্রী, তিন ছেলে, বেঁচে থাকার জন্য উর্বর জমি। সবই ছিলো নৌকাবাহকের। কিন্তু কালে কালে সে হয়ে গেছে শুন্যহস্ত। কালের করাল গ্রাসে সে নিঃস্ব। এক পরাজিত সৈনিক। এতোটাই নিঃস্ব, যে জীবনের ভার বহনের ক্ষমতাটাও সে হারিয়ে ফেলেছে। তাই সে তার নৌকা বয়ে চলছে উজানের দিকে। তার জন্য আজ আর কেউ অপেক্ষায় নেই। তার জন্য পৃথিবীতে আনন্দকর বা স্বস্থিদায়ক এমন কোন স্থান নেই। তাই তার নৌকা বয়ে চলছে অনন্তের পথে। অর্থাৎ মানবজীবনের সর্ব শেষ কোণ মৃত্যু, আর সেদিকেই সে এগিয়ে চলছে।
বস্তুত, মৃত্যু এক জীবনদর্শন। প্রতিষ্ঠিত আর পরিবর্তনশীল সমাজ ব্যবস্থায় মানুষ যখন ক্রমেই তার অস্তিত্ব হারাতে শুরু করে আর নিমজ্জিত হতে থাকে অতলে, সে সময় মৃত্যু ভিন্ন বহমান সমাজে অস্তিত্ব প্রকাশ সম্ভব হয় না। তাই মৃত্যুই মানুষের অস্তিত্ব অনুভবের একরকম পন্থা। মানুষ নিজের সত্তার মাঝেই লালন করে চলে এক বিনাশী শক্তি। সাদা পোশাক পরিহিত ব্যক্তি নৌকাবাহকের সহযাত্রী ও বাল্যবন্ধু। জীবন সম্পর্কে তার প্রতিক্রিয়া নৌকাবাহকের অনুরূপ।
কালো পোশাক পরিহিত ব্যক্তি উজানে যাত্রায় ভীত। কেন না, প্রথাবদ্ধ এমনকি অস্তিত্বহীন জীবনে তার কোন সংশয় নেই। নাট্যকার চরিত্রদের কোন নাম না দিলেও অবয়ব দিয়েই নাটকে তাদের প্রাণস্পন্দন পাওয়া যায়। এই দুই ব্যক্তির সংলাপে পরবর্তীতে নৌকাবাহকের পরিচয় পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুনঃ তরঙ্গভঙ্গ নাটক PDF রিভিউ | সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর সাহিত্যচেতনার অন্যতম হলো মৃত্যুচেতনা। যা তার গল্প উপন্যাসে প্রায়ই পাওয়া যায়। “উজানে মৃত্যু” নাটকে নাট্যকার এই চেতনার প্রকাশ দেখিয়েছে। “উজানে মৃত্যু” নাটকের নাম করণেই নাট্যকার উল্টো দিকে দাড় টেনে দিয়েছেন।
নৌকাবাহক জীবনের সমস্ত উপদান হারিয়ে যখন নিঃস্ব। তখন সে সমস্ত যন্ত্রণার অবসানের লক্ষে এগিয়ে চলছে তার আকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর দিকে। এই একটা বাক্যই আমাদের অস্তিত্ব হারানো মানুষদের পরিচিতি। উপলব্ধি করি। একটা মানুষের কি আর হারানোর অবকাশ থাকে? কত কাল নিঃস্ব হয়ে আকাশের নিচে দাড়িয়ে থাকা যায়? কতকাল সমস্যাগুলোকে পাশ কাটিয়ে জীবন চালিয়ে নেওয়া যায়? একটা সময় ঈশ্বর ব্যতীত আর কেউ থাকে না সঙ্গী সরূপ। আর তাই তড়িঘড়ি যাত্রা অনুভব করি সেই উদ্দ্যেশে। প্রতিটা মানুষই তো এমনই। তাই কি নয়? একটা সময় মৃত্যু কি আমাদের কাছে আকাঙ্ক্ষার বস্তু হয়ে উঠে না!
লিখছেনঃ ফেরদৌসি রুমী
বইঃ উজানে মৃত্যু [ Download PDF ]
লেখকঃ সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ রচনা সমগ্র PDF Download করুন