বইঃ আরণ্যক
লেখকঃ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রকাশনীঃ বিশ্বসাহিত্য
মূদ্রিত মূল্যঃ ১৫০ টাকা
আরণ্যক শব্দটি আক্ষরিক অর্থে বন সম্বন্ধনীয়৷ উপন্যাসটি বিভূতিভূষণের বাংলা সাহিত্যের জন্যে এক অমূল্য এক সৃষ্টি৷
উপন্যাসের প্রধান চরিত্র সত্যাচরণ ভাগলপুরের কাছাকাছি এক জঙ্গলে একটি জমিদার এস্টেটের পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হয়। চাকরিতে নিযুক্ত হবার পর থেকে জঙ্গলে আসার আগ পর্যন্ত তার চিন্তা ছিল কলকাতার মত শহরে বাস করা একটি ছেলে কী করে শহর ছেড়ে দূরে একাকী নির্জন অরণ্যে নিজেকে খাপ খাওয়াবে! কিন্তু সেখানে যাবার পর সেই অরণ্যের প্রকৃতি তাকে এমনভাবে টানল যে সে ধীরে ধীরে মোহিত হতে শুরু করে৷ সেই প্রতিটি দিনের ঘটনাগুলো লিপিবদ্ধ হতে থাকে তার দিনপঞ্জিকা হিসেবে৷ সেখানকার প্রতিটি গাছ, লতা-পাতার সাথে তার নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠতে থাকে৷ জোছনার রাতে লবটুলিয়া, ফুলকিয়া বইহার কিংবা স্বরসতী কুন্ড যে অপরুপ সৌন্দর্য সৃষ্টি করত তা উপভোগ করার জন্যে সে বারবার জন্তু-জানোয়াড়ের ভয় উপেক্ষা করে ঘোড়া নিয়ে ছুটত!
আরও পড়ুনঃ আদর্শ হিন্দু হোটেল – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় PDF + রিভিউ
সেখানকার আদিবাসী ও স্থানীয় মানুষদের সাথে অকৃত্রিম ভালোবাসার সম্পর্ক স্থাপিত হতে থাকে৷ প্রকৃতির সৌন্দর্যে আত্মভোলা এই মানুষটির এক সময় চাকরির মেয়াদ ফুরিয়ে আসে। তখন কলকাতায় বসে বসেও সেই সুন্দর অরণ্য বারবার ভেসে ওঠে তার স্মৃতিরপর্দায়!
তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো এ অপরূপ সৃষ্টিকে ধ্বংস করে বাসভূমি গড়ে তোলার। আর লাভের অংশ কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া। তবে সত্যচরণ নানা অজুহাতে বননিধনের দিন-ক্ষণ পিছাতে চেয়েছে। সে ক্ষোভ-ভরা অভিমানে বলে উঠেছে-
“আমার জমিদাররা ও ল্যান্ডস্কেপ বুঝিবে না, বুঝিবে সেলামির টাকা, খাজনার টাকা, আদায় ইরশাল, হস্তবুদ।”
আরও পড়ুনঃ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত
উপন্যাসটিতে ফুটে ওঠেছে সত্যচরণের প্রকৃতি ও অরণ্যের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও মমত্ববোধ। তার দায়িত্ব ছিল জমিগুলো প্রজাদের কাছে বিক্রয় করার। যার ফলে এই অপরিসীম সৌন্দর্যের লীলাভূমি তার চোখের সামনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল৷ তার কিছুই করার ছিল না৷ সে যে প্রকৃতিকে কতটা ভালোবাসতো আর কতটা মোহিত হয়েছিল তা স্পষ্টভাবে বোঝা যায় তার আক্ষেপভরা এই উক্তিতেঃ
“কিন্তু আমার এ স্মৃতি আনন্দের নয়, দুঃখের। এই স্বচ্ছন্দ প্রকৃতির লীলাভূমি আমার হাতেই বিনষ্ট হইয়াছিল, বনের দেবতারা সেজন্য আমায় কখনো ক্ষমা করিবেন না জানি। নিজের অপরাধের কথা নিজের মুখে বলিলে অপরাধের ভার শুনিয়াছি লঘু হইয়া যায়।
তাই এই কাহিনীর অবতারণা।”
আরও পড়ুনঃ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাম্পত্য জীবন
সর্বোপরি, আরণ্যক উপন্যাসে ‘সুখ’ নামক দুস্প্রাপ্য বস্তুটির এক অনুপম চিত্রাঙ্কন করেছেন লেখক। প্রাচুর্যের অসুস্থ প্রতিযোগিতায় মেতে সুখকে বৈষয়িক বস্তু বানিয়ে ফেলেছি আমরা। গ্রামের হত-দরিদ্র মানুষেরা যেখানে সুখী, সেখানে অর্থপায়ীরা টাকার পাহাড়ে বসেও হতাশায় ভুগছে প্রতিনিয়ত। লেখক তাদের দিকেই প্রশ্ন ছুড়লেন-
“মানুষে কী চায়- উন্নতি, না আনন্দ? উন্নতি করিয়া কী হইবে যদি তাহাতে আনন্দ না থাকে? আমি এমন কত লোকের কথা জানি, যাহারা জীবনে উন্নতি করিয়াছে বটে, কিন্তু আনন্দকে হারাইয়াছে। অতিরিক্ত ভোগে মনোবৃত্তির ধার ক্ষইয়া ক্ষইয়া ভোঁতা- এখন আর কিছুতেই তেমন আনন্দ পায় না, জীবন তাহাদের নিকট একঘেয়ে, একরঙা, অর্থহীন। মন শান-বাঁধানো — রস ঢুকিতে পায় না।”
“আরণ্যক” সম্পূর্ন ভিন্ন স্বাদের একটি উপন্যাস। প্রতিটি সৌন্দর্য লেখক এমনভাবে বর্ণনা করে গেছেন যে তা চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। আমার পাঠক মনকে এমনভাবে আন্দোলিত করেছিল যে এ সম্পর্কে দ্বিতীয় কোনো শব্দ উচ্চারণের প্রয়োজন হবে না!
লিখেছেনঃ Khadiza Akter Shelpi
বইঃ আরণ্যক [ Download PDF ]
লেখকঃ বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যান্য রচনা সমূহ PDF + রিভিউ