বিভূতিভূষণ-বন্দ্যোপাধ্যায়-bivuti bhushan-bandopadhyay

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাম্পত্য জীবন

Redirect Ads

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর বিয়ে হলো ২৪ বছর বয়সে। পাত্রী বসিরহাটের মোক্তার কালীভূষণ মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে গৌরী দেবী। স্ত্রীর প্রেমে মুগ্ধ হয়ে একাকার বিভূতিভূষণ। তিনি তখন এক স্কুলের শিক্ষক। দুজনের মধ্যেও দারুণ মিল। কিন্তু ভাগ্যের লিখন, বিয়ের এক বছর পরেই মারা গেলেন গৌরী দেবী। । স্ত্রীর শোকে বহুদিন প্রায় সন্ন্যাসীর মতো জীবনযাপন করেছিলেন বিভূতিভূষণ। ঠিক অপুর সংসারের অপুর মতো।

তারপর আর বিয়ে করলেন না বিভূতিভূষণ। নারী বর্জিত জীবন তাঁর। এক দিন হঠাৎ হইচই পড়ে যায় বিভূতিভূষণদের বনগ্রামে। খবর ছড়িয়ে পড়লো, ইছামতী নদীতে স্নান করতে গিয়ে পানিতে ডুবে গেছেন বিভূতিভূষণের বোন জাহ্নবী দেবী।

Download

আরও পড়ুনঃ পথের পাঁচালী উপন্যাস PDF রিভিউ – বিভূতিভূষণ

সেই খবরের সূত্রেই ঠিকানা এসে পৌঁছালো ফরিদপুর জেলার ষোড়শীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে রমাদেবীর কাছে। বাবার দেয়া আকাশি-নীল রঙের সোনালি শাড়ি পরে প্রিয় লেখক বিভূতিভূষণের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন রমাদেবী। বিভূতিভূষণের তখন ভীষণ বিষণ্ণ মন। অটোগ্রাফ দিতে গিয়ে লিখে দিলেন:

‘‘গতিই জীবন, গতির দৈন্যই মৃত্যু।’’

এদিকে রমাদেবীর মনে তখন ভয়ংকর ঝড়, পুরোদস্তুর বিভূতিভূষণের প্রেমে তিনি মাতোয়ারা। বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না।

শেষে বাধ্য হয়েই একদিন রমাদেবী সরাসরি বিয়ের প্রস্তাবই দিয়ে দিলেন বিভূতিভূষণকে। সময় চাইলেন বিভূতিভূষণ। মনে করিয়ে দিলেন গৌরীদেবীর কথা। বললেন,

Download

‘‘আমার সাথে তোমার বয়সের অসম্ভব তফাত। তুমি না হয় ছেলেমানুষ, বুঝতে পারছ না, কিন্তু আমি একজন বয়স্ক লোক হয়ে কি করে তোমাকে ডোবাই?’’

রমা বয়সে তখন বিভূতিভূষণের চেয়ে ৩০ বছরের ছোট। ঘটনাটি না শুনলে বোঝা যাবে না, বিয়ের আগে থেকেই রমা কতটা আগ্রহী ছিলেন তাঁর প্রতি।

আরও পড়ুনঃ জনপ্রিয় ও সেরা কিছু বই PDF রিভিউ | যে বই গুলো সবার পড়া দরকার

প্রস্তাব শুনে বিভূতিভূষণ গায়ের জামা খুলে বুকের কাঁচাপাকা লোম দেখিয়ে বললেন,

“দ্যাখো, আমার অনেক বয়স হয়েছে, আর ক’দিনই বা বাঁচব?”

জবাবে সদ্য যুবতী সুন্দরী নারী রমা অবলীলায় বলেছিলেন,

Download

“আপনি যদি আর মাত্র একটা বছরও বাঁচেন, তাহলেও আমি আপনাকেই বিয়ে করব।”

১৯৪০, ৩ ডিসেম্বরে বিয়ে হলো তাঁদের। বিয়ের সাত বছর পরে জন্ম হলো তাঁদের ছেলে তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের।‌

১৯৫০, ১ নভেম্বর বিভূতিভূষণ মৃত্যুবরণ করলেন। মাত্র ১০ বছরের বিবাহিত জীবন তাঁদের। মাত্র ২৭ বছরের ভরা যৌবনে শিশুপুত্র নিয়ে বিধবা হলেন রমা।

কিন্তু নিজের জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অসমবয়সী প্রেমিক-স্বামীর ভালবাসায় বুঁদ হয়ে কাটিয়ে গেলেন রমাদেবী। অথচ তাঁর নিজেরও ছিল সাহিত্য-প্রতিভা। ছোট থেকেই লিখতেন। হাতে লেখা পত্রিকা বের ঝ করতেন।

আরও পড়ুনঃ আম আঁটির ভেঁপু PDF রিভিউ সম্পূর্ণ গল্প

Download

‘দেশ’ সাহিত্য পত্রিকার কোনও এক সংখ্যায় একই সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছিল রমা চট্টোপাধ্যায়ের ছোটগল্প ‘স্বপ্ন’ এবং বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘স্বপ্ন বাসুদেব’।
সারাটা জীবন স্বামীকে ‘আপনি’, অথচ আদর করে নিজের দেওয়া ‘মঙ্কু’ নাম ধরে ডাকতেন। আর বিভূতিভূষণ ডাকতেন? ‘কল্যাণী, তুই’।

সব জায়গায় স্বামীর সাথে ছায়া মতো লেগে থাকতেন তিনি। তাঁরা দুজনে বিয়ের পর প্রচুর বেড়াতেন দেশ জুড়ে, এবং জঙ্গলে। স্বামীকে আরাধ্য দেবতা মানতেন স্ত্রী রমা দেবী। ছাপা হয়ে বেরোনোর আগে ধরে ধরে পড়তেন সাহিত্যিক স্বামীর সমস্ত লেখা। প্রয়োজনে পরামর্শ দিতেন, আলোচনা করতেন। এমনকী সেই মতো তাঁর লেখায় অদল-বদলও করতেন অত বড় সাহিত্যিক।কখনও নিজের সাহিত্য প্রতিভাকে ‘ক্যারিয়ার’ করেননি। আর তার জন্য আফসোস ও তিলমাত্র ও ছিলোনা তাঁর।

আরও পড়ুনঃ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত

তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যের হাতেখড়ি তো মা রমাদেবীর হাতে ধরেই। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় যখন মারা যান তখন তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বয়স ছিলো মাত্র ৩ বছর।

আজকের দিনে (২৪ ডিসেম্বর) জন্মেছিলেন বিভূতিভূষণের প্রিয় কল্যাণী; রমা চট্টোপাধ্যায়। বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই কিংবদন্তি অনুপ্রেরণাদায়ীর প্রতি।

লিখেছেনঃ Ahmad Istiak

Download

ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যান্য রচনা সমূহ PDF + রিভিউ

Facebook Comments

Similar Posts