আফিমে বুদ হয়ে থাকা এক ব্যক্তি, কিছুটা রগচটাও বটে। নাম তাঁর কমলাকান্ত। লোকে যাকে পাগল বলিয়া চিনিত। কখন কি বলিতো, কি করিতো তার ঠিক ছিলো না। লেখাপড়া কিছু জানিতো বটে কিন্তু সে লেখাপড়ায় অর্থোপার্জন হইল না। অন্যদিকে কোন মতে সার্টিফিকেট বাহির করিয়া বিদ্যান বনে যাওয়া মানুষেরা সমাজের পতি হইয়া উঠেতেছে। কিন্তু কমলাকান্তের মতো হাজার পুস্তক পাঠ করা মানুষ সমাজের চোখে গন্ডমুর্খ রয়ে গেল। কমলাকান্ত সেই সমাজকে প্রশ্ন করেছেন। তাঁর সেই হাজার প্রশ্ন আর ভাবনার সংকলন কমলাকান্তের দপ্তর।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রসাত্মক ও ব্যঙ্গধর্মী রচনার সংকলন ‘কমলাকান্তের দপ্তর’। ব্রিটিশ সরকারের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টার পদে চাকরির দরুন সরাসরি কিছু বলতে পারেননি তিনি। কিন্তু ব্রিটিশদের শাসন শোষণের বিরুদ্ধে মনের অব্যক্ত কথা তিনি প্রকাশ করেছেন তাঁর রচনায়। তাঁর নথি পাঠে ঘুমের উদ্বেগ ঘটে বটে। তাইতো অনিদ্রায় থাকা মানুষদের ঘুমের সুবিধের কথা ভেবে বঙ্কিম বাবু নিজের নথি গুলো প্রকাশ করেন। তন্মধ্যে কমলাকান্তের দপ্তর অন্যতম।
বঙ্কিমচন্দ্রের কমলাকান্ত রচনাসমগ্র তিন খন্ডে রচিত। প্রথম খন্ড “কমলাকান্তের দপ্তর”। এখানে ১৪ টি ভিন্ন শিরোনামে ১ টি একটি সংকলন প্রকাশিত হয়। এখন পাঠকের সুবিধার্থে শিরোনাম গুলোকে এক কথায় ব্যাখ্যা করার অপপ্রয়াস করব মাত্র।
আরও পড়ুনঃ কপালকুন্ডলা PDF বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
“একা কে গায় ওই”
অর্জন এবং খ্যাতি উভই সংসারের নিয়ম। তুমি যত অর্জন করিবে, তত চাহিদা বাড়িবে। এই অর্জনের সাথে নিজের বয়স সমানুপাতিক হারে বাড়িতে থাকিবে। তখন বুড়ো বয়সে সুন্দরকে আর দেখিতে পাওয়া যাবে না। অথ্যাৎ মানুষ্যজাতির উপর প্রীতি থাকিলে, অন্য সুখ লাগে না।
“মনুষ্যফল”
মানুষ্যসকল সংসার বৃক্ষে এক ফল বিশেষ। পাকিয়া পড়ার অপেক্ষায় সবাই। কতক অকালে পাকিয়া পড়ে, কতক শুকাইয়া ঝড়িয়া পড়ে। যেটি সুপক্ক সেটি গঙ্গা জলে ধৌত হয়ে দেব সেবায় লাগে। অথ্যাৎ জন্ম সার্থক।
“উদর দর্শন”
ইউরোপ অক্ষয় কীর্ত্তি স্থাপন করিয়াছে। বঙ্গ দেশের মানুষ চাষ করিয়া চাষা হইয়াছে। তোমরা কি খাও পাষণ্ড? চাষেতে কি পাপ আছে?
আরও পড়ুনঃ বিষবৃক্ষ PDF বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
“পতঙ্গ”
পিতলের প্রদীপের উপর আগুন জ্বলিলে পতঙ্গ তাহার চারিদিকে ঘুরপাক খাইতো। কিন্তু এখন কি সব যন্ত্র আসিয়াছে যে তাহার উপর পড়িলে আর রক্ষা নেই। বঙ্গ দেশের মানুষের বর্তমান অবস্থাও সেইরূপ।
“আমার মন”
আমার মন কোথাই গেল? কে লইল?কে চুরি করিলো? সাত সমুদ্র খুঁজিয়াও মন চোরকে পাইলাম না। বন্ধুু আমার মনের ঠিকানা সন্ধান করিতেছে।
“চন্দ্রোলোকে”
সুজলা সুফলা, নদীবিধৌত আমাদের এই দেশ। এই তো আমাদের চন্দ্রদেশ।ইহাকে খোঁজ করিতে কত না বিচরণ।
আরও পড়ুনঃ দেশে বিদেশে ভ্রমণ কাহিনী মুজতবা আলী PDF রিভিউ
“বসন্তের কোকিল”
যখন দক্ষিণা বাতাস বহে, বসন্তের ফুল ফুটে তখন তুমি এসে রসিকতা করো। যখন শীতের রুক্ষতা, কম্পনে থরথর করে। জীবলোকে তখন তোমার হদিস মিলে না। তুমি যে বসন্তের কোকিল গো।
“স্ত্রী লোকের রূপ”
যখন সাজিয়া গুজিয়া রুপের ঝটা ছড়ায়া চলিবা তখন মাটিতে পা পড়িবে না। রুপের বান ডাকিয়া পুরুষ কুলের মহিত করিতে জুড়ি রাখিবা না। কিন্তু ললনা তোমার মিছা রুপের বড়াইয়ের কাজ কি?
“ফুলের বিবাহ”
ফুলের বিবহ হইবে। নতুন ফুল আসিবে। সেই তুমি বিবাহ অনুষ্ঠানে মালা হইয়া শোভিত হইবে। ওঃ পোড়া কপাল গো ফুলের।
আরও পড়ুনঃ কৃষ্ণকান্তের উইল PDF – বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
“বড় বাজার”
মাছ বাজার, রুপের বাজার, হরেক রকম বাজার ঘুরে বিদ্যের বাজারে এসে উপস্থিত হইলাম। এখানে দেখি কর্তাগো দাম দিয়ে কিনতে হয় না।
“আমার দুর্গোৎসব”
মা একা একা রোধন করিতেছেন। আমি ডাকিতেছি বঙ্গজননী। মা উঠিলেন না। উঠিবেন না কি?
“একটি গীত”
কিসে সুখ আছে? নষ্ট সৃতি জাগরিত হইলে সুখের ভাবাবেগ হয়। অতঃপর দেশলক্ষী ডুবিলেন, সুখ নিয়া ডুব দিলেন।
আরও পড়ুনঃ ইউরোপ প্রবাসীর পত্র PDF রিভিউ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
“বিড়াল”
বিড়ালের কন্ঠে পৃথিবীর সকল বঞ্চিত, নিষ্পষিত, দলিতের ক্ষোভ -প্রতিবাদ- মর্মবেদনা যুক্তিগ্রাহ্য সাম্যতাত্ত্বিক সৌকর্যে উচ্চারিত হতে থাকে। বিড়াল একটি পতিত আত্মা। যার দ্বারা মানুষের আত্মাকে স্বর্গ গামী করার অপচেষ্টা কমলাকান্তের অাজীবন চলতে থাকে।
“টেঁকি”
যদি পৃথিবীতে টেঁকি না থাকিত তবে খাইতাম কি? পাখির মতো উড়িয়া ঘুরিয়া বেড়াইতাম। টেঁকির বিনিময়ে খাদ্য, ইহার এই মহাত্ব আমাকে বড়ই নাড়া দেই।
কমলাকান্ত খুব লেখালিখি করিতে ভালবাসিত। একটু কাগজ পেলেই লিখত। বিলের কাগজে ছবি আঁকত। সরকারি নথিতে কবিতা লিখতো। লিখিবার জন্য ছদ্ম নাম হিসেবে তিনি কমলাকান্ত নামটা পছন্দ করিলেন। এই পাগল কমলাকান্তকে ভালোবাসতেন এক প্রকাশক। কমলাকান্তের মৃত্যুর পর কমলাকান্ত নামে নথিগুলো গ্রন্থ আকারে প্রকাশ করতে থাকেন সেই প্রকাশক। এখন ঐ সব গ্রন্থ পাঠকের মনের খোরাক মোটায়।
লিখেছেনঃ সাগর মল্লিক
বইঃ কমলাকান্তের দপ্তর [ Download PDF ]
লেখকঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
বঙ্কিম রচনাবলী প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড PDF Free Download করুন এখান থেকে