বইঃ অর্ধেক জীবন
লেখকঃ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
তৎকালীন ফরিদপুর মহাকুমা থেকে শুরু করে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে এসে শেষ হয়েছে “অর্ধেক জীবন” বইয়ের জীবনকাল। যেন মালার পুঁতির মত যুক্ত করেছেন তার স্মৃতিগুলো। তার মৃত্যুর ১০ বছর আগে বইটি প্রকাশের সময় তিনি স্বীকার করেছেন বইয়ের নামটি তার জীবনের সময় সীমার কোন নির্দেশক নয়। তবুও আকস্মিকভাবেই যেন বইটির সময়কাল তার জীবনের প্রায় অর্ধেক সময় সীমাকে ছুঁয়ে গেছে।
৭৮ বছরের জীবনকালে সাক্ষী হয়েছেন দুর্ভিক্ষ, দেশভাগ এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের। সামাজিক জীবনে এগুলোর আবির্ভাবের চমৎকার কিছু বর্ণনাও এঁকেছেন। যেমন দুর্ভিক্ষের সময় তিনি পড়তেন স্কুলে। চালের দাম ছিল খুব বেশি ফলে, খেতে হতো আলু। স্কুলের টিফিনে পকেট ভরে নিয়ে যেতেন সিদ্ধ আলু। এমনকি দুপুরের টিফিনে তাদের শিক্ষকদের ওই ছিল। মাঝে মাঝে ছাত্রদের ক্লাসে শুরু হতো আলু যুদ্ধ। গুলির মতো এদিক ওদিক থেকে গায়ে পড়তো।
কলকাতার প্রত্যক্ষ সংগ্রামে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার একটি ঘটনার তিনি বর্ণনা করেছেন। তার বসবাসরত হিন্দু বহুল এলাকায় এক মুসলিম বৃদ্ধ ডিম বিক্রেতা এসেছিল বাজারে। ভালো দাম পাওয়ার আশায় কিন্তু সেই বৃদ্ধ, অসহায় ডিম বিক্রেতা ও রক্তাক্ত হয়েছিল। এতে ধর্মের উপর বেজায় বিরক্ত হয়ে পড়েন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। ক্ষুব্ধ হয়ে সমালোচনা করেছেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর এবং গান্ধীর; দঙ্গায় তাদের ভূমিকার।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে রাষ্ট্রনায়কদের ভূমিকার কথাও আছে এখানে। পরমাণু বিজ্ঞানী ওপেন হাইমারের সফল অস্ত্র পরীক্ষার পর শঙ্কিত মনকে নিয়ে শান্তি খুঁজেছেন গীতার শ্লোকে যদিও তা ছিল শুধুমাত্র কাব্যের স্তুতি।
আরও পড়ুনঃ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাব্য চর্চা স্কুল জীবন থেকেই শুরু হয়। এরপর সিগনেট প্রেস-এর অনুকূলে শুরু হয় কৃত্তিবাসের সম্পাদনার কাজ। পরবর্তীতে কৃত্তিবাস এর সাথে যুক্ত হয় শক্তি চট্টোপাধ্যায়। তাদের বন্ধুত্ব চলে বহুকাল। কলকাতার বিখ্যাত কফি হাউসে তাদের আড্ডা চলত মধ্যরাত পর্যন্ত । এ আড্ডা মাঝে মাঝে চলে যেত কোন বার বনিতার ঘরে। কখনো কখনো বসতো একটি ম্যাচে বা একটি কক্ষে লাইট বন্ধ করে চলতে উলঙ্গ কবিদের আসর। তখন নাকি ঠিক নেশার মতো ধরে গিয়েছিল তাদেরকে। কখনো ভ্রমনে নারী বিবর্জিত কোন দল বনে বিনা কাপড়ে হেঁটেছেন মাইলের পর মাইল যেন আফ্রিকা থেকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে মানুষের দল। (পৃষ্ঠা 227) সব কবিদের মাঝেই এরকম একটু বন্যতা আছে কি? কবিরা উত্তর দিয়ে ধন্য করবেন।
“অর্ধেক জীবন” আত্মজীবনীমূলক বই এ সাহিত্যিকের মোট কথায় তিনজন প্রেমিকার কথা উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে একজন ফরাসি প্রেমিকাও ছিল আর শেষের জন ছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায়।
শেষের দিকটা এসে শেষ হলো আর একটা জগতকে কেন্দ্র করে যেন অদৃশ্য একটা পৃথিবী। এতে কারো কোনো শারীরিক উপস্থিতি নেই কিন্তু ইন্দ্রিয় দিয়ে ব্যক্তি বা বস্তুর উপস্থিতি উপলব্ধি করা যায়। যেন মনে হয় কোন তরুণী এখনই নূপুর পায়ে পিছন থেকে হেঁটে গেল কিন্তু চোখ মেলে কাউকে দেখা গেল না। এর নাম পরাবাস্তবতা। কবিদের কি এরকম আরেকটা পৃথিবী আছে? তবে তারা পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মানুষ।
লিখেছেনঃ সঞ্জয় পাল
বইঃ অর্ধেক জীবন [ Download PDF ]
লেখকঃ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর অন্যান্য বইসমূহ