বইয়ের নাম – মানুষ, মানুষ
লেখক – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
সুনীলের আত্মজৈবনিক লেখাগুলো বরাবরই অনেক সুখপাঠ্য। এটিও তেমন একটি বই, সুনীলের নিজের জীবনের ঘটনাই সুনীল বলে গেছেন মানুষ, মানুষ বইটিতে। মূল চরিত্রও তিনি। তবু বইটির কাহিনী বেড়ে উঠেছে আনোয়ারা নামের একজন বাংলাদেশী মেয়েকে ঘিরে।
আনোয়ারা ঢাকার একজন সম্ভ্রান্ত বংশীয় অধ্যাপক শামীমের স্ত্রী। শামীম সাহেব সুনীলের বিশেষ বন্ধু মানুষ। ঢাকায় এলেই সুনীল সস্ত্রীক এনার বাসায় আসেন আড্ডা দিতে। সুনীলের এবং তার স্ত্রী স্বাতী দুজনের কাছেই আনোয়ারা এবং শামীমের সম্পর্কটাকে অনেক সুন্দর মনে হয়। বেশ সুন্দর একটি পরিবার। আনোয়ারা বেশ সুন্দরী মেয়ে।
তারপর হঠাৎ একদিন সুনীলের কোলকাতার বাসায় আগমন হয় আনোয়ারার। সে একাই এসেছে। কাউকে খবর দিয়ে আসেনি, এমনকি তিনি সুনীলের বাসার ঠিকানাও জানতেন না। জানতেন যে সুনীলের বাসা কোলকাতায়। শুধু এই তথ্যকে সম্বল করে তিনি ঢাকা থেকে কলকাতায় এসে সুনীলের বাসা খুজে বের করেছেন।
বলাই বাহুল্য সেই অভিযান সুখকর ছিলো না। কোলকাতা কোনো ছোটো গ্রাম নয় যে একজনের নাম বললেই তার বাসা কোথায় সেটা বের হয়ে আসবে। যাই হোক, সুনীল এবং স্বাতী তো আনোয়ারাকে এভাবে দেখে অবাক। তবুও অবাক হবার পালা তখন কেবল শুরু। আনোয়ারা যে এই দেশে এসেছে তা ঢাকায় তার স্বামী বা পরিবারের অন্যরাও জানে না। আনোয়ারা এখানে থাকবেও না। সে নাকি সৌদি আরব যাবে কাজ করতে। কোলকাতায় এসেছে স্বাতীর কাছে তার বেশ কিছু গয়না আছে সেগুলো রেখে যেতে।
আরও পড়ুনঃ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত
সৌদি আরবে গিয়ে নারীরা নির্যাতিত হয় এমন সংবাদ তখন সবাই জানতো। সুনীল স্বাতী আনোয়ারাকে অনেক মানা করলো সেখানে যেতে। তবুও আনোয়ারা সেখানে যেতে বদ্ধপরিকর। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে তার ইচ্ছার বিপরীতে তো আটকানো যায় না। সে চলে গেলো। সে চলে যাওয়ার পরে সুনীলের মনে হলো কোনো নারী পাচারকারী দলের খপ্পরে পড়েছে আনোয়ারা। একটা অপরাধবোধ কাজ করতে থাকে তার ভিতরে। সেটাকে চাপা দিয়ে সুনীল তার নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেন।
কোলকাতায় তার বিশাল বন্ধুবহর , তাদের সাথে আড্ডা, বিভিন্ন দিবা এবং নৈশ অভিযানের বর্ননা আমরা পাই। এই বর্ননাগুলোর মধ্য দিয়ে আমরা সুনীলের ব্যক্তিজীবন, চিন্তাভাবনা জানতে পারি। তারপর অনেকটা সময় আনোয়ারার খোজ নেই। এরপর একদিন সে হুট করে ফিরে আসে, গর্ভবতী হয়ে। গর্ভবতী সে ধর্ষনের ফলে হয়েছে না স্বেচ্ছায় হয়ছে তা জানা যায় না। তার এই ফিরে আসার ঘটনা বেশ তোলপাড় তৈরী করে বাংলাদেশে। পেপারে পত্রিকায় খবর বের হয়।
একদিন এসে স্বাতীর কাছ থেকে তার গচ্ছিত গয়না নিয়ে যায় গর্ভবতী আনোয়ারা। জড়াবে না জড়াবে না করেও – সুনীলের জীবনের সাথে জড়িয়ে যায় আনোয়ারার জীবনের ঘটনা। তাই মানুষ মানুষ বইটা সুনীলের আত্মজীবনী গ্রন্থ হতে হতে হয়ে যায় আনোয়ারার কাহিনীরও আখ্যান। সুখপাঠ্য এই বই সকল সুনীল ভক্তের জন্য অবশ্যপাঠ্য। আর যারা সুনীল ভক্ত নন , তাদের জন্য আরোও বেশী অবশ্যপাঠ্য সুনীলের জীবন জানবার জন্য এবং তার ভক্ত হবার জন্য। ধন্যবাদ সকলকে।
বিদ্রঃ গোটা লেখাটায় সুনীল সুনীল করার জন্য আমি নিজের কাছেই দুঃখিত। হুমায়ূন স্যারকে যেমন হুমায়ূন স্যার বলে ডাকি – সুনীলকে তেমন সুনীল স্যার বললে ঠিক মানায় না। সুনীল বাবুও বলা যায়। সুনীল সাহেবও বলা যায়। তবুও সেগুলোও কেমন জানি বেমানান লাগতেছিলো, তাই শুধু সুনীলই। আশা করি স্বর্গীয় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় —-রাগ করবেন না আমার উপরে, নিশ্চয়ই তিনি জানেন আমি তার একজন বড় ভক্ত। আমার চিন্তাজগতে তার প্রভাব আমি সজ্ঞানে স্বীকার করতেছি।
লিখেছেনঃ ওয়াহিদ অনঘ
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর অন্যান্য বইসমূহ