প্রথম আলো (অখন্ড)
–সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
আজ যদি তোমার হাতটা আবার ধরতে চাই, তুমি দেবে? ভূমিসূতা নিজের ডান হাতের পাঞ্জার দিকে একটুক্ষণ তাকিয়ে রইল, প্রায় ফিসফিস করে বলল, এই হাত, শুধু একজনেরই জন্য – ডানপাশ ফিরে সে বাড়িয়ে দিল হাতখানি। তারপর ওরা হাত ধরে চুপ করে বসে রইল। আর কোনও কথা নেই, সমস্ত কথার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। ওরা বসেই রইল। ঘাট ক্রমশ নির্জন হয়ে আসছে। বাতাস বইছে বেশ জোরে। বজরাগুলোও ফিরে যাচ্ছে। সবাই ঘরে ফিরছে। এই দুজনের যেন কোনও ঘরবাড়ি নেই, কোথাও ফিরতে হবে না। এরকম একটি অনন্তকালের দৃশ্য হয়ে ওরা বসেই থাকবে।
সুদীর্ঘ এই উপন্যাসটির শুরু হয় ত্রিপুরার রাজপরিবারের কাহিনী দিয়ে। তারপরে তা ক্রমশ জমাট বাঁধে কলকাতায় ঠাকুর পরিবারে এবং তৎকালীন অন্যান্য বিশিষ্ট সব মানুষদের নিয়ে। এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র গুলি সবই প্রায় বাস্তব ঐতিহাসিক চরিত্র। যেমন রবীন্দ্রনাথ, নরেন্দ্রনাথ (বিবেকানন্দ), রামকৃষ্ণ পরমহংস, নটী বিনোদিনী, গিরিশচন্দ্র প্রভৃতি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ই প্রথম রবীন্দ্রনাথকে উপন্যাসের চরিত্র হিসাবে ব্যবহার করেছেন। তবে উপন্যাসের মূল চরিত্র হিসেবে রয়েছে দু’টি কাল্পনিক চরিত্র “ভরত ও ভূমিসুতা”। উপন্যাসটির ঘটনা প্রবাহ আবর্তিত হয়েছে এই দু’টি চরিত্রকে কেন্দ্র করেই। উপন্যাসটি থেকে স্পষ্ট একটি ধারনা পাওয়া যায় রামকৃষ্ণ পরমহংস ও তাঁর শিষ্যদের সম্বন্ধে।
আরও পড়ুনঃ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত
উপন্যাস এগিয়ে চলতে থাকে আপন ধারায়, সাথে সাথে পাঠক যেন চলে যায় সেই সুদূর অতীতে, নিজ চোখে দেখতে পায়, রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের ধর্ম আন্দোলন, মহেন্দ্রলাল সরকারের বিজ্ঞানমনষ্ক চিন্তাধারা, থিয়েটার শিল্পের আবির্ভাব, রঙ্গমঞ্চের চোখ জুড়ানো নাটক, গিরিশচন্দ্র-অর্ধেন্দুশেখর-অমৃতলাল দের প্রবাদপ্রতিম ভূমিকা, কংগ্রেসের অধিবেশন, নেতৃবৃন্দ দের বিরোধ ইত্যাদি। সাথে তো রয়েছেই বঙ্গভঙ্গ এবং তার প্রতিক্রিয়ায় বাঙালীদের যেন ঘুম থেকে জেগে ওঠা, উপন্যাসের প্রবাহ ধারা এই জায়গায় পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে ইতিহাসের সেই নায়ক দের। স্বদেশি চেতনায় যারা প্রাণ উৎসর্গ করার শপথে বলীয়ান, উগ্র জাতিসত্তায় হয়তো অনেকের কাছেই ঘৃণিত কিন্তু ইংরেজ দের কাপিয়ে দেয়া কয়েকজন ধ্রুব তারা।
বিতর্কঃ কিছু কিছু বিতর্ক এই উপন্যাস কে ঘিরে জমজমাট, যেমনঃ লেখক এখানে মেয়েদেরকে মাগী বলে সম্বোধিত করেছেন যার ব্যাখ্যা তিনি নিজেই দেন। অই সময় মেয়েদের কে মাগী বলার প্রচলন ছিল, কোনো খারাপ অর্থে নয়। এছাড়াও মহেন্দ্রলাল সরকার হিন্দুদের দেবী সম্পর্কে যেই উক্তি করেন তাও লেখকের নিজের নয়, মহেন্দ্রলাল সরকারের ই উক্তি।
প্রথম আলো উপন্যাসটি পড়ার সময় মনে হচ্ছিল উপন্যাসের প্রত্যেকটি চরিত্র যেন জীবিত হয়ে চোখের সামনেই ঘুরতে ছিল!!! এত বড় বই পড়ার অভিজ্ঞতা এই প্রথম, মাঝে মাঝে পড়ার আগ্রহ হারিয়ে যাচ্ছিল কিন্তু তা ক্ষনিকের জন্য।
(একটা ব্যাপারে অনেকের প্যাঁচ লাগে, সেটা পরিষ্কার করে দেই। ট্রিলোজিটা শুরু হয় সেই সময় দিয়ে, এরপর প্রথম আলো আর সবার শেষে পূর্ব-পশ্চিম। সিরিয়াল মেইনটেইন করে পড়াটা ভালো। তাহলে সময় অনুযায়ী ঘটনাগুলো বুঝতে খুব সুবিধা হয়। )
লিখেছেনঃ Nayemuzzaman Roni
বইঃ প্রথম আলো [ Download Part 1 ] [ Download Part 2 ]
লেখকঃ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর টাইম ট্রিলজি বা ত্রয়ী