গ্যাব্রোভোবাসীর রস-রসিকতা | মুহম্মদ এনামুল হক PDF
গ্যাব্রোভোবাসীর রস-রসিকতা
মুহম্মদ এনামুল হক
আমি বুলগেরিয়ায় ঘুরে বেড়িয়েছিলাম বাংলাদেশের একজন সংস্কৃতিপ্রেমী হিসেবে। এখানকার প্রসিদ্ধ প্রসিদ্ধ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখেছি। আলাপ আলোচনা করেছি। তা করতে গিয়ে এখানকার এমন এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সন্ধানলাভ করেছি যা একটা বিরাট অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে আছে। এই অঞ্চলের নাম গ্যাব্রোভো। গ্যাব্রোভোবাসীর হাস্যপরিহাস দিয়ে শহরটি। না, শুধু শহর নয়। সমগ্র অঞ্চলটি সর্বত্র প্রসিদ্ধ ও চির পরিচিত। এ দিয়ে শহরটি এখন বিশ্ববিখ্যাত বলে বুলগেরিয়ানরা দাবী করে থাকেন।
হাস্যপরিহাস ভবন নামে কোন বিশেষ অনুষ্ঠান বিশ্বের কোথাও নিয়মিতভাবে পালন করা হয় কি না আমার জানা নেই। অথচ এমন একটা অনুষ্ঠান প্রতি দু-বছর অন্তর একনাগারে দশ জনের জন্য এদেশের গ্যাব্রোভো শহরে নিয়মিতভাবে পালিত হয়ে আসছে। এ এক অদ্ভুত ব্যাপার। আশ্চর্য অনুষ্ঠান। এতে স্থানীয় ও বহিরাগত নরনারীর চালচলন, সাজগোজ, পোশাকআশাক, বুলচাল প্রভৃতি সবকিছু মিলিয়ে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয় যা দেখলে না হেসে পারা যায়না। দেশ দেশান্তর থেকে বহু কৌতুকআমোদী অনেক কার্টুন আকিয়ে এই অনুষ্ঠানে যোগদান করে নিজ নিজ শিল্পচর্চায় অংশ নেন। এ বিশিষ্ট অনুষ্ঠান থেকে গ্যাব্রোভোর মজাদার আখ্যায়িকার খ্যাতি এখন দেশ দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়েছে।
গ্যাব্রোভো শহরে প্রবেশ করতেই এর প্রধান ফটকে সর্বাগ্রে যা চোখে পরে তা হচ্ছে একটা লেজকাটা বেড়ালের চিত্র। তারপর রাস্তার বিপনি-বিতানে, দোকানে দোকানে, প্রতিষ্ঠানে দেখা যায় ঝুলছে সেই লেজকাটা বেড়ালের ছবি। এ ছবিকে গ্যাব্রোভো শহরের একটি প্রধান বৈশিষ্ট বলে উল্লেখ করা যায়। এ কারণেই অনেকে নগরটিকে লেজকাটা বিড়ালের ছবি বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এই অদ্ভুত নামটি কৌতুকাবহ নয় কি? লেজকাটা বিড়ালের গল্পটি এরকম…
গ্যাব্রোভো শহরে শীতের দিনে বাজার থেকে কয়লা কিনে ফায়ারপ্লেসে জ্বালিয়ে ঘর গরম রাখতে হয়। এতে খরচের অংকও কম হয়না। একদিন এক গ্যাব্রোভোবাসী ভাবলো তার এ খরচ কমাতে হবে। কি করে তা করা যায়, তাই উদ্ভাবন করলো সে। তার একটা আদুরে বিড়াল ছিলো। এর লেজটি ছিলো বেশ মোটা ও অনেক লম্বা। বিড়ালটিকে সত্যি খুব সুন্দর দেখাতো। আর বাড়িতে সবাই আদরযত্ন করতো। শীত আসার আগেই লোকটি একদিন তাঁর আদুরে বেড়ালের লেজ হঠাৎ কেটে দিলো। সবাই চেঁচিয়ে উঠলো। সর্বনাশ, এ কি করলে? লোকটি বললো, উদ্বিগ্ন হবার কারণ নেই। বিড়ালটিকে আমরা আদর করবো ঠিকই, তবে আসছে শীতে দরজা খুলে তাকে বাইরে নিতে আর ঘরে আনতে যে তাপটুকু নষ্ট হতো তার অর্ধেকটা এখন থেকে বেঁচে যাবে। এরপর থেকেই লেজকাটা বিড়াল গ্যাব্রোভোতে মিতব্যায়ীতা তথা কার্পণ্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এখানেই গ্যাব্রোভোবাসীদের কৃপণতা ধর্মে মিতব্যায়িতার কাহিনী খতম নয়। বরং শুধুমাত্র তাঁদের মিতব্যায়িতার ব্যাপারটি কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছিল তাও আঁচ করা যায় আরেকটি খোশগল্পে। গল্পটি এরকম…
আরও পড়ুনঃ রাজা গল্প | এস ওয়াজেদ আলী | বাংলা পাঠ্যবই ছোটগল্প
অনেকদিন আগের কথা। এক ভদ্রলোক দূরদেশ থেকে গ্যাব্রোভোতে বেড়াতে এসে দেখলেন এখানকার লোকজন মরা মানুষকে শুইয়ে কবর দেয়না, খাড়া দাঁড় করিয়ে মাটিতে পুতে ফেলে। ভদ্রলোকটির কাছে ব্যাপারখানা কেমন কেমন ঠেকলো। তিনি একজনকে সামনে পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন। এ কি কান্ড মশাই? এমনটি তো কোথাও দেখিনা। আপনারা মরা মানুষকে শুইয়ে কবর না দিয়ে খাড়া মাটিতে পুঁতে ফেলেন কেন? লোকটি হাসিমুখে উত্তর দিলেন, “আমরা মিতব্যায়ী কি না তাই শুইয়ে কবর না দিয়ে জমির অপচয় করিনে। এটি গ্যাব্রোভোবাসীদের চরিত্র বৈশিষ্ট”। তাঁদের চরিত্রের ও বৈশিষ্টের যে কতরকম অভিব্যাক্তি ঘটেছে তার ইয়াত্তা নেই। কয়েকটি প্রচলিত বৈশিষ্ট এরকম…
- তাঁরা যখন মাছ খায়, মাছের কাঁটাগুলো জমা করে রাখে। যাতে ভবিষ্যতে ওগুলোকে দাঁতের খিলাল হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
- ঘড়ির চাকা তারাতারি যেন না ক্ষয়ে যায় এইজন্য রাতের বেলায় তাঁরা ঘড়ি বন্ধ করে রাখে।
- বেচাকেনা থেকে তাঁরা গ্যাব্রোভো থেকে সোফিয়া শহরে এলে উষ্ণ প্রস্রবণের পানি খেয়ে সকাল বেলার চা খরচটা বাঁচিয়ে দেয়।
- তাঁরা দেশলাইয়ের একটি কাঠিকে চিড়ে দু ভাগ করে নিয়ে সিগেরেট জ্বালায়। যেন এক কাঠিতে দু-বার আগুন জ্বালানো যায়।
- তাঁরা বাজার থেকে জিনিস কেনার সময় তাঁরা সেইদিনকার খবরের কাগজে মুড়িয়ে পেতে চায়। যেন খবর পড়ার জন্য ওইদিনের খবরের কাগজটি আর কিনতে না হয়।
লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো গ্যাব্রোভোবাসীরা অপরকে হাসায় এবং নিজেরাও হাসে। তাঁরা নিজেদের সম্মানের ক্ষতি করে অন্যের হাস্য-পরিহাসের বস্তুতে পরিণত হতে ভালোবাসে। তাঁদের চরিত্রের এই বিশেষত্ব তাদেরকে সত্যি মজার মানুষ করে তুলেছে।
হাট্টিমাটিম টিম ছড়াটির লেখক কে? সম্পূর্ণ কবিতার আসল রচয়িতা কে?