Skip to content
Home » মন্তু-টুনি, ফটিক, হৈমন্তী, বিলাসী বিহীন একটি হাহাকার প্রজন্ম ও আমাদের পাঠ্যবই

মন্তু-টুনি, ফটিক, হৈমন্তী, বিলাসী বিহীন একটি হাহাকার প্রজন্ম ও আমাদের পাঠ্যবই

    hajar bochor dhore pdf হাজার বছর ধরে বই
    Redirect Ads

    মন্তু, টুনির খুঁনসুটির কথা মনে আছে অথবা বউপিটানো আবুইল্লা?
    জ্বী হ্যা! আপনি যদি নাইন টেনে সহপাঠ হিসেবে “হাজার বছর ধরে” উপন্যাস পড়ে থাকেন এগল্প আপনার সারাজীবনেও ভোলার কথা না। মকবুল, আম্বিয়া এমনকি ফকিরের মায়ের ছোট্ট একটা চরিত্রও আপনার মনে দাগ কেটে রেখে যাবে কেননা প্রতিটা চরিত্র সহজ অথচ সাবলীল। ক্লাসের শেষ বেঞ্চের ছেলে যে সারাবছর ইংরেজি, গণিত বইও ছুঁয়ে দেখত না, সেও সহপাঠ ক্লাসে নিশ্চুপ থাকত। মন্তু, টুনির গল্প শুনবে তাই।

    স্কুল জীবনে শুধু এই উপন্যাসটাই কতবার যে পড়েছি, তার হিসেব নেই। কতটা ভালোলাগা কাজ করলে একজন মানুষ নিজে থেকেই সেই লেখাটা বারবার পড়ে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।

    Download

    আজ হাজার বছর ধরে উপন্যাসের জায়গা দখল করে নিল কাকতাড়ুয়া। বুধা নামক এক অনাথ শিশু যে মা-বাবা চার ভাইবোন হারিয়ে একপ্রকার নির্বাক দর্শক হয়ে গেছে। ভয় কাকে বলে সে জানে না। সময়ের স্রোতে এক অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধায় রুপ নেয়। ভাষাশৈলী, কাহিনী বিশ্লেষণ করলে অবশ্যই কাকতাড়ুয়া উপন্যাস হিসেবে সফল এবং তথ্যবহুল।

    কিন্তু কথা হচ্ছে, যাদের জন্য পাঠ্যবই হিসেবে কাকতাড়ুয়া নির্ধারিত, তারা একে কতটুকু গ্রহন করেছে? আসেন ভাই, আপনাকে দিয়েই শুরু করি,
    -আপনি বই পড়েন?
    -জ্বী। টুকটাক পড়া হয়।
    -কয়েকটা বইয়ের নাম বলুন তো।
    আপনাকে উত্তর হিসেবে শুনতে হবে হুমায়ূন আহমেদ, মাসুদ রানা সিরিজ বা কয়েকটা অতি জনপ্রিয় বইয়ের কথা। পাঠক হিসেবে যারা একটু বেশি বই পড়েন তারা সমরেশ, সুনীল, শরৎ বাবুর নাম আওড়াবেন।

    আরও পড়ুনঃ জনপ্রিয় ও সেরা কিছু বই PDF রিভিউ

    এইযে পাঠকগোষ্ঠী তাদের শতকরা কুঁড়িভাগও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক বই পড়তে ভালোবাসে কি না সন্দেহ। একাত্তরের দিনগুলি, জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প অথবা আরেক ফাল্গুনে সীমাবদ্ধ। আমি নিজেও ছোটবেলায় মার্চ মাস, ডিসেম্বর মাস আসলে বিরক্তবোধ করতাম। বিটিভিতে কি সুন্দর রিয়াজ, শাবনুর, সালমান শাহর ছবি দেখায় আর মার্চ মাস আসলেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সব অনুষ্ঠান।

    Download

    বর্তমান পাঠ্যবইগুলোতে মুক্তিযুদ্ধ আর ধর্মীয় ইস্যুর গল্প বাদে আর কিছু নেই। সেই গল্প বেশিরভাগ ধর্মে ধর্মে লড়াই লাগানোর মত এবং মুক্তিযুদ্ধ দিয়ে মানুষকে একত্রিত না করে ভাগ করে ফেলার মত। যে জিনিস আপনার মনকে স্পর্শ করতে পারে নি, সে জিনিস মনে রাখতে আপনার বয়েই গেছে। তথ্যনির্ভর প্রবন্ধ বাচ্চাদের হৃদয়কে কখনই স্পর্শ করতে পারে না। এসব গল্প অতিমাত্রায় যোগ করার কারণে পাঠ্যবই থেকে হারিয়ে যাচ্ছে রবীন্দ্রনাথের ছুটি গল্প, শরৎচন্দ্রের মহেশ, বিলাসী, হৈমন্তী, আবু ইসহাকের মহাপতঙ্গ আর একুশের গল্পের তপু। মনে করে দেখুন, ছুটি গল্পের ফটিক, হৈমন্তী, বিলাসী, মহাপতঙ্গের সেই চড়ুই পাখি, কবর কবিতার দাদু, সোনার তরীর জীবনদর্শন এমনকি মহেশ গল্পের অবলা প্রাণীর স্মৃতি আপনার স্মৃতিপটে এখনো জ্বলজ্বল করে।

    আরও পড়ুনঃ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত

    আমরা কিশোর বয়সে নবম শ্রেণীতে রবী ঠাকুরের “ছুটি” গল্প পড়ে যখন কান্না ভেঙ্গে পড়েছিলাম, তখনই নজরুলের “দূরন্ত পথিক” পড়ে সামনে এগিয়ে চলার প্রেরণা খুজে পেয়েছি। কবর কবিতাটি পড়ে কত কেঁদেছি, সোনার তরীর গভীর দার্শনিকতা গবেষণা করেছি। আর আজ এসব কি দেখছি? কি অপেক্ষা করে আছে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য? নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয় এই ভেবে যে আমরা বিলাসী, সোনার তরী পেয়েছিলাম।

    এখনকার পাঠ্যবই দেখলে ছাত্রদের জন্য খারাপ লাগে। শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দোহাই দিয়ে হাজার বছর ধরের মতো অনবদ্য উপন্যাসকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে আর অসাম্প্রদায়িক চেতনার পিছনে ছুটতে গিয়ে বাদ দিয়েছে কবর নাটককে।

    Download

    সত্যিকার সাহিত্যের স্পেস কমে যাচ্ছে। সেইসব জায়গায় জোর করে আনতে হচ্ছে ফরিদুর রেজা সাগরের মত সাহিত্যিককে। হাজার বছর ধরে উপন্যাস এই প্রজন্মের আর কোনদিনই পড়া হবেনা। পড়বেনা পদ্মা নদীর মাঝি কিংবা সোনার তরী কবিতা। ফলে সাহিত্য ক্ষুধাও আর কোনদিন জাগবেনা।

    সাহিত্য পড়াতে গিয়ে এক সময় ক্লান্ত হয়ে পড়ি। নিজের সময়ের কথা মনে পড়ে। কত গল্প, কবিতা পড়ে কেঁদে ফেলেছিলাম স্কুল জীবনে। মনে হয়েছিল আমিও একদিন লিখব এমন করে। সেই গল্প কবিতাগুলো কোথায় গেল! আজকের এসব গল্প, কবিতা নিস্প্রাণ। এগুলো কেউ ধারণ করবেনা, পরীক্ষায় পাশ করার জন্য শুধু পড়বে। এগুলোতে তথ্য আছে, আর দাম্ভিকতা আছে। জীবনবোধ নেই।

    আরও পড়ুনঃ পথের পাঁচালী উপন্যাস PDF রিভিউ – বিভূতিভূষণ

    কাকতাড়ুয়া বাচ্চারা পড়বে। বাংলায় এপ্লাস পেতে হলে বহুনির্বাচনী প্রশ্নে ৩০ ছুঁই ছুঁই মার্ক পেতে হয়। অতএব জিপিএ-৫ প্রত্যাশীরা শুধু পড়বে না, গলাধঃকরণ করবে। পরীক্ষা শেষে বুধাকে ভুলে যাবে। কিন্তু অনেক, অনেকগুলো বছর পর মন্তুর মত হেড়ে গলায় গাইতে চেষ্টা করবে না- “আশা ছিল মনে মনে…”

    Download

    (সংকলিত)

    ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

    ছোটবেলার পাঠ্য বইয়ের গল্প কবিতা সমগ্র পড়ুন

    Facebook Comments
    Tags:
    x
    error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করুন